হোমPlot1গোবর্ধন পূজা কেন করা হয়, অন্নকূটের সঙ্গে এর কী সম্পর্ক?

গোবর্ধন পূজা কেন করা হয়, অন্নকূটের সঙ্গে এর কী সম্পর্ক?

গোবর্ধন পূজা কেন করা হয়, অন্নকূটের সঙ্গে এর কী সম্পর্ক?

ড.শুভদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
দীপাবলির পরের দিন সাড়ম্বরে পালিত হয় গোবর্ধন পূজা (Govardhan Puja)।  পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী, প্রাচীন বৃন্দাবনের বাসিন্দারা একসময় বৃষ্টির দেবতা ইন্দ্রের পূজা করতেন। কিন্তু কৃষ্ণ তাঁদের গোবর্ধন পর্বতের পুজো করতে শেখান। এতে ক্রুদ্ধ হয়ে, ইন্দ্র প্রবল দুর্যোগ সৃষ্টি করেন। ভক্তদের রক্ষা করার জন্য, শ্রীকৃষ্ণ তাঁর কনিষ্ঠ আঙুল দিয়ে গোবর্ধন পর্বত ধারণ করেন এবং সাত দিন ধরে সকলকে আশ্রয়দান করেন। ভগবান কৃষ্ণের নির্দেশে সেই যে পূজা – তারই পরম্পরা আজও বহন করে চলেছে গোবর্ধন পূজা।

এই পুজো উপলক্ষে বহু জায়গায় প্রচলিত রীতি অনুসারে, ভক্তরা তাঁদের অঙ্গনে গোবরের গোবর্ধনের একটি মূর্তি স্থাপন করেন। গোবর্ধনকে একজন শায়িত পুরুষ হিসেবে চিত্রিত করে নাভিতে একটি মাটির প্রদীপ স্থাপন করা হয়। পরে গোবর্ধনের উদ্দেশে বিভিন্ন দ্রব্য অর্পণ করা হয়। প্রদক্ষিণ করা হয় সাতবার। পুজো শেষে হয় প্রসাদ বিতরণ।

এই পুজো উপলক্ষে গরুকে দেবী লক্ষ্মীর রূপ মনে করে পুজো করা হয়। ৫৬ ধরনের নৈবেদ্য প্রস্তুত করে ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে তা নিবেদন করা হয়। এই পুজো উপলক্ষে পূজিত হন পৃথিবীতে অন্ন উৎপাদনে যাঁরা সাহায্য করেন সেই ইন্দ্র, অগ্নি, বৃক্ষ, জল – সবাই। দেবরাজ ইন্দ্রকেও পুজো করা হয় কারণ, ইন্দ্র শেষে কৃষ্ণের কাছে আত্মসমর্পণ করেন এবং কৃষ্ণকে পরমেশ্বর ভগবান হিসেবে মহিমান্বিত করেন। কোথাও কোথাও এই দিন বিশ্বকর্মারও পূজা করা হয়।

এই গোবর্ধন পুজোর সঙ্গেই জড়িয়ে আছে ‘অন্নকূট’ (Annakut)। ভক্তরা এই পুজোতে গোবর্ধন পর্বতের প্রতিরূপ তৈরি করেন অন্ন, মিষ্টান্নসহ বিভিন্ন দ্রব্য দিয়ে। নৈবেদ্য হিসেবে নিবেদিত এই অন্নের কূট অর্থাৎ পাহাড়ই হলো অন্নকূট।

এই গোবর্ধন পর্বতের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ভগবান রামেরও প্রসঙ্গ। রাম সেতু নির্মাণের সময় এই গোবর্ধন পর্বতকে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন হনুমান। হনুমান যখন গোবর্ধন পর্বত নিয়ে ব্রজ অঞ্চলের ওপর দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন তিনি সংবাদ পান যে – নল এবং নীলের নেতৃত্বে যে সেতু তৈরি করা হচ্ছে, সেখানে আর এই পর্বত ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। এই কারণে হনুমান গোবর্ধন পর্বতকে ব্রজে স্থাপন করেন। ভগবান রামচন্দ্রের সেবা করতে না পারার কারণে স্বাভাবিকভাবেই গোবর্ধন পর্বত দুঃখিত হন। দুঃখিত গোবর্ধনকে শেষ পর্যন্ত আশীর্বাদ করেন ভগবান রামচন্দ্র। সেই আশীর্বাদের ফলেই ভগবান কৃষ্ণের সঙ্গে সংযোগ ঘটে গোবর্ধন পর্বতের। তাই এই পূজা পর্বে ভগবান রামচন্দ্র এবং হনুমানের প্রতিও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা হয়।

এই গোবর্ধন পূজা উপলক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদিত হয় শ্রীমাধবেন্দ্রপুরীর প্রতিও। কারণ গোবর্ধন পাহাড়ের চূড়ায় তিনি স্ব-প্রকাশিত শ্রীগোপাল বিগ্রহকে পুনরায় স্থাপন করেছিলেন।

প্রচলিত বিশ্বাস, এই পুজো করলে ভগবান কৃষ্ণ প্রসন্ন হন। আর তাঁর কৃপাতেই ভক্ত লাভ করেন প্রার্থিত সবকিছুই – এমনকি ভগবান কৃষ্ণের শাশ্বত ধামও :
“জন্ম কর্ম চ মে দিব্যমেবং যো বেত্তি তত্ত্বতঃ।
ত্যক্তা দেহং পুনর্জন্ম নৈতি মামেতি সোঽর্জুন।।”

spot_img
spot_img

সবাই যা পড়ছেন

spot_img