হোমশাশ্বত_বাণী'আমরা যদি জন্ম নিতেম রামকৃষ্ণের কালে'...!!!

‘আমরা যদি জন্ম নিতেম রামকৃষ্ণের কালে’…!!!

‘আমরা যদি জন্ম নিতেম রামকৃষ্ণের কালে’…!!!

একবার আমেরিকার ভক্তদের জিজ্ঞাসা করেছিলামঃ ”মনে করুন আপনি রাতে একা অন্ধকার ঘরে শুয়ে আছেন । এমন সময় যীশুখ্রীস্ট সশরীরে আপনার বিছানার পাশে দাঁড়ালেন আপনি কি করবেন ? খুব করে ভেবে দেখুন ।

ভক্তদের চুপ করে থাকতে দেখে বললামঃ ”আমি জানি আপনারা কি করবেন ।আপনারা টেলিফোনে ৯১১ ডায়াল করবেন । ( আমেরিকার এমারজেন্সি নাম্বার । অপারেটর জিজ্ঞাসা করবে — কাকে চাই ? পুলিশ , এ্যাম্বুলেন্স , অথবা ফায়ার – ব্রিগেড ? )

আমরা ভীতু । খ্রীস্ট কে দেখার জন্য এখনও প্রস্তুত হইনি ।

”অনেকে বলবে , ” প্রভু , তুমি দেওয়ালের ওই ছবিতে ঝুলে থাক । তোমাকে কাছে দেখলে বড় ভয় করে ” ।

শ্রীরামকৃষ্ণের কাছে থাকা এতো সহজ ছিল না । আমরা শ্রীশ্রী মায়ের জীবনী তে পড়েছি- মায়ের উঠতে দেরী হলে ঠাকুর নহবতের দরজার চৌকাঠে জল ঢেলে দিতেন । মা ও লক্ষ্মী দিদি মেঝেতে শুতেন । অনেক দিন বিছানা ভিজে যেত ।

রানী রাসমণি কে মা – কালীর মন্দিরে মকদ্দমা র কথা চিন্তা করতে দেখে ঠাকুর দুই চাপড় মারলেন । বরানগরের ঘাটে বসে জয় মুখুজ্যে অন্য মনস্ক হয়ে জপ করছিল । ঠাকুর তাকে ও দুই চাপড় মারলেন ।

এঁরা সব ভাগ্যবান । ঠাকুর চিরদিনের তরে ওদের মন ভগবৎ মুখি করে দিলেন । যখনই তাঁরা অন্যমনস্ক হবেন ঠাকুরের কথা মনে করবেন ।অনেকসময় ভক্ত দের মনে হয় — হায় ! সকাল – সন্ধ্যায় যদি ঠাকুরের দুটি চড় খেতাম , কি সুন্দর ধ্যান জপ টাই না হতো !

ঠাকুরের নামে তালুক লেখাপড়া করে দেবার জন্য মথুর কে ও ঠাকুর এর চড় খেতে হতো , শোনা যায় ঠাকুরের চড়ের হাত থেকে বাঁচতে মথুর দৌড়ে ঘরের দরজা বন্ধ করে সে যাত্রায় রক্ষা পান ।

সন্ধ্যা বেলায় একদিন ঘুমিয়ে পড়ার জন্য লাটু মহারাজ কে তো ঠাকুর প্রায় বিদায় করেই দিচ্ছিলেন । বাবুরাম মহারাজ দু খানা রুটি বেশি খাওয়ায় ঠাকুর শ্রী মায়ের কাছে গিয়ে বরাদ্দের বেশি রুটি দিতে মানা করেছিলেন ।

ক্ষীরোদ প্রসাদ বিদ্যাবিনোদ একবার দক্ষিণেশ্বরে ঠাকুর কে দেখতে মনস্থ করেন । তারপর আলমবাজার পর্যন্ত গিয়ে ফিরে আসেন । তিনি শুনেছিলেন যে , ঠাকুর সব লোকের মনের কথা জানেন । সুতারং সকলের সামনে ঠাকুর যদি তার মনের কথা বলেন তাকে তাহলে বিব্রত হতে হবে । এই ভয়ে তিনি আর ঠাকুর কে দেখতে গেলেন না ।

শ্রী রামকৃষ্ণ ছিলেন ত্যাগ ও পবিত্রতার মূর্ত বিগ্রহ । লোক শিক্ষার জন্য পৃথিবীতে এসেছিলেন ।

” যাকে যেমন তাকে তেমন ” — এই ভাবে শিক্ষা দিতেন । উত্তররাম চরিতে ভবভূতি লোকোত্তর পুরুষের বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, যে , তাঁরা কখনও বজ্রের ন্যায় কঠোর কখনো কুসুমের ন্যায় কোমল ।

হায় বাসনা ! ঠাকুরের কাছে থাকবার বাসনা উঠলে অনেক সময় শ্রীশ্রী মায়ের কথা মনে পড়েঃ –

” কখনও কখনও দু মাসেও হয়তো একদিন ঠাকুরের দেখা পেতুম না । মন কে বোঝাতুম ,”মন ,তুই এমন কি ভাগ্য করেছিস যে রোজ রোজ ওঁর দর্শন পাবি ? দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ( দরমার বেড়ার ফাঁক দিয়ে ) কীর্তনের আখর শুনতুম — পায়ে বাত ধরে গেল । ”

মায়ের এ কথা পড়লে চোখ দিয়ে জল গড়ায় । নিজের স্বামী কে জগতের স্বামী করার জন্য মায়ের এ স্বার্থত্যাগ পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল ।।

”স্বামী চেতনানন্দ ”

spot_img
spot_img

সবাই যা পড়ছেন

spot_img