অশোক সেনগুপ্ত
কালীপুজোর রাতে ধুমধাম বাজি ফাটবে, তাতে আর আশ্চর্য কী? অনেকের অসুবিধা হয়! বিশেষ করে পশুপাখীদের। পুলিশ-প্রশাসন নির্দেশিকা জারি করে কিছুটা চাপে রাখার চেষ্টা করলেও তারাও অনেকটা অসহায়। জানলা-দরজা বন্ধ করে ঘরবন্দি আমি ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’-এর মাঝে কাজে ফাঁকি মেরে সমাজমাধ্যমের পর্দায় উঁকি মারলাম কিছুটা সময়! অনেকে কালীপুজো নিয়ে নানা তথ্য, স্মৃতির উল্লেখ করেছেন! মনে পড়ল সম্প্রতি আমার ডাকাত কালীবাড়িতে ঢুঁ মারার কথা!

আমন্ত্রিত হয়ে গত ২৩ অগাস্ট শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বাসভবনে এক সভায় গিয়েছিলাম। যাওয়ার পথে পূর্ণ দাস রোডের গেলাম ডাকাত কালীবাড়িতে। মেঘলা আকাশ। ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি পড়ছে। জুতো খুলে টাইলস-এর ওপর দিয়ে কিছুটা যেতে হয়। মোজাদুটো একদম ভিজে গেল। মূল বিগ্রহের ঠিক পাশেই আর এক দেবী।
কথা বললাম মন্দিরের বর্তমান অধিকারী কল্লোল ভট্টাচার্যের সঙ্গে। তাঁকে জানালাম, বহু আগে আপনাদের এই মন্দির নিয়ে কাগজে লিখেছিলাম। উনি আগ্রহ দেখালেন। নামের কার্ড দিয়ে বললাম, “মাঝে মাঝে তো ইউটিউবাররাও আসছেন!” উনি বললেন, “হ্যাঁ। অতীতের কথা শুনেছি। তবে, আমরা ১৯৩০ থেকে এখানে আছি। রোজ বেলা সাড়ে বারোটা থেকে বিকেল পর্যন্ত মন্দিরের ফটক বন্ধ থাকে। মূল কালীপুজোয় খুব ভিড় হয়।”
পূজারির সঙ্গে আমার কথা বলার ছবি তিনিই তুলে দিলেন মুঠোফোনে।
মন্দির থেকে বার হওয়ার সময় দেখলাম এক ট্রাফিক পুলিশ বাইক নিয়ে মন্দিরের সামনে থামলেন। বাইকে বসেই কপালে দু’হাত ঠেকিয়ে কয়েক মিনিট ধরে প্রার্থনা করলেন মায়ের উদ্দেশে। হয়তো অফিস যাওয়ার মুখে রোজই একবার প্রার্থনা জানিয়ে যান। মনে প্রশ্ন এসেছিল। জিজ্ঞাসা করিনি।
জঙ্গলাকীর্ণ এই তল্লাটে এক সময় রাজত্ব করত মনোহর ডাকাত। কলকাতার মনোহর পুকুর কথাটা মনোহর ডাকাতের পুকুর থেকে এসেছে, এটা অনেকেই জানেন।
নিষ্ঠাবান কলকাতা-গবেষক অনিমেষচন্দ্র রায় জানিয়েছিলেন, “…..robber chieftain called Manohar who used to carry on his depredation in this part of old Calcutta, then filled with fields and forests ingested with wild beasts. The story goes that once a Brahmin lad from Khurut was crossing the wilds in a palanquin, accompanied by his wife and a news born child. Suddenly on hearing the fierce cries of robbers, the young man and the winter palanquin- bearers took to their heels in sheer panic, leaving the poor lady and her child to their fate. When Manohar, the robber chieftain came to the spot, he was surprised to find that the lady had died of fright but the child was still alive. It was the child, orphaned and unclaimed by his father, that Manohar adopted as his own son lavishing on him all the care and fondness of a real father, and giving him an education that enabled him to earn fame and fortune. It is said no perpetuate his father’s memory, the son named the forest-road after him.”
কলকাতা-বিশারদ পি টি নায়ার মনোহর পুকুর রোডের নামকরণ প্রসঙ্গে ওপরের উল্লেখ করে তাঁর ‘A History of Calcutta Streets’ (pg 560) -এ লিখেছেন, “This is a story and we have found no corroboration in any book on history of Calcutta.”
এসপি মুখার্জি রোড থেকে শুরু হয়ে মনোহরপুকুর রোড এঁকেবেঁকে রাসবিহারি রোডের ওপর দিয়ে চলে গিয়েছে গোলপার্ক পর্যন্ত। রাসবিহারি রোড থেকে গোলপার্ক পর্যন্ত অংশের নাম পরবর্তীকালে রাখা হয় পূর্ণ দাস রোড। ত্রিকোণ পার্ক থেকে ওই রাস্তা ধরে কিছুটা এগোলে বাঁ দিকে পড়বে সেই মনোহর ডাকাতের কালীবাড়ি। প্রতি কালীপুজোয় এখনও ঘটা করে পুজো হয়।
(লেখক আনন্দবাজার পত্রিকার প্রাক্তন সাংবাদিক)



