সঈদ আবেদিন, আইনজীবী, বাংলাদেশ
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ, উগ্রপন্থী ইসলামপন্থী গোষ্ঠী ও পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও বুদ্ধিজীবী নেতৃত্বকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য গণহত্যা চালায়। আজ ৫৪ বছর পর, দেশ আবারও সেই একই অন্ধকারের মুখোমুখি হয়েছে। এবার সেই ধ্বংসযজ্ঞের নেতৃত্বে রয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ২০২৪ সালের অগাস্টে তাঁর ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে বাংলাদেশে রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর নিপীড়ন, হত্যা ও দমন-পীড়ন শুরু হয়েছে, যা ১৯৭১ সালের গণহত্যারই পুনরাবৃত্তি। নৃশংস অভ্যুত্থান ও ইসলামপন্থী জঙ্গিদের প্রত্যাবর্তন ঘটেছে।
২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট স্টুডেন্ট সমন্বয়কের নেতৃত্বে ক্ষমতা দখল এবং ৮ অগাস্ট ড. ইউনূসের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ – বাংলাদেশে নতুন এক ভয়াবহ যুগের সূচনা করেছে। পুরো বিশ্ব হতবাক হয়ে দেখল, কীভাবে দেশ নৈরাজ্যের মধ্যে পড়ে গেল। আওয়ামী লীগ নেতা, সমর্থক, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও সংখ্যালঘু বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়কে পরিকল্পিতভাবে হত্যার লক্ষ্যে একের পর এক আক্রমণ চালানো হতে লাগল।
১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় রাজাকার, আল-বদর ও আল-শামস বাহিনী যেভাবে বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের নির্মমভাবে হত্যা করেছিল, তেমনি আজ ড. ইউনূসের ছত্রছায়ায় থাকা উগ্র ইসলামপন্থীরা হত্যা, নির্যাতন ও গুমের রাজত্ব কায়েম করেছে। ইতিমধ্যে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে, এর মধ্যে রয়েছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বহু সদস্য, যাঁরা পূর্ববর্তী সরকারের সময় আইন ও শান্তি রক্ষার দায়িত্ব পালন করছিলেন। সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনও ১৯৭১ সালের গণহত্যার এক পুনরাবৃত্তি, যেখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা, ধর্ষণ ও বিতাড়িত করা হচ্ছে।
গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারের বিরুদ্ধে সরাসরি আঘাত: ড. ইউনূসের শাসনামলে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচার ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করা হয়েছে। তাঁর শাসনকালে আওয়ামী লীগ ও গণতন্ত্রপন্থী কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, অন্যায় আটক ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চলছে।
ইসলামী জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোকে আইনি সুরক্ষা প্রদান করা হয়েছে, ফলে তাদের অপরাধের দায় থেকে মুক্ত রাখা হয়েছে। বিচারব্যবস্থাকে বিরোধী দল দমনের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে, যা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সামরিক ট্রাইব্যুনালের মুক্তিযোদ্ধাদের ফাঁসির আদেশ দেওয়ার মতোই। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে, সাংবাদিকদের হয়রানি, গ্রেফতার এবং হত্যার শিকার হতে হচ্ছে।
এই কর্মকাণ্ড শুধুমাত্র মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়, এটি একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র, যার মাধ্যমে বাংলাদেশকে ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্রের পথ থেকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে, ঠিক যেমন ১৯৭১ সালে পাকিস্তান বাহিনী স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম ঠেকাতে চেয়েছিল।
২৫ মার্চ ২০২৫: এক রক্তাক্ত বার্ষিকী:
২০২৫ সালের ২৫ মার্চের রাতে বাংলাদেশ আরেকটি ভয়াবহ গণহত্যার সাক্ষী হলো। ড. ইউনূসের শাসনের নির্দেশে ইসলামপন্থী মিলিশিয়া ও সরকার-সমর্থিত বাহিনী দেশব্যাপী এক সমন্বিত হামলা চালায়। বিরোধী রাজনৈতিক কর্মী, ছাত্র, ও বুদ্ধিজীবীদের ওপর বর্বর হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়। শত শত মানুষকে নৃশংসভাবে হত্যা করে গণকবরে ফেলে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ, যা ১৯৭১ সালের রায়েরবাজার হত্যাকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি।
জানা গেছে, বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মীকে অপহরণ করা হয়েছে, যাঁদের ভাগ্য এখনও অজানা। এই হত্যাকাণ্ড ছিল পরিকল্পিত, যার উদ্দেশ্য ছিল যে কোনো বিরোধী কণ্ঠকে সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন করা। বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরা বর্ণনা করেছেন, কীভাবে নির্বিচারে হত্যা, গণ গ্রেফতার এবং নারীদের ওপর যৌন সহিংসতা চালানো হয়েছে – যা পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরতারই প্রতিচ্ছবি।
২৫ মার্চ শুধু শোকের দিন নয়, এটি প্রতিরোধের দিন। ১৯৭১ সালে যারা আমাদের জাতির মেধাবী সন্তানদের হত্যা করেছিল, আজ তারাই ক্ষমতার কেন্দ্রে বসে আমাদের দেশকে ধ্বংস করতে চায়। আমরা যদি এখনই রুখে না দাঁড়াই, তবে ১৯৭১-এর শহীদদের আত্মত্যাগ ব্যর্থ হয়ে যাবে এবং মুক্ত, গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশের স্বপ্ন ইসলামপন্থী চরমপন্থীদের পায়ের নিচে চাপা পড়ে যাবে।
বিশ্ব সম্প্রদায়কেও আর নীরব থাকা চলবে না। এখনই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত বাংলাদেশে চলমান মানবতাবিরোধী অপরাধের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া এবং ড. ইউনূস ও তার প্রশাসনকে বিচারের আওতায় আনা। দেশে-বিদেশে থাকা বাংলাদেশিদেরও ঐক্যবদ্ধভাবে ন্যায়বিচার, সত্য এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য সোচ্চার হতে হবে।
২৫ মার্চ আমাদের শিখিয়েছে, নীরবতার মূল্য অনেক বেশি। আজ আমাদের কণ্ঠ তুলতে হবে, আমাদের দেশকে স্বৈরাচার, জঙ্গিবাদ ও দমন-পীড়ন থেকে মুক্ত করতে হবে, যেমনটি আমরা করেছিলাম ১৯৭১ সালে। বিচার হতে হবে, আর যাঁরা এই গণহত্যার জন্য দায়ী, তাঁদের শাস্তি পেতে হবে।
(মতামত ব্যক্তিগত)