বিশেষ প্রতিনিধি : কলকাতা মহানগরী এখন গভীর রাত পর্যন্ত জাগে। পৃথিবীর বহু শহরের মত এই কল্লোলিনী ঘুমিয়ে পড়ে না সন্ধ্যায়। অজস্র মানুষের নানা কাজ রাতে, তথ্য প্রযুক্তি সহ অন্যান্য বহু অফিসে রাতে কাজ হয় বা মাঝ রাতে ছুটি মেলে। অভিনয় দুনিয়ায় শ্যুটিংয়ের কাজ চলে। বিয়ে বা অন্য অনুষ্ঠানের শেষে উত্তর থেকে দক্ষিণে মানুষের যাতায়াত চলতেই থাকে। কলকাতা জেগে থাকে, কিন্তু তাঁদের নিরাপত্তা দেখভালের জন্য কলকাতার পুলিশ কি নজর রাখে?
অভিযোগ, তা প্রায় নেই, কোটাল বাহিনী ঘুমিয়ে পড়ে। অভিযোগটা নতুন নয় আদৌ। কিন্তু কদিন আগে ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা হয়েছে রাজ্যের এক প্রাক্তন আই এ এস অফিসারের। তিনি, তাঁর স্ত্রী ও এক প্রবীণ ভদ্রমহিলা দক্ষিণ কলকাতায় আক্রান্ত হন রাতে। কিন্তু রাস্তায় কোথাও পুলিশের টিকির দেখা পাননি তাঁরা।
প্রাক্তন সেই সরকারি আমলার দুঃখ করে বলেছেন, “আমি কলকাতা শহরে ঘুরে বেড়াই সেই ছাত্র অবস্থা থেকে। আমলাগিরি করেছি এত বছর, লেখাপড়া আড্ডা সবই তো এই শহরে। বিদেশে গিয়েও মিস করি আমার কলকাতাকে, ফিরে আসি নিজের ঘরে। আমাকে তো ব্যক্তিগতভাবেও কিছু মানুষ চেনেন। আমার এই কলকাতায় কটা লুম্পেন কিনা এভাবে চড়াও হল, আমার গাড়ির পেছনে অকারণে ধাওয়া করে আক্রমণ করতে পারল? আমার এই শহরকে নিয়ে সব গর্ব টলিয়ে দিয়ে চলে গেল…। একজন পুলিশ কর্মীর সাহায্য পেলাম না ? অনেক এরকম ঘটনার কথা শুনি। কিন্তু নিজের এই ভয়ানক অভিজ্ঞতা হবে ভাবিনি কোনওদিন।”
এই প্রাক্তন আমলার নাম দেবপ্রসাদ জানা , ডি পি জানা নামেই তিনি সুপরিচিত। তাঁর বন্ধু ভাগ্য ঈর্ষণীয়। তাঁদের মধ্যে বহু বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী, অধ্যাপক, অফিসার, রাজনৈতিক নেতা সবাই আছেন।
ঘটনার রাতে তিনি একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে স্ত্রী(প্রাক্তন অধ্যাপিকা) ও এক বর্ষীয়ান ভদ্রমহিলার সঙ্গে গাড়িতে তাঁর দক্ষিণ কলকাতার বাড়ি ফিরছিলেন। হাজরা রোডের মোড়ের কাছে আচমকাই একদল মোটরবাইক নিয়ে দাপিয়ে বেড়ানো যুবক তাঁর গাড়ি ধাওয়া করে। চালক গাড়ির গ্লাস নামিয়ে প্রতিবাদ জানান।
সেই সময়ে এক বাইক-মস্তান গাড়ির চাবি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে, জানাবাবু বাধা দিয়ে ড্রাইভারকে গ্লাস নামিয়ে দিতে বলেন। এরপরেও সেই বাইক আরোহী ছেলেটি বেশ কিছুক্ষণ গাড়ির পেছনে পেছনে ছুটেছিল।
দেবপ্রসাদ জানার কথায়, “ওই পরিস্থিতিতে ঘটনার ছবি বা বাইকের নম্বর নেওয়া সম্ভব হয়নি। ভয় পেয়েছিলাম। কারণ সঙ্গে দুজন ভদ্রমহিলা ছিলেন। বিশ্বাস হচ্ছিল না ..এমন ঘটনা ঘটতে পারে !”
এই ঘটনার বিষয়ে তিনি রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিবকে জানাবেন।
নতুন পুলিশ কমিশনার সৌমেন মিত্র সবে দায়িত্ব নিয়েছেন। তাঁর কাছে প্রস্তাব, রাতের কলকাতায় পরিচয় লুকিয়ে সরকারি গাড়ি না নিয়ে ঘুরে দেখুন, ট্যাক্সি পান কি না, তাও পরীক্ষা করুন। একসময় তাঁর পদে থাকা তুষার তালুকদারের ফ্ল্যাটে চুরির কিনারা কেন এক মাসেও হল না, তা জানার চেষ্টা করুন। সৎ নির্ভীক অফিসার বলে পরিচিত নতুন নগরপাল নাগরিকদের যদি বোঝাতে পারেন, তিনি শক্ত হাতে শাসন করতে ভয় পান না, কলকাতা তাঁকে স্যালুট করবে।