দেবদাস কুণ্ডু
আজ করবীর 55তম জন্মদিন। খুব একসাইটেড। গতকাল গোল্ডেন আই কোম্পানি ফোনে জানিয়েছে, তারা আজ করবীর জন্মদিন পালন করবে।
ছ মাস আগে আমরা গিয়েছিলাম শ্যামবাজার গোল্ডেন আই কোম্পানি শপে। করবীর ইচ্ছে এবার কোনও ছোটখাটো দোকান থেকে চশমা কিনবে না। জীবন শেষ হয়ে আসছে। কখন মরে যাবে তার গ্যারান্টি নেই। কারি কারি টাকা স্যালারি পায় সে। এই একটা ইচ্ছে পূর্ণ করবে না? মরে গেলে তার টাকা কে খাবে? ঐ এক জামাই ভোগ করবে। গোল্ডেন আই কোম্পানি তাদের খুব আদর যত্ন করেছে।
একটা ফর্ম ভরেছে করবী। চোখ পরীক্ষা হয়ে যাবার পর এবার ফ্রেম পছন্দ করার পর্ব। একটা
ফ্রেম পড়ছে আর বলছে কেমন লাগছে? আমি কাগজ পড়ছি আর উত্তর দিচ্ছি, ভালো। একসময় কাগজ টেনে নিয়ে বলল, এখানে কাগজ পড়ার জন্য আসিনি। ভালো করে দেখে বল এই ফ্রেমে
কেমন লাগছে?
আমি গুরুত্ব দেবার ভান করে বললাম – না, এটা নয়। ওটা দেখান। হুহু। এটা চলবে না। একটু ইনটেলেকচুয়াল লাগবে তেমন দিন। রিমলেস দিন। এইবার দারুণ লাগছে। চশমার দাম পড়ল দশ হাজার। প্রথমে একটু ঘাবড়ে গিয়ে করবী বলল, দশ হাজার? না আর একটু কমে…
আমি বললাম – কখন মরে যাও…..।
তিন দিন পর হোম ডেলিভারি দিল নতুন চশমা। নতুন চশমায় করবীর ফ্রেস সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে। আমার বউ যে এত সুন্দর, তা এই প্রথম বুঝলাম। ফাঁকা ঘরে অনেক দিনের উপোষ ভেঙে একটা চুমু খেলাম। করবী অবাক হয়ে বলল—এটা কি হল?
–তোমার নতুন চশমার সেলিব্রেট
করলাম। তোমাকে, তোমাকে ভীষণ ভীষণ সুন্দর লাগছে।
–তাই? সত্যি বলছো?
–1%জল নেই। ভয় হচ্ছে খুব
–কেন?
–তিতলির শ্বশুর না তোমার দিকে হাত বাড়ায়।
–ধ্যাৎ। একটা অসভ্য। নিজের মতো ভাবো সবাইকে?
সব মনে পড়ছে আমার। এখন আমরা উবেরে
চেপে শ্যামবাজার যাচ্ছি।
শোরুমে একটা মায়াবী আলো জ্বলছে। ছোট্ট একটা টেবিলে বেশ বড় কেক। মোমবাতি জ্বলছে। ওপরে ঝুলছে বেলুন। চার জন স্টাফ ড্রেস পড়ে দাঁড়িয়ে আছে। করবী দারুণ সেজেছে আজ।
কেক কাটল। আমাকে দিল। স্টাফদের সকলকে
দিল। তখনও হ্যাপি বার্ড গেয়ে চলেছে কোণায় বসা মেয়েটি। হুইল চেয়ারে হাত। ব্রাঞ্চ ম্যানেজার।
আমরা উবের ধরে ফিরছি। করবী বলল, আজকের দিনটা কোনওদিন ভুলবো না। আমি বাবা মায়ের প্রথম সন্তান। তবু ভাইয়ের জন্ম দিন পালন হতো। আমার খুব কষ্ট হতো। আমার জন্মদিন পালন হতো না।
অথচ আমাকে জন্ম দিয়ে অন্নপূর্ণা পাল প্রথম মা হয়েছেন। আমারই মুখ থেকে তিনি প্রথম মা ডাক শুনেছেন। আনন্দ পেয়েছেন। অথচ একবার আমার জন্ম দিন পালন করে আমাকে আনন্দ দেয়নি। ওরা আমার কেউ নয়। জানি এটা মডার্ন ব্যবসার
স্টাইল। হোক তা। তবু এই 55 বছরের জীবনে
ওরা প্রথম আমার জন্মদিন পালন করল।
ওরা আমার আত্মীয় নয়। মৃত্যুর আগে ওরা তো মনে করিয়ে দিল পঁচিশে মে আমি এই পৃথিবীতে জন্মেছিলাম। সামান্য একটা কেক দিয়ে পালন করল। যে কাজটা তুমি আমার স্বামী হয়ে করোনি। খুব খুব আনন্দ হচ্ছে আজ। করবীর চোখে জল। আমি কি ওর চোখের জল মুছিয়ে দিতে পারি? একজন অপরাধী কি তা পারে?