বিশ্বজিৎ দাস
️দুর্গাপূজার সময় মণ্ডপে গেলে গণেশের পাশে লাল পাড় সাদা শাড়িতে ঘোমটা ঢাকা একটি কলাগাছ দেখা যায়। অনেকেই এটিকে কলাবউ ও গণেশের স্ত্রী বলেন। কিন্তু আদৌ এটি গণেশের স্ত্রী নয়। এটাকে ‘নবপত্রিকা’ বলা হয়। এটি মা দুর্গা অর্থাৎ গণেশের জননী। গণেশের স্ত্রীদের নাম রিদ্ধি ও সিদ্ধি।
নবপত্রিকার আক্ষরিক অর্থ বোঝায় নয়টি পাতা। কিন্তু এখানে নয়টি উদ্ভিদ দিয়ে নবপত্রিকা গঠন করা হয়। এই নয়টি উদ্ভিদ মা দুর্গার নয়টি শক্তির প্রতীক। এই নয়টি উদ্ভিদ হল কদলী বা রম্ভা (কলাগাছ), কচু, হরিদ্রা (হলুদ), জয়ন্তী, বিল্ব(বেল), দাড়িম্ব(ডালিম), অশোক, মান ও ধান।
একটি সপত্র কলাগাছের সঙ্গে সাদা অপরাজিতা লতা দিয়ে বেঁধে লাল পাড় সাদা শাড়ি পরিয়ে ঘোমটা দিয়ে বধূর আকার দেওয়া হয়। তারপর তাতে সিঁদুর দিয়ে দুর্গা ও গণেশের দেবীর ডানপাশে রাখা হয়।
জেনে নিন ৯টি উদ্ভিদের অধিষ্টাত্রী দেবী সম্পর্কে :
১। কলাগাছের অধিষ্টাত্রী দেবী ব্রহ্মাণী।
২। কচুগাছের অধিষ্টাত্রী দেবী কালিকা।
৩। হরিদ্রাগাছের অধিষ্টাত্রী দেবী উমা।
৪। জয়ন্তীগাছের অধিষ্টাত্রী দেবী কার্তিকী।
৫। বিল্বগাছের অধিষ্টাত্রী দেবী শিবা।
৬। দাড়িম্বগাছের অধিষ্টাত্রী দেবী রক্তদন্তিকা।
৭। অশোকগাছের অধিষ্টাত্রী দেবী শোকরহিতা।
৮। মানগাছের অধিষ্টাত্রী দেবী চামুণ্ডা।
৯। ধানগাছের অধিষ্টাত্রী দেবী লক্ষ্মী।
সপ্তমীর সকালে পুরোহিত নিজে নবপত্রিকাকে নিয়ে কোনও নদী বা পুকুরে স্নান করাতে নিয়ে যান। সঙ্গে মহিলারা উলুধ্বনি ও শঙ্খধ্বনি করতে করতে যান।
শাস্ত্রবিধি অনুযায়ী স্নান করানোর পর নবপত্রিকাকে নতুন শাড়ি পরানো হয়। তারপর পূজামণ্ডপে নিয়ে এসে নবপত্রিকাকে মা দুর্গার ডানদিকে একটি কাঠের সিংহাসনে স্থাপন করা হয়।
পুজো মণ্ডপে নবপত্রিকা প্রবেশের মাধ্যমে দুর্গাপূজার মূল অনুষ্ঠানটির প্রথাগত সূচনা হয়। নবপত্রিকা প্রবেশের পর দর্পণে দেবীকে মহাস্নান করানো হয়। এরপর বাকি দিনগুলিতে নবপত্রিকা প্রতিমাস্থ দেবদেবীদের সঙ্গেই পূজিত হতে থাকেন। বিশেষ ভাবে লক্ষণীয় হল, নবপত্রিকা প্রবেশের আগে পত্রিকার সামনে দেবী চামুণ্ডার আবাহন ও পূজা করা হয়। পত্রিকার অন্য কোনও দেবীকে পূজা করা হয় না।