হোমPlot1হাওড়ায় ভাগাড়ের বিপদ নিয়ে তিন বছর আগেই  রিপোর্ট, গুরুত্ব দেয়নি কেউই

হাওড়ায় ভাগাড়ের বিপদ নিয়ে তিন বছর আগেই  রিপোর্ট, গুরুত্ব দেয়নি কেউই

হাওড়ায় ভাগাড়ের বিপদ নিয়ে তিন বছর আগেই  রিপোর্ট, গুরুত্ব দেয়নি কেউই

সৌভিক চোঙদার, পরিবেশ কর্মী:
২০২২-এর ৯ এপ্রিল সকালে হাওড়ার বেলগাছিয়ায় ভাগাড় পরিদর্শনে গিয়ে চমকে উঠেছিলাম। একটি মৃত শূকরের মাংস নিয়ে টানাটানি করছিল স্থানীয় কুকুরগুলো। সেটির রক্ত এবং জীবাণু মাটির সঙ্গে মিশে যাচ্ছিল। স্থানীয় মানুষ এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এখানকার আবর্জনাকে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। ভাগাড়ের বিভিন্ন অংশে আবর্জনার স্তূপে আগুন ধরিয়ে রান্নার কাজ সম্পন্ন করতেন তাঁরা। তাই আজকের এই পরিস্থিতি নতুন নয়, বা একদিনে তৈরি হয়নি।

তখন আমি কেন্দ্রীয় সরকারের পরিবেশ মন্ত্রক ও অচিরাচরিত শক্তি দফতরের কাছে একটি রিপোর্ট পাঠায়। এখানকার পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি এই আবর্জনার সাহায্যে শক্তি উৎপাদনের ব্যাপারে কেন্দ্রের কাছে প্রয়োজনীয় প্রস্তাব পেশ করি।

ইতিমধ্যে কেটে গিয়েছে তিনটি বছর। এই ভাগাড় ক্রমশ আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। এখানে ভাগাড় তৈরির ক্ষেত্রে পরিবেশগত এবং স্থানীয় আর্থ-সামাজিক বিষয়ের কথা ভাবা হয়নি। বর্জ্য পৃথকীকরণ,  পুনর্ব্যবহার এবং বর্জ্য থেকে সার তৈরির কোনও পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়নি। ২০০০ সালে এখানে আবর্জনার উচ্চতা ছিল মাত্র ২০ ফুট। এখন তা পৌঁছে গিয়েছে ১৫০ ফুটে।

এই ভাগাড় বিপর্যয়ের ফলে ভাঙনের শিকার হুগলি নদীর বিপদ আরও বাড়ল। লিলুয়ায় অবস্থিত এই ভাগাড় পরিবেশগত সমস্যার পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে এক বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাতাসে মিশে যাচ্ছে বিষাক্ত গ্যাস, যা আশেপাশে বসবাসরত মানুষের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যগত সমস্যার সৃষ্টি করছে।

বিশেষ সংযোজন:
হাওড়ার বেলগাছিয়ায় ভাগাড়ের চাপে মাটি ধসে বিপর্যয়ের ঘটনায় চিন্তিত বিশেষজ্ঞরা। কলকাতা ও হাওড়ার নীচে মাটির অবস্থা নিয়ে তাঁরা চিন্তিত। কলকাতার মাটির নীচের জলস্তর ক্রমশ নামতে থাকায় ভূগর্ভে জল কমে আসছে। ভূ-বিজ্ঞানীদের মতে,  ভূগর্ভস্থ জলস্তরের সব সময় একটি নির্দিষ্ট  সীমা থাকা জরুরি। জলস্তর স্বাভাবিকের চেয়ে নেমে গেলেই ভূগর্ভে বিন্যাস বদলে যায় এবং মাটির গভীরে চাপ বাড়তে থাকায় ধসের প্রবণতা বাড়ে।

বেলগাছিয়ার ভাগাড়ে  ইঁদুর, ছুঁচো, বেজির মতো প্রাণীরা মাটি খুঁড়ে ভূগর্ভে অনেক ফাঁকা জায়গা তৈরি করেছে। সেইসঙ্গে আবর্জনার স্তূপ থেকে তৈরি হওয়া মিথেন গ্যাস ভূগর্ভের ফাঁপা স্তরে জমে পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। ওই গ্যাস থেকে বিস্ফোরণ ঘটলে, আরও বড় ধস নামতে পারে।

ভূ-বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে দিয়ে বলছেন,  কলকাতার গঙ্গা সংলগ্ন এলাকাতেও যে কোনও দিন এই ধরনের বিপর্যয় ঘটতে পারে। গঙ্গার পশ্চিমে বালি-উত্তরপাড়া এলাকা এবং পূর্বে দক্ষিণেশ্বর থেকে বরাহনগর, কাশীপুর, শোভাবাজার হয়ে নিমতলা ঘাট পর্যন্ত এলাকাকে সবচেয়ে বিপজ্জনক বলে চিহ্নিত করেছেন ভূ-বিজ্ঞানীদের একাংশ।

নিয়ম ভেঙে একের পর এক বহুতল তৈরির ফলে বিপদ আরও বেড়েছে। বালি-উত্তরপাড়া এলাকায় গঙ্গার তীরে বহু বড় বড় বহুতল আবাসন গড়ে উঠেছে। সেই সব আবাসনের পাশাপাশি উত্তর কলকাতাতেও গঙ্গাতীরবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকায় বিপদের আশঙ্কা রয়েছে।

spot_img
spot_img

সবাই যা পড়ছেন

spot_img