ড. কল্যাণ চক্রবর্তী
এই ছবিতে যেখানে দাঁড়িয়ে আছি, তা এক ছোট্ট নদীর ধারে। গ্রামের নাম সাঁইবোনা। খড়দহের অদূরে সেই গ্রাম। নদীর নাম নোয়াই বা নাওই। এই নদীর উৎপত্তিস্থল হল, বর্তী বিল। বর্তী বিল হচ্ছে, বারাকপুর মহকুমার অন্তর্ভুক্ত একটি সুবৃহৎ জলাশয়, যা আদিগঙ্গার মজাখাত রূপে চিহ্নিত। বারাকপুর-বারাসতের রাজপথের কাছাকাছি বর্তী বিল থেকে দুই শীর্ণ নদীর জলধারা প্রবাহিত হয়েছিল।
জানা যায়, গঙ্গার সঙ্গে সংযোগ রক্ষাকারী ইছাপুর খাল যেখানে বর্তী বিলে পড়েছে, তার অনতিদূরে কৈরাপুরের কাছ থেকে উৎপন্ন হয়েছিল দুটি নদী। একটির নাম ‘লাবণ্যবতী’, আর অন্যটি ‘সুবর্ণবতী’। ‘লাবণ্যবতী’ কথ্যভাষায় রূপান্তরিত হয়েছে ‘নাউই’ বা ‘নোয়াই’ নামে।
আর ‘সুবর্ণবতী’ বা ‘স্বর্ণবতী’-র নাম হয়েছে সোনাই। একসময় সোনাই আর নোয়াই নদীর মধ্যে ব্যবধান ছিল প্রায় আড়াই-তিন মাইল। মাঝে ছিল অসংখ্য বিলজমির অবয়ব। নোয়াই এখন একটা খালের মতো ধারায় বয়ে চলেছে। কিন্তু সোনাই হারিয়ে ফেলেছে তার স্বর্ণরূপ বা স্বর্ণযুগ।
পঞ্চদশ কিংবা ষোড়শ শতকেও সোনাই নদীর প্রবাহ প্রকট ছিল। সোনাই নদী তখন বর্তমান টিটাগড়, খড়দহ, সোদপুর, নিমতা, দমদম হয়ে পড়েছিল বাগজোলা খালে। বাগজোলা পড়ত হাড়োয়া গাঙ্গে, তা আবার বিদ্যাধরী নদীতে গিয়ে মিশতো। আজ আর তা নেই, নদীটাই ধীরে ধীরে চুরি ও দখল হয়ে গেলো।
সোনাই নদী গৃহস্থের আঙ্গিনা দিয়ে বয়ে চলার পরিবর্তে হয়ে উঠলো একাদিক্রমে পুকুর ঝিলের সমষ্টি। তারপর তাও আর রইলো না। এই নদীর পারের রূপকথা আর শিকড় সংস্কৃতির কথা আগামী দিনে শোনানোর ইচ্ছে রইলো।