শুভদীপ রায় চৌধুরী
শহর কলকাতার অভিজাত বাড়ির পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম দক্ষিণ কলকাতার মল্লিক বাড়ির পুজো। ঐতিহ্যবাহী মল্লিক বাড়ির পুজোর দিকে সবার নজর থাকে, কারণ, এই পুজোর দায়িত্বে থাকেন বিশিষ্ট অভিনেতা রঞ্জিত মল্লিক এবং তাঁর কন্যা অভিনেত্রী কোয়েল মল্লিক। আর রঞ্জিত-কোয়েলের সঙ্গে পরিবারের সদস্যরা হাতে হাত লাগিয়ে নেমে পড়েন পুজোর কাজের তদারকি করতে। সারা বছরের এই পাঁচটি দিন সাধারণ মেয়ের মতনই কোয়েল মেতে ওঠেন দুর্গা আরাধনায়। প্রতিবারই কোয়েলকে চূড়ান্ত ব্যস্ততার মধ্যে দেখা যায়, পাশাপাশি ব্যস্ত থাকেন তাঁর বাবা রঞ্জিত মল্লিকও।
ভবানীপুরের এই মল্লিক বাড়ির পুজোর সূচনা শুরু করেছিলেন রাধাগোবিন্দ মল্লিক। মল্লিকদের আদি নিবাস ছিল গুপ্তি পাড়ায়। সেখানেই শুরু হয় প্রথম দুর্গাপুজো। তবে, কলকাতায় চলে আসার পর বেশ কয়েক বছর বন্ধ ছিল এই পুজো। পরবর্তীকালে রাধাগোবিন্দ মল্লিকের পুত্র সুরেন্দ্র মাধব মল্লিক ১৯২৪ সালে আবার এই পুজো চালু করেন।
তবে ভবানীপুরের বাড়িতে প্রথমে দশভুজা দুর্গা নয়, বরং তাঁরই অন্যতম এক রূপ অন্নপূর্ণার আরাধনা শুরু হয়। পরবর্তীকালে রাধামাধব মল্লিকের ছোট ছেলে সুরেন্দ্রমাধব মল্লিক এবং তাঁর ভাইদের উদ্যোগে শুরু হয় মৃন্ময়ী দশভুজার আবাহন।
এ বছর শততম বর্ষে পা দিতে চলেছে মল্লিকদের পুজো। সুরেন্দ্র মাধব মল্লিকরা ছিলেন সাত ভাই। তাই যৌথ উদ্যোগে শুরু হয় এই পুজো। সেই ধারা আজও অব্যাহত ভবানীপুরের মল্লিক বাড়িতে।
পুরোপুরি বৈষ্ণব মতে পুজো করা হয় এ বাড়িতে। দুর্গাপুজোয় কোনওরকম বলিদানের নিয়ম নেই। মহালয়ার পরদিনই মা চন্ডীর ঘট বসে এবং শুরু হয় চণ্ডীপাঠ। সেই সঙ্গে মায়ের বিসর্জন পযর্ন্ত বাড়ির সদস্যদের সম্পূর্ণ নিরামিষ খাওয়ার রীতি রয়েছে এই বাড়িতে। দশমীতে উমা বিদায়ের পরই হয় আমিষ ভোজন।
মল্লিক বাড়ির মায়ের কাঠামো পুজো হয় জন্মাষ্টমীর পরের দিন। বাড়ির দালানেই প্রতিমা তৈরি করা হয়। একচালার সাবেকি প্রতিমায় ডাকের সাজ দেওয়া হয়। দশমীর দিন, বাড়ির সবচেয়ে প্রবীণ সধবা মহিলা মাকে প্রথম বরণ করেন। তারপর বাকিরা বরণ করেন, এরপরই শুরু হয় সিঁদুর খেলা। আর প্রাচীন রীতি মেনে কাঁধে করে আজও বিসর্জনের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয় এই বাড়ির দশভুজাকে।