মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে হঠাৎ শোনা গেল ইস্তফার কথা, যা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে তৈরি হয়েছে জল্পনা। আর জি কর হাসপাতালে চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় রাজ্যজুড়ে তুমুল বিক্ষোভ-প্রতিবাদের মোকাবিলায় রাজ্য সরকারের ব্যর্থতার মধ্যেই পদত্যাগের পথে হাঁটতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। জট না খুললে, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ইস্তফা দিয়ে কি পাল্টা চাপ তৈরির পথ বেছে নেবেন তিনি?
আর জি করের ঘটনার পর গত ৩২ দিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। এখনও পর্যন্ত এই অচলাবস্থা কাটার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বৃহস্পতিবার নবান্নে চিকিৎসকদের বৈঠকে ডেকেছিলেন মমতা। তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে ডাক্তাররা নবান্নে পৌঁছলেও, বৈঠকে রাজি হননি। নবান্নের বাইরেই তাঁরা বসে ছিলেন। বৈঠকের জন্য নবান্নের সভাঘরে দু’ঘণ্টার বেশি সময় বসে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
কিন্তু বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার পর নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করেন মমতা। সাংবাদিক বৈঠকের শেষদিকে তিনি বলেন, “আমি পদত্যাগ করতেও রাজি আছি। আমার মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ার চাই না।” এর পরেই তিনি বলেন, “কেউ কেউ বিচার চান না। তাঁরা চান চেয়ার।” মমতার এই বক্তব্যের পরই রাজ্যজুড়ে তুমুল রাজনৈতিক চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে।
ইতিমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুগামীরা দাবি করেছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে মমতা নিজে থেকে সরে যান এবং অভিষেককে মুখ্যমন্ত্রী পদে বসানো হোক। অভিষেককে মুখ্যমন্ত্রী পদে বসানোর এটাই সঠিক সময়, এমন দাবিও উঠেছে। তার কয়েকদিনের মধ্যে মমতার পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ নিয়ে নানা রকম
আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে গত মঙ্গলবার থেকে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে ধর্না চালিয়ে যাচ্ছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। এর আগেও পর পর দু’দিন আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে দু’টি প্রধান শর্ত বেঁধে দিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা। তাঁরা চেয়েছিলেন, এই বৈঠকের সরাসরি সম্প্রচার হোক এবং বৈঠকে তাঁদের ৩০ জন প্রতিনিধিকে থাকতে দিতে হবে। কিন্তু এই দুটি শর্তই মানতে অস্বীকার করে রাজ্য সরকার। আজ ৩০ জনের উপস্থিতির শর্ত মুখ্যমন্ত্রী মেনে নিলেও, সরাসরি সম্প্রচারে রাজি হননি তিনি, যার জেরে ভেস্তে যায় বৈঠক।
সাংবাদিক বৈঠকে মমতা বলেন, “তিন দিনেও সমাধান করতে পারলাম না। বাংলার মানুষের কাছে ক্ষমা চাইছি। যাঁরা নবান্নের সামনে এসেও বৈঠকে এলেন না, তাঁদের আমি ক্ষমা করলাম। আমাকে অনেক অসম্মান করা হয়েছে। আমার সরকারকে অসম্মান করা হয়েছে। অনেক ভুল বোঝাবুঝি, কুৎসা হয়েছে। সাধারণ মানুষ রং বোঝেনি। মানুষের স্বার্থে আমি পদত্যাগ করতে রাজি আছি। কিন্তু ওরা বিচার চায় না। চেয়ার চায়। আশা করি মানুষ সেটা বুঝবেন।”
মমতা আরও বলেন, অনেকেই বৈঠকে আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বাইরে থেকে সমঝোতা না করার নির্দেশ এসেছে। তাঁর কথায়, “অনেকে বৈঠক করতে আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বাইরে থেকে নির্দেশ আসছিল। দু’-তিন জন রাজি হননি। আমি মানুষের কাছে ক্ষমা চাইছি। ডাক্তারদের অনুরোধ করছি, কাজে ফিরুন।”
সরাসরি সম্প্রচার নিয়ে রাজ্যের আপত্তির কারণ ব্যাখ্যা করে মমতা বলেন, সুপ্রিম কোর্টে যেহেতু তিলোত্তমা মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে, তাই লাইভ স্ট্রিমিং সম্ভব নয়। যদিও আইন বিশেষজ্ঞরা মুখ্যমন্ত্রীর এই যুক্তি মানতে চাননি।
মমতা বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, সময় পেরিয়ে গিয়েছে। আমি যত দূর জানি, সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, রাজ্য পদক্ষেপ করলে তারা বাধা দেবে না। কিন্তু আমি কিছু করব না। বহু মানুষ চিকিৎসা পাচ্ছেন না। ইতিমধ্যে ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। সাত লক্ষ মানুষ বঞ্চিত হয়েছেন। আমার হৃদয় কাঁদছে। ওরা ছোট, আমি ওদের ক্ষমা করছি। বাংলার মানুষের কাছে আমি ক্ষমা চাইছি। তিন দিন চেষ্টা করেও সমাধান করতে পারলাম না।’’
মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, এর পরেও যদি জুনিয়র ডাক্তারেরা বৈঠক করতে চান, তবে মুখ্যসচিব এবং নবান্নের অন্যান্য আধিকারিক যেন বৈঠক করেন এবং তাঁদের বক্তব্য শোনেন। তবে তিনি আপাতত আর আলোচনায় থাকছেন না।