হোমসাহিত্য-সংস্কৃতিশ্রী জগন্নাথ লীলা মহিমা : পর্ব - ১০- জগন্নাথ মহাপ্রসাদ ইতিকথা

শ্রী জগন্নাথ লীলা মহিমা : পর্ব – ১০- জগন্নাথ মহাপ্রসাদ ইতিকথা

শ্রী জগন্নাথ লীলা মহিমা : পর্ব – ১০- জগন্নাথ মহাপ্রসাদ ইতিকথা

সঞ্জয় বসাক,জগন্নাথ ভক্ত

ভগবান জগন্নাথের মহাপ্রসাদ কেন আনন্দবাজারে বিক্রি হয়। অন্য কোনও মন্দিরে তো হয় না। নারদজী একবার বৈকুন্ঠে এমন সময় গেলেন, যখন কৃষ্ণ ভোগ গ্রহণ করছিলেন। নারদজী কৃষ্ণের প্রসাদ পেয়ে পুলকিত হয়ে গেলেন। এইরকম প্রসাদ তিনি কোন দিন পাননি প্রসাদ পেয়ে নারদজী আনন্দে হরিধ্বনি করতে লাগলেন। এখন তিনি ভাবছেন এই আনন্দ কাকে দেওয়া যায় ভাগ করে।

এইভাবে তিনি এলেন কৈলাসে, এ সময় মহাদেবের সামনে আনন্দে নৃত্য করতে লাগলেন। শিব বললেন, “নারদ তোমার এ অবস্থা তো আগে কখনো দেখেনি। জানি হরিগুণ গাও এবং তা গেয়ে আনন্দ পাও। কিন্তু আজ এ কি অবস্থা।”

নারদ বললেন, “প্রভু, আমি এই মাত্র হয়ে এলাম বৈকুন্ঠ থেকে। আমি সেখানে গিয়ে দেখি ঠাকুর শয়ন করছেন আর মা লক্ষ্মী প্রসাদ পাচ্ছেন। তিনি হাত না ধুয়েই আমার সঙ্গে দেখা করতে এলেন। আমি মায়ের হাত থেকে একটু প্রসাদ চেয়ে নিলাম। প্রসাদের যে কি মাহাত্ম্য! প্রসাদ হাতে নিয়ে আমার আনন্দ আর ধরে না।”

শিব “আমায় দাও” বলে নারদের হাত খানি চেটে পুটে খেলেন। আর নেই। সব শেষ। খেয়ে শিবেরও আনন্দ। শিব পরম বৈষ্ণব। মূলত ভগবানই বিভিন্ন রূপে নিজ লীলা নিজে আস্বাদন করেন। শিব ও নারদ প্রসাদের মাহাত্ম্যে নৃত্য করছেন। এমন সময় মা পার্বতী এলেন। এসে বললেন; “এ কি আজ তোমাদের কী হল!”

শিবকে দেখিয়ে বললেন, “উনি তো নিজের ভাবেই থাকেন, তুমি এসে জুটলে কোথা থেকে?”

নারদ বললেন, “মা আজ স্বয়ং ঠাকুরের প্রসাদ মা লক্ষ্মীর হাত থেকে পেয়েছি। তাই খেয়ে আনন্দে নৃত্য করতে করতে এখানে এলাম। হাতে বাকি যা লেগে ছিল মহাদেব সব চেটে খেলেন। আর তার পরেই এই অবস্থা। “

পার্বতী বললেন, “আর আমার অংশ? সেই বৈকুন্ঠ থেকে লক্ষ্মীর দেয়া ঠাকুরের প্রসাদ আনলে শিবকে দিলে, আমায় দিলে না! একটুও নেই?”

নারদ বললেন, ” না মা, একটুও নেই।

পার্বতী রেগে গিয়ে বললেন, ” এই মহাপ্রসাদ আমি আচন্ডালে খাওয়াব। পশু পক্ষীও খাবে। কোনও ভেদ বিচার থাকবে না। কিন্তু কোথায় প্রচার কবরো?”

পার্বতী দেবী ধ্যান করতে লাগলেন তারপর বিষ্ণু প্রকটিত হলো।
কি চাও মাতা?
বললেন “প্রসাদ চাই, আপনার প্রসাদ শুধু আমার জন্য নয়, এই জগত জীবের জন্য‌।”

বিষ্ণু বললেন, “তথাস্থ। আমি কলি যুগে জগন্নাথ মহাপ্রসাদ রূপে আসছি, সেখানে তুমি বিমলা রূপে আমার মন্দিরের পাশেই থাকবে। আমার নিবেদিত প্রসাদ তোমাকে নিবেদন করার পর জগৎবাসী পাবে সেখানে মানুষ,পশু,পাখি,কীট-পতঙ্গ মহাপ্রসাদে ভেদাভেদ থাকবে না।”

এই শ্রীক্ষেত্র পুরী ধামেই প্রচার করলেন। যেখানে এত জাতিভেদ আমাদের ভারতবর্ষে। কিন্তু প্রসাদের ক্ষেত্রে পুরীধাম একেবারেই ভেদশূন্য।

এখানে যে ‘আনন্দবাজার’। সেখানে একজন এসে খেয়ে যায়, ফেলে যায়, সেখান থেকে আবার কেউ খায়। কেউ হাত মুছল, কেউ আবার মাথায় মুছল। সেখানে কত যে রান্না হয় তার ইয়ত্তা করা যায় না।

রথ উৎসবে তো লক্ষ লক্ষ লোক আসে। সেখানে লোককে দেখা যায় না রান্না করে খেতে। সবাই জগন্নাথের প্রসাদ পায়।

চলবে…..

spot_img
spot_img

সবাই যা পড়ছেন

spot_img