হোমPlot1বাগনানের বাঙালপুর গ্রামের সিংহবাহিনী, অন্তরালে থাকা এক দুর্গাপুজো

বাগনানের বাঙালপুর গ্রামের সিংহবাহিনী, অন্তরালে থাকা এক দুর্গাপুজো

বাগনানের বাঙালপুর গ্রামের সিংহবাহিনী, অন্তরালে থাকা এক দুর্গাপুজো

সুমন জাটী
হাওড়া জেলার বাগনানের বাঙালপুর গ্রামের মুখোপাধ্যায় পরিবারের সিংহবাহিনী পুজো প্রায় শতাধিক বছরের পুরনো। বাঙালপুর এবং এর আশেপাশের গ্রামগুলিতে যতগুলি পুজো হয়, এটি তার মধ্যে অন্যতম।

সেবায়েত পরিবারের থেকে জানা যায়, আজ থেকে প্রায় শতাধিক বছর আগে সেবায়েত চট্টোপাধ্যায় বংশের কোনো এক পূর্বপুরুষ ওই এলাকায় পুকুর কাটানোর সময় সিংহবাহিনী বিগ্রহ উদ্ধার করে প্রতিষ্ঠা করেন। এই বংশের পূর্বপুরুষ হরিমোহন চট্টোপাধ্যায়, যাঁর আদিনিবাস ছিল বর্তমান হাওড়া জেলার উদয়নারায়ণপুরের পেঁড়ো গ্রামে। অষ্টাদশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ কবি রায়গুণাকর ভারতচন্দ্র জন্মেছিলেন এই গ্রামে।

তাঁর আমলে এই পুজোর প্রসার ঘটে। তিনি এই পুজোর দায়িত্ব পান তাঁর মাসীমার থেকে, কারণ তিনি মাসীমার হাতে মানুষ হয়েছিলেন। এভাবে আরও হাতবদল হয়ে বর্তমানে পুজোর দায়িত্ব রয়েছে বাণী মুখোপাধ্যায়ের পরিবারের হাতে, যিনি সম্পর্কে হরিমোহন চট্টোপাধ্যায়ের দৌহিত্রী।

এই পুজোর ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্য হল, দেবী দুই সেবায়েত পরিবারে এক বছর অন্তর পুজো নেন, কারণ স্বপ্নাদেশ হয় গ্রাম পাশ্ববর্তী দামোদরের অপরপাড়ের বাইনানের রায় পরিবারে তিনি পুজো নেবেন। এভাবেই দেবী দুই পরিবারে পুজো নেন এবং এক বছর করে বাস করেন।

এখানে দেবীর অবস্থান তিন কক্ষবিশিষ্ট সমতল ছাদের মন্দিরে। এর মাঝের ঘরে রয়েছে সিংহাসন, যেখানে দুর্গাপুজোর চারদিন দেবী পূজিত হন। এর একপাশে রয়েছে ভোগঘর ও অপর পাশে রয়েছে ঠাকুরঘর, যেখানে বছরের অন্যান্যদিন তাঁর সেবা হয়। এই মন্দিরের সামনে রয়েছে উঠোন এবং মন্দিরের পিছনে রয়েছে, সিংহবাহিনীর পুকুর (এখান থেকে দেবী বিগ্রহ উদ্ধার হয়)।

পুরনো মন্দির ভগ্নপ্রায় হয়ে যাওয়ার পর নতুন মন্দির তৈরি করা হয়েছে। এখানকার পূজিত দেবী হলেন দশভুজা মহিষাসুরমর্দিনী বিগ্রহ, যেটি অষ্টধাতুনির্মিত। এছাড়াও দেবীর সঙ্গে রয়েছে জোড়া শিবলিঙ্গ, শালগ্রাম, ধাতুনির্মিত রাধাকৃষ্ণ বিগ্রহ।

এখানকার দুর্গাপুজোর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল, ঘটস্থাপন ও কলাবউ প্রতিষ্ঠার সাথে দেবীবিগ্রহের ওপরে দুর্গাপুজো। এখানকার পুজো শাক্ত মতে হয়। পুজোর চারদিন অন্নভোগ হয়। বাসি সবজির ভোগ হয় না। তাই প্রতিদিন আনা টাটকা শাকসবজির তরকারি ভোগে দেওয়া হয়। এর মধ্যে বিশেষ পদ হল, লাউ চিংড়ি, যা মায়ের অত্যন্ত পছন্দের। আগে পশুবলি হলেও বর্তমানে তা কমে গেছে। নবমীতে পশুবলির সঙ্গে আখ, চাল কুমড়ো প্রভৃতি ফল বলি হয়। বিজয়া দশমীর দিন ঘট নাড়িয়ে ও কলাবউসহ ঘট বিসর্জনের মাধ্যমে পুজো সমাপ্ত হয়।

পথনির্দেশ:–হাওড়া থেকে ট্রেন ধরে হাওড়া-খড়্গপুর লাইনের বাগনান স্টেশনে নেমে অটো বা টোটো রিজার্ভ করে বাঙালপুর মনসাতলা, এর নিকটস্থ মাঠের ধারে মন্দির।

spot_img
spot_img

সবাই যা পড়ছেন

spot_img