একবার আমেরিকার ভক্তদের জিজ্ঞাসা করেছিলামঃ ”মনে করুন আপনি রাতে একা অন্ধকার ঘরে শুয়ে আছেন । এমন সময় যীশুখ্রীস্ট সশরীরে আপনার বিছানার পাশে দাঁড়ালেন আপনি কি করবেন ? খুব করে ভেবে দেখুন ।
ভক্তদের চুপ করে থাকতে দেখে বললামঃ ”আমি জানি আপনারা কি করবেন ।আপনারা টেলিফোনে ৯১১ ডায়াল করবেন । ( আমেরিকার এমারজেন্সি নাম্বার । অপারেটর জিজ্ঞাসা করবে — কাকে চাই ? পুলিশ , এ্যাম্বুলেন্স , অথবা ফায়ার – ব্রিগেড ? )
আমরা ভীতু । খ্রীস্ট কে দেখার জন্য এখনও প্রস্তুত হইনি ।
”অনেকে বলবে , ” প্রভু , তুমি দেওয়ালের ওই ছবিতে ঝুলে থাক । তোমাকে কাছে দেখলে বড় ভয় করে ” ।
শ্রীরামকৃষ্ণের কাছে থাকা এতো সহজ ছিল না । আমরা শ্রীশ্রী মায়ের জীবনী তে পড়েছি- মায়ের উঠতে দেরী হলে ঠাকুর নহবতের দরজার চৌকাঠে জল ঢেলে দিতেন । মা ও লক্ষ্মী দিদি মেঝেতে শুতেন । অনেক দিন বিছানা ভিজে যেত ।
রানী রাসমণি কে মা – কালীর মন্দিরে মকদ্দমা র কথা চিন্তা করতে দেখে ঠাকুর দুই চাপড় মারলেন । বরানগরের ঘাটে বসে জয় মুখুজ্যে অন্য মনস্ক হয়ে জপ করছিল । ঠাকুর তাকে ও দুই চাপড় মারলেন ।
এঁরা সব ভাগ্যবান । ঠাকুর চিরদিনের তরে ওদের মন ভগবৎ মুখি করে দিলেন । যখনই তাঁরা অন্যমনস্ক হবেন ঠাকুরের কথা মনে করবেন ।অনেকসময় ভক্ত দের মনে হয় — হায় ! সকাল – সন্ধ্যায় যদি ঠাকুরের দুটি চড় খেতাম , কি সুন্দর ধ্যান জপ টাই না হতো !
ঠাকুরের নামে তালুক লেখাপড়া করে দেবার জন্য মথুর কে ও ঠাকুর এর চড় খেতে হতো , শোনা যায় ঠাকুরের চড়ের হাত থেকে বাঁচতে মথুর দৌড়ে ঘরের দরজা বন্ধ করে সে যাত্রায় রক্ষা পান ।
সন্ধ্যা বেলায় একদিন ঘুমিয়ে পড়ার জন্য লাটু মহারাজ কে তো ঠাকুর প্রায় বিদায় করেই দিচ্ছিলেন । বাবুরাম মহারাজ দু খানা রুটি বেশি খাওয়ায় ঠাকুর শ্রী মায়ের কাছে গিয়ে বরাদ্দের বেশি রুটি দিতে মানা করেছিলেন ।
ক্ষীরোদ প্রসাদ বিদ্যাবিনোদ একবার দক্ষিণেশ্বরে ঠাকুর কে দেখতে মনস্থ করেন । তারপর আলমবাজার পর্যন্ত গিয়ে ফিরে আসেন । তিনি শুনেছিলেন যে , ঠাকুর সব লোকের মনের কথা জানেন । সুতারং সকলের সামনে ঠাকুর যদি তার মনের কথা বলেন তাকে তাহলে বিব্রত হতে হবে । এই ভয়ে তিনি আর ঠাকুর কে দেখতে গেলেন না ।
শ্রী রামকৃষ্ণ ছিলেন ত্যাগ ও পবিত্রতার মূর্ত বিগ্রহ । লোক শিক্ষার জন্য পৃথিবীতে এসেছিলেন ।
” যাকে যেমন তাকে তেমন ” — এই ভাবে শিক্ষা দিতেন । উত্তররাম চরিতে ভবভূতি লোকোত্তর পুরুষের বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, যে , তাঁরা কখনও বজ্রের ন্যায় কঠোর কখনো কুসুমের ন্যায় কোমল ।
হায় বাসনা ! ঠাকুরের কাছে থাকবার বাসনা উঠলে অনেক সময় শ্রীশ্রী মায়ের কথা মনে পড়েঃ –
” কখনও কখনও দু মাসেও হয়তো একদিন ঠাকুরের দেখা পেতুম না । মন কে বোঝাতুম ,”মন ,তুই এমন কি ভাগ্য করেছিস যে রোজ রোজ ওঁর দর্শন পাবি ? দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ( দরমার বেড়ার ফাঁক দিয়ে ) কীর্তনের আখর শুনতুম — পায়ে বাত ধরে গেল । ”
মায়ের এ কথা পড়লে চোখ দিয়ে জল গড়ায় । নিজের স্বামী কে জগতের স্বামী করার জন্য মায়ের এ স্বার্থত্যাগ পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল ।।
”স্বামী চেতনানন্দ ”