হোমPlot1কাঞ্চনজঙ্ঘা দুর্ঘটনা নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য! ভোর থেকেই 'অকেজো' ছিল সিগন্যাল

কাঞ্চনজঙ্ঘা দুর্ঘটনা নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য! ভোর থেকেই ‘অকেজো’ ছিল সিগন্যাল

কাঞ্চনজঙ্ঘা দুর্ঘটনা নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য! ভোর থেকেই ‘অকেজো’ ছিল সিগন্যাল

কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে দুর্ঘটনা নিয়ে সামনে এল ভয়ঙ্কর তথ্য। নিজেদের দায় ঝেড়ে ফেলে রেল কর্তৃপক্ষ যখন মালগাড়ির মৃত দুই চালকের ওপর দোষ চাপাতে ব্যস্ত, তখন রেলের একটি সূত্রে জানা গেছে, রাঙাপানি ও আলুয়াবাড়ির মধ্যে স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল ব্যবস্থা ১৭ জুন ভোর ৫টা ৫০ মিনিট থেকে পুরোপুরি ‘অকেজো’ ছিল। সেই কারণে ট্রেন ধীর গতিতে চলছিল।

রেলের ওই সূত্র সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে জানিয়েছে, শিয়ালদহমুখী ১৩১৭৪ ডাউন কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস রাঙাপানি স্টেশন ছেড়েছিল সকাল ৮টা বেজে ২৭ মিনিটে। এরপর সিগন্যালিং সমস্যার কারণে রানিপাত্র আর ছত্তরহাটের মাঝে সেটা দাঁড়িয়ে পড়ে। সেই সময়ই একটি পণ্যবাহী গাড়ি GFCJ রাঙাপানি স্টেশন ছাড়ে ৮টা ৪২ মিনিটে। এরপর সেটি কাঞ্চনজঙ্ঘার পিছনে ধাক্কা দেয়।

রেলের এক প্রাক্তন কর্তা জানিয়েছেন, স্বয়ংক্রিয় সিগন্যালিং ব্যবস্থা কাজ না করলে, স্টেশন মাস্টার একটা লিখিত কাগজ দিয়ে থাকেন, রেলের পরিভাষায় যাকে বলে ‘পেপার লাইন ক্লিয়ার টিকিট’ (পিএলসিটি), যা টিএ ৯১২ নামে পরিচিত। এই কাগজ থাকলে, ওই জোনে যত লাল সিগন্যাল রয়েছে, তা নিয়ন্ত্রিত গতিতে পেরিয়ে যেতে পারেন চালক। কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসকেও টিএ ৯১২ ইস্যু করেছিলেন রাঙাপানি স্টেশনের স্টেশন মাস্টার।

স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল বন্ধ থাকায় ওই অংশে খুবই ধীর গতিতে ট্রেন চলাচল করছিল। কখনও আবার ট্রেন দাঁড় করিয়েও দেওয়া হচ্ছিল।  জানা গিয়েছে, এনজেপি ছাড়ার পরে ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার বেগে ছুটছিল ট্রেনটি। রাঙাপানির কাছাকাছি এসে  কিছুক্ষণের জন্য ট্রেন দাঁড়িয়ে পড়ে। তখনই পিছন থেকে ধাক্কা মারে মালগাড়ি।

রেলের একটি সূত্রে দাবি করা হয়েছে, স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল বিকল হওয়ায় কাঞ্চনজঙ্ঘা এবং মালগাড়ি, দুই ট্রেনের চালক এবং গার্ডকেই কাগুজে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছিল। রাঙাপানি স্টেশনের স্টেশন মাস্টারই ওই কাগুজে অনুমতি দিয়েছিলেন। রেল সূত্রে খবর, কাঞ্চনজঙ্ঘার পাশাপাশি মালগাড়ির চালককেও ‘টিএ ৯১২’ ফর্ম দেওয়া হয়েছিল। সেই ফর্মে উল্লেখ ছিল কোন কোন সিগন্যাল ‘ভাঙতে’ পারবেন চালক। এমনকি, কোথা থেকে কোথা পর্যন্ত এই ‘অনুমতি’ বহাল থাকবে, তারও উল্লেখ ছিল। মালগাড়ির চালক এবং গার্ডের কাছেও ছিল সেই ছাড়পত্র।

রেলের ওই সূত্রে আরও দাবি করেছে, মালগাড়ির চালকের কাছে রাঙাপানি থেকে চটের হাট পর্যন্ত মোট ৯টি লাল সিগন্যাল ‘ভাঙা’র অনুমতি ছিল।

অনুমতিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছিল, চালককে অবশ্যই যাত্রাপথের লেভেলক্রসিং গেটের উপর নজর রাখতে হবে। যদি গেট বন্ধ থাকে, তবেই ট্রেন চালিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন চালক। গেট খোলা থাকলে, তার আগেই ট্রেনকে থামিয়ে দিতে হবে। নিয়ম অনুযায়ী, দিনের বেলা ট্রেন চালানোর সময় দৃশ্যমানতা ঠিক থাকলে, কাগুজে সিগন্যালে প্রতি ঘণ্টায় ১৫ কিলোমিটার গতিবেগে ট্রেন চালানো যায়। একই সঙ্গে আগের গাড়ির সঙ্গে অন্তত ১৫ মিনিটের দূরত্বে পরের গাড়িকে যেতে হবে। রাতের বেলা বা কুয়াশা থাকলে ওই গতি ১০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে মালগাড়ির চালক সেই নিয়ম মেনেছিলেন কি না, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে।

রেল দফতরের একাংশ এই দুর্ঘটনার জন্য মালগাড়ির চালককেই দুষছেন। তিনি সিগন্যাল না মানাতেই এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনা বলে রেল কর্তাদের একাংশ ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। তবে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে এখনও পর্যন্ত সরকারিভাবে কোনও বক্তব্য জানায়নি রেল। দুর্ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব জানান, দুর্ঘটনার কারণ তদন্তসাপেক্ষ। প্রাথমিকভাবে উদ্ধার কাজকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন তাঁরা।

spot_img
spot_img

সবাই যা পড়ছেন

spot_img