স্বামীজীর একটি বাণী আছে, ‘জগতে যদি কেহ কিছু পাইবার ঠিকঠিক উপযুক্ত হয়, জগতের কোনো শক্তি তাহাকে তাহার প্রাপ্য হইতে বঞ্চিত করিতে পারিবে না।’
এই বাণীটি মার্গারেটের জীবনে অক্ষরে অক্ষরে মিলে গিয়েছিল।
তাই তিনি একদিন খবর পেলেন, লেডি ইসাবেল মার্গসনের বাড়িতে মুষ্টিমেয় কয়েকজন সত্যসন্ধানীর কাছে এক হিন্দু সন্ন্যাসী কিছু বলবেন।
মার্গারেট নির্দিষ্ট দিনে ও সময়ে সেখানে গেলেন।
ঘরে অন্তত পনেরো জন শ্রোতা উপস্থিত আছেন।
গেরুয়া বসন পরে স্বামী বিবেকানন্দ মার্গারেটের সামনাসামনি।
মন্ত্রমুগ্ধের মত মার্গারেট স্বামীজীর কথা শুনতে থাকেন।
স্বামীজি বলছেন, ‘মানুষ কি চায় ? সুখও নয়, দুঃখ নয়, মুক্তি… শুধু মুক্তি চাই… আমাদের সমস্ত তপস্যা শুধু অবন্ধন মুক্তির তপস্যা…।’
স্বামীজীর ছোট ছোট ঘরোয়া আলোচনা একটিও বাদ দিতেন না মার্গারেট।
এই সব ঘরোয়া সভায় এসে তিনি মনে শান্তি পেতেন।
একদিন স্বামীজী মার্গারেটকে দৃঢ়কণ্ঠে বললেন : “আজ জগতে কিসের অভাব জানো ? জগৎ চায় এমন বিশজন নর-নারী যারা সদর্পে ঐ রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে বলতে পারে ‘আমাদের ঈশ্বর ভিন্ন আপনার বলতে আর কিছুই নাই।’ কে যেতে প্রস্তুত ?… কিসের ভয় ?… ইহা যদি সত্য হয়, তবে অন্য কিছুতে আর কি প্রয়োজন ? আর যদি ইহা সত্য না হয়, তাহলে আমাদের জীবনেই বা ফল কি ?”
মার্গারেটের অন্তরে প্রতিধ্বনি জাগল – ঐ বিশজনের মধ্যে তিনি কি একজন হতে পারেন না ?
মার্গারেট লিখলেন, ‘সর্বভূতে ব্রহ্মদর্শনরূপ হিন্দুগণের যে বিশ্বাস, স্বামীজি আমাদের নিকট তারই প্রচারকরূপে এসেছিলেন এবং তৎপ্রচারিত ধর্ম সত্য কিনা তা আমাদের সকলকে নিজে নিজে, পরীক্ষা করে নেওয়ার জন্য আহ্বান করেছিলেন।’
স্বামীজি বললেন, ‘প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে আদর্শ বিনিময়ের সময় এসেছে।
আমার পাশ্চাত্যে আগমনের উদ্দেশ্যই হলো এই সমন্বয়ের বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া।’
স্বামীজির বক্তৃতাগুলির উপর চিন্তা করতে করতে মার্গারেটের মনে হল, মানুষের মধ্যে যা কিছু শ্রেষ্ঠ ও সর্বাপেক্ষা সুন্দর, ধর্মের নামে স্বামীজী তাকেই আহ্বান করছেন।
মার্গারেট এই আহ্বানে সাড়া দেবার জন্য অপেক্ষা করছিলেন।
তবুও এই আহ্বানে সাড়া দেওয়ার আগে তাঁর ছিল নানা সংশয়।
তাই স্বামীজীর নানা বক্তব্যকে তিনি তাঁর যুক্তি জাল দিয়ে খণ্ডন করার চেষ্টা করতেন, আর প্রতিবার স্বামীজী সস্নেহে, সহানুভূতি ও প্রশান্তির সঙ্গে তাঁর প্রতিটি প্রশ্নের হৃদয়স্পর্শী উত্তর দিয়ে যেতেন অক্লান্তভাবে।
স্বামীজি বুঝেছিলেন সত্যকে উপলব্ধি এবং এমন মহান আদর্শে নিজেকে উৎসর্গ করার আকাঙ্ক্ষা রয়েছে তাঁর হৃদয়ে।
যেমন তরুণ নরেন্দ্রনাথের উদগ্র বাসনা ছিল সত্যকে জানার জন্য এবং একইভাবে তিনি প্রশ্নবাণে জর্জরিত করতেন ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ কে।
( ক্রমশ )
পৃষ্ঠা – ১৮২
রামকৃষ্ণ মিশন সেন্টিনারি প্রাইমারি স্কুল, বরানগর এর ভগিনী নিবেদিতার শুভ অাবির্ভাবের ১৫০তম বর্ষ পূর্তির সমাপনী উপলক্ষে প্রকাশিত স্মারক পত্রিকা রশ্মি ২০১৭ হতে গৃহীত