হোমঅন্যান্যঅন্তর্তদন্ত : পর্ব ১২ - সিইএসসি : কথা ও কাহিনী

অন্তর্তদন্ত : পর্ব ১২ – সিইএসসি : কথা ও কাহিনী

অন্তর্তদন্ত : পর্ব ১২ – সিইএসসি : কথা ও কাহিনী

শ্যামল সান্যাল : সিইএসসি-র কথা আর কাহিনী একের পর এক প্রকাশিত হতে থাকায় বিভিন্ন মহলে তোলপাড় শুরু হয়েছে। বিভিন্ন মহলের প্রশ্ন, বণিকের ছদ্মবেশে এরা কারা, কি চায়..? বিকাশ ভট্টাচার্যের আঁকা বিখ্যাত ছবি বদলে দেওয়ার সাহস এদের কি করে হয় ?

শিল্পীমহল ছাড়াও বুদ্ধিজীবীদের একটি বড় অংশ এর তীব্র নিন্দা করেছেন। শিল্প ও শিল্পীর স্বাধীনতার মত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।

ইন্টালেকচুয়াল প্রপার্টি আইনে এই কাজ আইনবিরোধী, এই কথা বলেছেন বিশিষ্ট আইনজীবীরা।

বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। বিকাশ ভট্টাচার্যের মত শিল্পীর ছবি বিকৃত করে আর পি জি গ্রুপের পক্ষ থেকে তাঁকে ও অন্য শিল্পীদের অপমান করার পরে বিভিন্ন সংস্থাও একই কাজ করতে পারে বলে শিল্পীদের আশঙ্কা। তাঁরা বিষয়টি নিয়ে কি করা যায়, ভাবছেন।

সাধারণ বিদুৎ গ্রাহকদের প্রশ্ন, এরা বিদ্যুতের ব্যবসা করে দীর্ঘদিন ধরে লক্ষ লক্ষ মানুষকে ঠকিয়ে চলেছে। চড়া হারে বিদ্যুৎ বেচে। কিন্তু পরিষেবা নেই। অভিযোগ, বিলের কারচুপি , ভুল নিয়ে কথা শুনতে রাজি নয় সিইএসসি। বিল জমার বিষয়েও গ্রাহকদের হয়রানির শেষ নেই বলে অনেকেই অভিযোগ করেছেন।

এঁদের প্রশ্ন, আর পি জি এতদিন গ্রাহকদের ঘাড় ভাঙছিল। এখন শিল্প সাহিত্যের ওপরেও ছড়ি ঘোরাতে শুরু করেছে। এর কি প্রতিকার নেই ?
আর পি জি গোষ্ঠীর শিল্পের পৃষ্ঠপোষকতা শুরু হয় রমাপ্রসাদ গোয়েঙ্কা ও তাঁর পুত্র হর্ষের হাত ধরে। তিনি সঞ্জীববাবুর ভাই। মুম্বইয়ে থাকেন। সিয়েট টায়ার সহ অন্য ব্যবসার মালিক।

রমাবাবু দুই ছেলেকে ব্যবসা ভাগ করে দিয়েছিলেন। হর্ষবাবু একজন আসল শিল্প প্রেমী বলে বিভিন্ন শিল্পীর মত। তিনি তাঁর পছন্দের বহু শিল্পীর কাজ নিয়ে মুম্বাইয়ে এক বিশাল আর্ট গ্যালারি গড়েছেন। সেই গ্যালারি দেশ বিদেশের শিল্পী ও বুদ্ধিজীবীদের প্রশংসা পেয়েছে। কিন্তু কিছু শিল্পকর্মের ভাগ উত্তরাধিকার সূত্রে পায় আর পি জি সঞ্জীব গোয়েঙ্কা গোষ্ঠী। মানে সিইএসসির মালিক সঞ্জীব গোয়েঙ্কা। যে সংস্থা বিকাশ ভট্টাচার্যের যে ছবি বিকৃত করেছে, তার মালিক উনিই।

আরও অনেক দুর্লভ শিল্পকর্মের মালিকানাও তাঁর।এই শিল্পের কিছু আছে তাঁদের ডানকান হাউস, ভিক্টোরিয়া হাউস ও নিজেদের বাড়িতে।
ওঁদের বিশাল প্রাসাদের মত বাড়িতে শিল্পসংগ্রহের পাশাপাশি পূর্বপুরুষদের বিশাল বিশাল ছবি আছে, সব বিখ্যাত শিল্পীদের আঁকা।

কিন্তু নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যাচ্ছে, পূর্বপুরুষদের সেই ছবিগুলি নাকি এখন অন্য কোথাও রাখা আছে, অতিথিদের চোখের বাইরে। রমাপ্রসাদবাবুর জন্ম দিন ছিল মার্চের এক তারিখে। সেদিন আর পি জি গোষ্ঠী কীভাবে পালন করেছে, সে বিষয়ে গোষ্ঠীরই বিভিন্ন মহল জানেন না ! তাঁর জন্ম সাল 1930।

অনেকেই বলেন, এখন সঞ্জীববাবুর পুত্র শাশ্বতই বেশিরভাগ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেন,ব্যবসা বা অন্যান্য বিষয়ে। তাঁর বিয়ের সূত্রে বি জে পির ওপরতলার নেতাদের সঙ্গে এই পরিবারের অতি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। শহরের প্রায় সব হোটেল বুক করে ওনার বিয়ের অনুষ্ঠান হয়েছিল। দিল্লি থেকে উড়ে এসেছিলেন বি জে পির হেভিওয়েট নেতা, মন্ত্রীরা।
এ তো গেল কিছু কথা ও কাহিনী।

বিকাশবাবুর ছবি বিকৃত করার বিরুদ্ধে বহু মন্তব্যের কয়েকটি তুলে ধরা যাক এখন।

বাংলাদশের বিখ্যাত শিল্প- সংষ্কৃতি বিষয়ক সাময়িক পত্রিকা “দেশ প্রসঙ্গ”র সম্পাদক এ ইমদাদুল হক সূফী : সমাজের বিত্তশালীদের একটি চিত্র তুলে ধরার জন্য লেখককে ধন্যবাদ। এতে যদি অন্যেরা শিক্ষা গ্রহণ করেন।

বাংলাদশেরই বিখ্যাত শিল্পী কমল উদ্দিন : দুঃখজনক।

ওই দেশেরই আঁখি আলম : ছবিকে রংহীন ( যে কোনও পরিবর্তন) করার মানসিকতাই বিকৃত।

হউটম সেন, কলকাতায় সি ই এস সির গ্রাহক ও শিল্পপ্রেমী : সি ই এস সি যে বিল পাঠাচ্ছে সেখানে মিটার রিডিংয়ের সময়ে আমাদের আবাসন কোয়ারেন্টিনের আওতায় ছিল। বাইরের কারও ভেতরে ঢোকার অনুমতিই ছিল না। তাহলে মিটার রিডিং হলো কি করে ? ওরা গড়ের হিসাবে বিল ঘরে বসে বানিয়ে আমাদের ঠকাতে পারে । ছবি বিকৃত করেছে ,ওদের রুচিবোধের এমন প্রকাশ হওয়াই স্বাভাবিক ।

আমরা বহু মানুষের ক্ষুব্ধ মেল, ফোন, হোয়াটস আপ পাচ্ছি। তাঁদের ক্ষোভ, দুঃখ, রাগ আমরা কিছু প্রকাশ করেছি, আজও করলাম, পরেও তা হবে। পাঠকদের কাছেই একমাত্র আমরা দায়বদ্ধ, আর কারো কাছে নয়।

শেষ হয়েও শেষ হবার নয় সিইএসসির কাহিনী ও কথা। বিকাশ ভট্টাচার্যের আঁকা প্রখ্যাত ভাস্কর রামকিঙ্কর বেজের এই ভুবন ভোলানো সহজ সরল মুখের ছবি সি ই এস সির কাছে নেই। কিন্তু রামকিঙ্করের আঁকা ছবি ওদের আছে।

এক বিখ্যাত শিল্পীর কথায়, ওরা বিকাশবাবুর আঁকা কিঙ্কর ছবিটা হয়ত নিজেদের মত করে এঁকে নিতে পারবে না। কিন্তু কিঙ্করদার নিজের হাতে আঁকা ছবি তো ওদের কাছেই আছে। সেগুলোর রঙ, লাইন মাপ সবই উল্টে পাল্টে ওরা যদি ছাপে তো কে ঠেকাবে ?

রামকিঙ্করও কি বিকাশবাবুর মতই পরলোক থেকে আর পি জি গোষ্ঠীকে অনুপ্রাণিত করবেন ?
এই জটিল প্রশ্নের উত্তর শিল্পী, বুদ্ধিজীবী ও পাঠকরাই দিতে পারেন। আমরা শুধুই নিরপেক্ষভাবে বিষয়টা তুলে ধরার চেষ্টা করতে পারি।
সঙ্গে থাকুন,পরের পর্বে দেখা হবে। ভালো থাকবেন।


( ক্রমশ )

spot_img
spot_img

সবাই যা পড়ছেন

spot_img