দেবযানী রায় মুখার্জি
(বেঙ্গালুরু থেকে রাজ্যে আসা এক তরুণী পুলিশি হেনস্থার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ। বিষয়টি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হয়েছেন তাঁরই প্রতিবেশী দেবযানী রায় মুখার্জি। কোনওরকম সম্পাদনা ছাড়াই হুবহু তা তুলে দেওয়া হল)
আজ এক অদ্ভুত ঘটনার মুখোমুখি হলাম।
আমাদের ফ্ল্যাটে, আমার ওপরের ফ্লোরের এক দিদির মেয়ে শনিবার ব্যাঙ্গালোর থেকে ফিরেছে। ও ওখানে থাকে চাকরিসূত্রে। ফ্লাইটে ফেরে। একদম স্বাভাবিক, আজ সকাল অবধি মানে এখন সকাল ১১ঃ৩০, আমি যখন এটা লিখছি, এইসময় অবধিও ও একেবারে সুস্থ। কোনো সর্দিকাশি, গলা ব্যাথা, জ্বর কিছু নেই। এখানে এটাও বলে রাখি, ও বাড়ি ফেরার পর থেকে এখনো অবধি এক মূহুর্তের জন্যও বাড়ির বাইরে পা রাখেনি।
রবিবার আমার হাসবেন্ডকে পাড়ার এক গণ্যমান্য ব্যাক্তি ফোন করে প্রথমে জিজ্ঞাসা করে, ও কোথা থেকে এসেছে? ওর মাকে বলা হোক তাকে ফোন করে সব ডিটেইলস জানানোর জন্য(যেহুতু ওই দিদির ফোন নম্বর ওনার কাছে ছিলো না, তাই আমার হাসবেন্ডকে ফোন করে)। আমরা ওই দিদিকে বলতে বল্লে দিদি ফোন করে। সব ডিটেইলস দেওয়ার পর উনি বলেন যে ওকে নিয়ে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে যেতে হবে, চেক আপের জন্য।
দিদি বার বার বলে যে, আমার মেয়ের কোনো সিম্পটম নেই আর ও বাড়ি থেকেও বেরোয় না। তাতেও জোর দেওয়া হয়। তখন দিদি বলে, তাহলে আপনারা বাড়িতে লোক পাঠান। তাতে উনি বলেন যে, সেই ব্যবস্থা আমাদের নেই। তোমরা আইডিতে চলে যাও, সব ব্যবস্থা আমি করে দেবো।
স্যানিটাইজ করা এম্বুলেন্স তোমাদের নিয়ে যাওয়া-আসা করবে, কোনো চিন্তা নেই। আর এরপরেও যদি রাজি না হও তাহলে লোকাল কাউন্সিলের কানে গেলে পুলিশ আসবে, তখন কিন্তু আমরা কিছু করবো না। এরপর সোমবার রাতে দমদম থানা থেকে লোক আসে বাড়িতে। মেয়েটির সব ডিটেইলস নিয়ে যায় এবং বলে যে, বড়বাবু ফোন করবে। রাতে বড়বাবু ফোন করেন ও মেয়েটিকে বলেন যে, তুমি তো শিক্ষিত মেয়ে, তোমার কোনো জ্ঞান নেই? যদি পাড়া-প্রতিবেশীদের কিছু হয়ে যায়! মেয়েটি তার যে কোনো শারীরিক অসুবিধা নেই এবং সে বাড়ি থেকে বেরোচ্ছে না সেটা জানায় কিন্তু তাও তাকে চেকাপে যেতে বলা হয়। এরপর দিদি ফোন করে পাড়ার ওই ব্যক্তিকে জানায় যে তারা আইডিতে যাবে।
সেইমতো আজ সকাল ৬-৬ঃ৩০টা নাগাদ বাড়ির দরজায় এম্বুলেন্স আসে এবং তার সাথে ওই ব্যক্তির ফোন যে, তোমরা এপোলো চলে যাও। ওনার কথা মতো এম্বুলেন্স প্রথমে এপোলো নিয়ে যায়। সেখান থেকে বলে হয় আমরি যেতে। আমরিতে গেলে তারা বলে বেলেঘাটা আইডিতে যেতে। বেলেঘাটা আইডিতে গেলে কোনো টেস্ট করা হয়না, উল্টে বলে হয়, শুধু শুধু কেনো এসেছেন? আর নীচে দেওয়া এই কাগজটা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।
মা-মেয়ে হসপিটালের বাইরে বেরিয়ে দেখে এম্বুলেন্স চলে গেছে। তখন দিদি সেই ব্যাক্তিকে ফোন করে। সে বলে দেখছি। কিছুক্ষণ পরে ফোন করে বলে, চারটে এম্বুলেন্সই বাইরে বেরিয়ে গেছে, আমার কিছু করার নেই। তোমরা কিছু একটা ব্যবস্থা করে নাও আর কাউকে জানানোর দরকার নেই যে টেস্ট করেনি। কেউ জানতে চাইলে বলবে, নেগেটিভ এসেছে।
এরপর এপে ক্যাব বুক করতে গেলে ওলা ও উবের দুটোই পর পর ট্রিপ ক্যান্সেল করে দেয়। ফাঁকা রাস্তায় কিছু না পেয়ে মা-মেয়ে বেলেঘাটা থানায় যায়। সেখানে গেটে আটকানো হলে সামনে যে অফিসার ছিলো গাড়িতে তাকে সব ঘটনা জানিয়ে হাতজোড় করে অনুরোধ করে একটু বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। অফিসার বলেন- বেরিয়েছেন কেনো বাড়ি থেকে? যেভাবে এসেছেন সেইভাবে চলে যান। এটা বলে উনি গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যান।
তারপর ওরা সি.আই.টি মোড় অবধি এসেও কিছু না পেয়ে আমাকে ফোন করে সব জানায়। তারপর আমরা ওদের আনতে গিয়ে দেখি মা-মেয়ের প্রায় রাস্তায় বসে পড়ার মতো অবস্থা। এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি, মেয়েটি জন্ম থেকে একজন এজমা পেসেন্ট। বাড়ি ফেরার পর আমার শ্বশুরমশাইয়ের থেকে একটা ফরোয়ার্ডেড হোয়াটসঅ্যাপ পাই যেটা ওই ব্যক্তি আমার শ্বশুরকে পাঠিয়েছে(উনি আমার শ্বশুরের পরিচিত) যেখানে উনি পুরো ঘটনাটিকে ঘুরিয়ে নিজের গায়ের থেকে এই অবহেলার দায় ঝেড়ে ফেলতে চাইছে।
এখন আমার প্রশ্ন হলো-১) সুস্থ মেয়েটিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো যেখানে আমি যতদূর জানি ICMR-এর গাইডলাইন রয়েছে সিম্পটম ছাড়া হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন নেই, এবার এই অতি তৎপরতার জন্য যদি মেয়েটি অসুস্থ হয় তার দায় কে নেবে?
২)আমার হাসবেন্ড টাইপ টু ডায়বেটিস জোনে আছে। তার যদি কিছু হয়, তার দায় কে নেবে?
৩) ভয় দেখিয়ে/চাপ দিয়ে রাস্তায় বার করে তারপর বিপদে ফেলে কেটে পরে এখন ড্যামেজ কন্ট্রোলের যে বাজে চেষ্টাটা করা হচ্ছে তার বিরুদ্ধে কি কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যায়?
(ফেসবুক থেকে নেওয়া)