ভবানীপুরে এবার কি অতীতের জয়ের সব রেকর্ড ভেঙে দেবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? বৃহস্পতিবার ভোটের পর পরিবহন মন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিম দাবি করেছেন, ৫০ হাজারের বেশি ভোটে জিতবেন দিদি। রাজ্যের মন্ত্রী ববি এমন দাবি করতেই পারেন। তবে ভোটের গতিপ্রকৃতি বলছে, মমতার বিরুদ্ধে তেমন চ্যালেঞ্জ ছুড়তে পারবেন না বিজেপির প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকের ধারণা, এবার অতীতের জয়ের রেকর্ডকে ছাপিয়ে যাবেন তৃণমূল সুপ্রিমো। কমপক্ষে ৪০ হাজার ভোটে জিতবেন তিনি, এমনটাই মনে করছেন তাঁরা।
১৯৮৪তে প্রথমবার লোকসভার নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন মমতা। ২০১১ সালে তৃণমূল যখন রাজ্যে ক্ষমতায় আসে, তখনও তৃণমূল নেত্রী লোকসভার সদস্য ছিলেন। পরে উপনির্বাচনে ভবানীপুরকেই তাঁর কেন্দ্র হিসেবে বেছে নেন মমতা। সেবারই প্রথম বিধানসভা নির্বাচনে লড়াই। তাঁর মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সিপিএমের নন্দিনী মুখোপাধ্যায়। সদ্য ক্ষমতা হারানো সিপিএম প্রার্থীকে বিপুল ভোটে হারিয়েছিলেন মমতা। মমতা পেয়েছিলেন ৭৩,৬৩৫ ভোট। আর নন্দিনী মুখোপাধ্যায়ের প্রাপ্ত ভোট ১৯,৪২২। ৫৪ হাজার ২১৩ ভোটে জয় তৃণমূল নেত্রীর। সেবার মমতার পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন ভবানীপুরের ৭৭.৪৬ শতাংশ মানুষ। আর নন্দিনী পেয়েছিলেন মাত্র ২০.৪৩ শতাংশ ভোট।
২০১৬তেও ভবানীপুরেই প্রার্থী হন মমতা। সেবার তিনি পেয়েছিলেন ৬৫ হাজার ৫২০ ভোট। শতকরা হিসেবে ৪৮.৫৩ শতাংশ। আর কংগ্রেসের দীপা দাশমুন্সি পেয়েছিলেন ৪০,২১৯টি ভোট। ২৫ হাজার ৩০১ ভোটে জয়ী হন মমতা। বিজেপির টিকিটে ভোটে দাঁড়ানো নেতাজির প্রপৌত্র চন্দ্রকুমার বসু পেয়েছিলেন ২৬ হাজার ২৯৯ ভোট। শতকরা হিসেবে ১৯.৪৮ শতাংশ।
২০২১-এর বিধানসভা ভোটে নন্দীগ্রাম থেকে লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নেন মমতা। ভবানীপুরে প্রার্থী হন প্রবীণ তৃণমূল নেতা শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। শোভনদেবের পক্ষে ভোট পড়ে ৭৩ হাজার ৫০৫। আর বিজেপি প্রার্থী অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ পেয়েছিলেন ৪৪,৭৮৬টি ভোট। প্রায় ২৯ হাজার ভোটে জয়ী হন শোভনদেব। শতাংশের হিসেবে তৃণমূল ৫৭.৭১ শতাংশ এবং বিজেপি পায় ৩৫.১৬ শতাংশ ভোট।
এবার দেখা যাক লোকসভাভিত্তিক ফলাফল। ২০১৪ সালে দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী ছিলেন সুব্রত বক্সী। সেবার বিধানসভাভিত্তিক ফলাফলে ভবানীপুর কেন্দ্রে বিজেপির থেকে ১৭৬ ভোটে পিছিয়ে ছিলেন সুব্রত। ২০১৪তে ভবানীপুর বিধানসভায় তৃণমূল ৪৭,২৮০ ভোট পেয়েছিল। বিজেপি পেয়েছিল ৪৭,৪৫৬টি ভোট। এছাড়া কংগ্রেস ১৫,৪৮৪ এবং সিপিএম ২১,৯৫৪টি ভোট পেয়েছিল।
গত লোকসভা অর্থাৎ ২০১৯-এর নির্বাচনে দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা আসনে তৃণমূলের প্রার্থী হন মালা রায়। ভবানীপুরে এগিয়ে থাকলেও, ভবানীপুরে বিজেপির সঙ্গে ভোটের ফারাক ছিল মাত্র ৩ হাজার ১৬৮। ৭০ এবং ৭৪ এই দুটি ওয়ার্ডে প্রচুর গুজরাতি ভোটার রয়েছেন।
বৃহস্পতিবার বাড়ি থেকে থেকেই ভবানীপুর উপনির্বাচনের ওপর নজর রাখছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিকেলে তিনটে ১৩ মিনিট নাগাদ মিত্র ইন্সটিটিশনে ভোট দিতে যান তিনি। মাত্র তিন মিনিটের মধ্যেই ভোট দিয়ে কালীঘাটের বাড়িতে ফিরে যান মুখ্যমন্ত্রী।