হোমPlot1আদরের নিমাই আজ নদিয়ার 'জামাই', জামাইষষ্ঠীতে মহাপ্রভুকে ঘিরে মাতোয়ারা নবদ্বীপ

আদরের নিমাই আজ নদিয়ার ‘জামাই’, জামাইষষ্ঠীতে মহাপ্রভুকে ঘিরে মাতোয়ারা নবদ্বীপ

আদরের নিমাই আজ নদিয়ার ‘জামাই’, জামাইষষ্ঠীতে মহাপ্রভুকে ঘিরে মাতোয়ারা নবদ্বীপ

শুভদীপ রায় চৌধুরী
বছরের আর পাঁচটি দিন আমাদের আদরের নিমাই ভক্তদের কাছে আরাধ্য দেবতা হলেও, এই একটি দিন মহাপ্রভু হয়ে ওঠেন ঘরের জামাই। তাই জামাই ষষ্ঠীর দিন সাড়ম্বরে  উৎসব হয় শ্রীধাম নবদ্বীপে। নদিয়ার সনাতন মিশ্রের কন্যা বিষ্ণুপ্রিয়া দেবীর সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর। সেই থেকেই  ধামেশ্বর প্রভুর মন্দিরে এই দিনে  মহাপ্রভুকে জামাই হিসেবে আদরযত্ন করা হয়। বহু বছরের এই প্রথা আজও একইরকমভাবে পালন করা হয়।

জামাই ষষ্ঠী উপলক্ষে মহাপ্রভুকে সকাল থেকেই  জামাই হিসেবে বরণের প্রস্তুতি নিতে থাকেন স্থানীয় বাসিন্দারা। নতুন ধুতি-পাঞ্জাবিতে সাজানো হয় চৈতন্যদেবকে। তারপর প্রথা মেনে জামাই বরণের ফুলের মালা পরানো হয়,  গায়ে দেওয়া হয় সুগন্ধি ৷ মহাপ্রভুর এই জামাই রূপ দর্শন করতে আসেন অসংখ্য মানুষ।

মধ্যাহ্ন ভোগে থাকে শাক, থোড়, মোচা, শুক্ত, রকমারি তরকারি, ডাল, ভাজা, ছানার ধোকা, পনির ডালনা, পোস্ত ইত্যাদি৷ এছাড়া বিশেষ ভোগ হিসেবে আমের রস ক্ষীরের সঙ্গে মিশিয়ে তৈরি করা হয়। এর পাশাপাশি, নবদ্বীপের দইও নিবেদন করা হয় প্রভুকে। সব শেষে দেওয়া হয় সাজানো পান ৷  ‘বিষ্ণুপ্রিয়া প্রাণধন’ সারা বছরের মধ্যে ঠিক একটি দিন নবদ্বীপের মানুষের চোখে জামাই হিসেবেই আদর পেয়ে থাকেন ৷

বিষ্ণুপ্রিয়া দেবীর ভাইয়ের উত্তরপুরুষদের বক্তব্য, “ষষ্ঠীদাস গোস্বামীর আমল থেকে জামাইষষ্ঠী পালন শুরু হয়েছিল মহাপ্রভু মন্দিরে। ষষ্ঠীদাস ছিলেন বিষ্ণুপ্রিয়া দেবীর ভাই মাধবাচার্যের অধস্তন তৃতীয় পুরুষ। অর্থাৎ প্রায় ৩৫০ বছর ধরে চলে আসছে এই প্রথা।” অন্য কোথাও মহাপ্রভুকে এভাবে সেবা করা হয় না, এমনই দাবি মহাপ্রভু মন্দিরের পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সেবায়েতদের।

নবদ্বীপে যেমন চৈতন্যদেব, তেমনই শান্তিপুরের মানুষদের কাছে আজকের জামাইষষ্ঠীর মূল আকর্ষণ শ্রীরাধারমণকে ঘিরে।

শান্তিপুরের বড় গোস্বামী বাড়ির তথ্য অনুযায়ী, রাস উৎসবের পুরোধা শ্রীরাধারমন জিউ ৪০০ বছর আগে যখন শান্তিপুরেথ গোস্বামী বাড়িতে আসেন, তখন তিনি ছিলেন একক। তার কয়েকবছর পর এই রাধারমন বিগ্রহের সঙ্গে অষ্টধাতু নির্মিত শ্রীমতি বিগ্রহ আসে। বড় গোস্বামী বাড়িতেই এই শ্রীমতি বিগ্রহ আসার পর সেই সময় রাধারমন শ্রীমতির যুগল মিলন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, যা অনেকটা লৌকিক বিবাহের মাত্রা পেয়েছিল। সেই থেকেই বড় গোস্বামী বাড়ির ওই অংশে অর্থাৎ “চার ঘরে” অংশে প্রতিবছর জামাইষষ্ঠীতে শ্রী রাধারমন শ্রীমতিকে নিয়ে যাওয়া হত। কিন্তু বর্তমানে বড় গোস্বামী বাড়ির  মন্দিরেই পালিত হয় জামাইষষ্ঠী।

এদিন চার ঘরে বংশের কূলবধূরা এসে রাধারমনকে পাঁচ ফল, পাঁচ রকম মিষ্টি ইত্যাদি দিয়ে ভোগ নিবেদন করেন। এর পাশাপাশি, জামাইষষ্ঠীর যা যা রীতি সবই পালন করা হয়। ষষ্ঠীর পাখার বাতাস থেকে শুরু করে দুপুরে পঞ্চব্যঞ্জন ভোগ সবই আয়োজন করা হয়।

spot_img
spot_img

সবাই যা পড়ছেন

spot_img