ডাঃ রথীন চক্রবর্তী (বিশিষ্ট হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক ও রাজ্যপালের চিকিৎসা উপদেষ্টা। প্রয়াত প্রবাদপ্রতিম হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক ডাঃ ভোলানাথ চক্রবর্তীর পুত্র।)
করোনার সুবাদে ইতিমধ্যে বেশ পরিচিতি পেয়েছে হোমিওপ্যাথি ওষুধ ‘আর্সেনিকাম অ্যালবাম’। এটি অত্যন্ত কার্যকর প্রতিষেধক।
করোনা যখন ছড়াতে শুরু করে, তখন সবচেয়ে রিস্ক জোন ছিল হাওড়া। ২৮ এবং ১৯, এই দুটি ওয়ার্ডকে বেছে নিয়ে সেখানকার সব বাসিন্দাকে ‘আর্সেনিকাম অ্যালবাম’ প্রয়োগ করে কার্পেট ট্রিটমেন্ট শুরু করি। টানা ৬ দিন দিনে একবার এবং তারপর টানা ৪ সপ্তাহ দিনে একবার করে এই ওষুধটি খেতে দেওয়া হয়। দেখা গেল, প্রথমদিকে যেখানে অনেক কোভিড পজিটিভ কেস আসছিল, সেখানে গত ৪০ দিনেরও বেশি সময় ধরে নতুন কোনও সংক্রমণ ধরা পড়েনি।
সারা দেশ যেখানে করোনা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে হাওড়ার হট-স্পট হিসেবে চিহ্নিত ২টি ওয়ার্ডে এত তাড়াতাড়ি রোগকে কী করে নিয়ন্ত্রণে আনা গেল? আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি ‘আর্সেনিকাম অ্যালবাম’ প্রয়োগে কাজ হয়েছে।
আসলে ‘আর্সেনিকাম অ্যালবাম’ ওষুধটি শরীরের ইমিউনিটিকে এমনভাবে ট্রিগার করে দেয় যে, ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করলেও তাকে প্রতিহত করে দেয়। ফলে শরীরে কোনওরকম জটিলতা দেখা দেয় না।
হাওড়ার এই মডেলকে সারা দেশে দ্রুত কাজে লাগানো হোক। তাহলে রোগ প্রতিরোধ নিয়ে আতঙ্ক কমানো যাবে।
জ্বর,সর্দি, গলাব্যথা নিয়ে গত ১৫ দিনের আমার কাছে ৪০-৫০ জন রোগী এসেছেন। এঁরা কেউই কোভিড টেস্ট করাননি। লক্ষণ দেখে রাসটক্স, ব্রায়োনিয়া, কখনও ইউপেটোরিয়াম পারফোলিয়েটাম ইত্যাদি ওষুধ দিয়ে ভালো ফল পেয়েছি। ৩-৪ দিনেই রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
আমার মনে সন্দেহ আছে, এই অতিমারী রোগটিকে ঠেকানোর জন্য শুরু থেকে আদৌ কোনও সঠিক স্ট্র্যাটেজি নেওয়া হয়েছিল কি না?
এই অসুখের এখনও কোনও ওষুধ নেই। সে ওষুধ চটজলদি মিলতেও পারে না। গবেষণার পরে সেই ওষুধ পৃথিবীর কোটি কোটি রোগীর কাছে পৌঁছতেও সময় লাগবে।
কিন্তু করোনার মত অসুখের মোকাবিলায় আমাদের দেশে এবং রাজ্যগুলিতে যে সব ব্যবস্থা নেওয়া হলো, যে পরিকল্পনা করা হলো, তা সঠিক নয় বলে আমি মনে করি।
আমার অ্যালোপ্যাথি ডাক্তারির ডিগ্রি রয়েছে। পাশাপাশি হোমিওপ্যাথিরও চিকিৎসক। দুটো ক্ষেত্রই আমার জানা।
আমি মনে করি, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক ও রাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগ গুলির ভাবা উচিত ছিল, হোমিওপ্যাথি ও আয়ুর্বেদ চিকিৎসা সম্পর্কে। এই দুটি চিকিৎসা শাস্ত্রে করোনার প্রতিষেধক সহজ,পরীক্ষিত চিকিৎসা তো আছেই। এর জন্য সাধারণ মানুষের খরচও খুব কম। অথচ খুবই কার্যকর।
আমরা রোগের প্রতিষেধক হিসেবে মানুষের শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর কথা বলি। কেন্দ্র বা আমাদের রাজ্যের মত অন্য রাজ্যেও হোমিও চিকিৎসার বিশাল সম্ভাবনা ছিল, এখনও আছে।
কয়েক হাজার বছরের ইতিহাস আয়ুর্বেদ চিকিৎসার। আমাদের দেশ থেকেই এই সব চিকিৎসা দুনিয়ায় ছড়িয়েছে। বিদেশে এই চিকিৎসা এখন আরও কাজে লাগছে, আরো গবেষণা হচ্ছে।
এই সল্টলেকেই রয়েছে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হোমিওপ্যাথি আর সেন্ট্রাল আয়ুর্বেদ ইনস্টিটিউট।
দুঃখের কথা ,এই দুটির বিশাল কেন্দ্রীয় সংস্থাকে কাজে ব্যবহারের কথা ভাবলো না, কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার কেউই।
কেন্দ্রীয় আয়ুষ মন্ত্রক মানুষকে চিকিৎসার বিষয়ে কত পরামর্শ দিলেও হোমিও বা আযুর্বেদ চিকিৎসার কথা কেন বলছে না? মোবাইল বা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের সাহায্যে মানুষকে এই চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে জানানোর ব্যবস্থা করা জরুরি।
অনেকে বলেন, দেশি ও বিদেশি বহুজাতিক ওষুধ তৈরির কোম্পানিগুলোর চাপে নাকি এই অবস্থা হয়েছে। তো একজন চিকিৎসক হিসেবে বলতে চাই, ওয়েলকাম। তোমরা কাজের ওষুধ সঠিক দরে মানুষকে দিচ্ছ না কেন?
মধু, তুলসী পাতার মত দারুণ প্রতিষেধক রয়েছে। করোনা আটকাতে কাঁচা হলুদ, বাসক পাতা আছে । বিজ্ঞানে পরীক্ষিত এদের গুণাগুণ। কেন সরকার সে বিষয়ে দেশের মানুষকে জানাবেন না ? এর ফলে আমদের দেশের সাধারণ মানুষ দিশাহীন। সরকারের এখনও নতুন করে ভাবার সময় আছে, বেটার লেট দ্যান নেভার।