সুদর্শনার হাতিয়ার জনসংযোগ আর করোনাকালে মানুষের পাশে থাকা

তনিমা চট্টোপাধ্যায়। তাঁর পরিচয় তিনি রাজ্যের প্রয়াত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের বোন। তনিমা গতবার ৮৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জিতেছিলেন। এবার সেখানে অন্য একজনকে প্রার্থী করা হয়েছে। এবারের পুর নির্বাচনে দলের নির্দেশ অমান্য করে ৬৮ নম্বর ওয়ার্ডে নির্দল প্রার্থী হওয়ায় তনিমাদেবীকে ইতিমধ্যে বহিষ্কার করেছে তৃণমূল কংগ্রেস।

পর্যবেক্ষকদের মতে, তনিমাদেবীকে ৬৮ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী না করে তৃণমূল নেতৃত্ব রাজনৈতিক দূরদর্শিতারই পরিচয় দিয়েছেন। কারণ, এই ওয়ার্ডে যাঁকে টিকিট দেওয়া হয়েছে, সেই সুদর্শনা মুখোপাধ্যায় গতবারের জয়ী প্রার্থী। বলতে গেলে, পুরসভার কাউন্সিলরের পদ দিয়েই রাজনীতির আঙিনায় সুদর্শনার পা রাখা। তার আগে দীর্ঘ দু-দশক তিনি সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

সুদর্শনা পোড় খাওয়া রাজনীতিক নন। তবে জনসংযোগ এবং কাজের নিরিখে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে কয়েক কদম এগিয়ে রয়েছেন। বিশেষত, করোনার কঠিন সময়ে তিনি যেভাবে এলাকার মানুষের পাশে থেকেছেন, তা এখনও এখানকার ভোটারদের মুখে মুখে ঘুরছে। কাজের মানুষ, কাছের মানুষ, রাজনীতির জগতে এই শব্দগুচ্ছ বহুল ব্যবহৃত। তবে আক্ষরিক অর্থেই সুদর্শনা ৬৮ নম্বর ওয়ার্ডের মানুষের কাছের লোক হয়ে উঠেছেন।

দক্ষিণ কলকাতার অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত বালিগঞ্জ। বহু বনেদি বাড়ির পাশাপাশি এখানে বহুতলের ছড়াছড়ি। রয়েছে বস্তি এলাকাও। নানা ভাষাভাষী, ধর্ম, বর্ণের, জাতির মানুষের এক মিলনস্থল।

দল তাঁকে প্রার্থী ঘোষণার পর থেকেই জোরকদমে প্রচারে নেমে পড়েছেন সুদর্শনা। এলাকার অলিগলি, বহুতল থেকে বস্তি, সর্বত্র ছুটছেন। প্রচারের ফাঁকে সুদর্শনা বললেন, “আমার জন্ম বালিগঞ্জ প্লেসে। গোটা এলাকাকে হাতের তালুর মতো চিনি। কোথায় কী সমস্যা, তা জানি। তাই জনপ্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতে অসুবিধা হয়নি।”

সুদর্শনার কথায়, “এলাকার রাস্তা থেকে পানীয় জল, আলো থেকে বস্তির উন্নয়নের জন্য সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। ৬৮ নম্বর ওয়ার্ডের অন্যতম যন্ত্রণা যেমন ছিল জল জমা, তেমনই ছিল যানজটের ফাঁস। সাড়ে ৬ বছরে আপনাদের এই দুটি সমস্যা থেকে মুক্তির চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছি।”

কথায় কথায় তাঁর কাজের দীর্ঘ ফিরিস্তিও দিলেন সুদর্শনা। যেমন, পানীয় জল, রাস্তাঘাটের সংস্কারের পাশাপাশি নিকাশি ব্যবস্থার উন্নতি। প্রোমোটারের থাবা থেকে বাঁচিয়ে জরাজীর্ণ চ্যাপলিন পার্কটিকে আজ সাধারণের ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা। গোটা ওয়ার্ডের বিভিন্ন রাস্তা আর অলিগলি আলোকিতকরণ। এলাকার একাধিক নামী স্কুলের সামনে পড়ুয়াদের অভিভাবক থেকে সাধারণ মানুষের জন্য তিষ্ঠ ক্ষণকাল নামে বিশ্রাম আসন তৈরি করা। বেআইনি পার্কিং বন্ধ করে ওয়ার্ডকে যানজটমুক্ত করা। অসহায়, প্রবীণ নাগরিকদের জন্য নানা প্রকল্প।

সেইসঙ্গে জানালেন তাঁর আগামী পরিকল্পনার কথাও। বললেন, “ওয়ার্ডের গর্ব সিটিজেন্স পার্কের দ্বিতীয় পর্বের সম্প্রসারণের কাজ শেষ করতে চাই। ওয়ার্ডে একটি কমিউনিটি হল গড়ে তোলাও আমার লক্ষ্য।”