অজয় বিশ্বাস
(অজয় বিশ্বাস আনন্দবাজার পত্রিকার প্রবীণ সাংবাদিক। চার দশকের বেশি সাংবাদিকতা জীবনে এক সময় রাজ্য তোলপাড় করা বহু খবর করেছেন। তা নিয়ে আন্দোলিত হয়েছে রাজ্য রাজনীতি। এবার তিনি কলম ধরলেন kolkatanewstoday.com-এর জন্যে। তবে খবর নয়, এবার তাঁর লেখায় উঠে আসবে মনোগ্রাহী, ভিন্নস্বাদের নানা রচনা।)
এবারে প্রাচ্যের নস্ট্রাদামুসের ভবিষ্যৎবাণীর কথা। ওড়িশার মানুষ তাঁকে এখন ওই নামেই চেনেন। তিনি শ্রীচৈতন্যের পরম ভক্ত বৈষ্ণব সাধক ও কবি অচ্যুতানন্দ দাস (Swami Achyutananda)।
এই মুহূর্তে ওড়িশা জুড়ে তোলপাড় চলছে সাধক অচ্যুতানন্দ দাসের ‘ভবিষ্য মালিকা’-র ভবিষ্যৎ বাণী নিয়ে। কী আছে সেই মালিকা বাণীতে? আজ থেকে ৬০০ বছর আগে রাজ্য থেকে দেশ, রাষ্ট্র থেকে আন্তর্জাতিক সর্বক্ষেত্রে তাঁর পিলে চমকে দেওয়া ভবিষ্যতবাণী!
পুরীর মন্দির সমুদ্রের জলোচ্ছ্বাসে ডুবে যাবে। এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ওড়িশার সাতটি জেলা তলিয়ে যাবে বঙ্গোপসাগরের জলোচ্ছ্বাসে। উত্তরাখণ্ডের চার ধাম তলিয়ে যাবে ভূমিধস আর জলোচ্ছ্বাসে! জোশিমঠ দিয়ে যার সূচনা হয়েছে বলে ওড়িশার ‘মালিকা’ বিশারদরা শোর মাচিয়ে দিচ্ছেন।
সামাজিক ভবিষ্যৎবাণীতেও চমকে দিয়েছেন যোগদ্রষ্টা অচ্যুতানন্দ। ৬০০ বছর আগেই তিনি ‘সেমসেক্স ম্যারেজে’র কথা বলে তেমনই চমকে দিয়েছেন। তেমনই বলেছেন সামাজিক ব্যভিচার দেশকালের গন্ডির কোনো বাঁধাই মানবে না।
পাঠক, নিজের চারপাশের সামাজিক পরিমন্ডলে তাকিয়ে দেখুন অচ্যুতানন্দের যোগদৃষ্টি কত অন্তর্ভেদি ছিল!
১৫০৫ সালে কটকের তিলকানায় জন্ম অচ্যুতানন্দের। তাঁর পিতামহ পুরীর জগন্নাথদেবের সেবায়েত ছিলেন।শ্রীচৈতন্যের কাছে মন্তর-দীক্ষা নিলেও তিনি ছিলেন উৎকলীয় বৈষ্ণব। তিনি ও তাঁর চার সখা মিলে লিখেছেন ‘মালিকা’ গ্রন্থমালা। অসংখ্য পদের মালা গাঁথা সেই গ্রন্থমালা রয়েছে পুরীর রাজকীয় গ্রন্থাগারে।
শুধু মালিকা নয়, সংস্কৃত বৈষ্ণব গ্রন্থাবলী তিনি ও তাঁর চার সখা সহজ ওড়িয়া ভাষায় অনুবাদ করেন। এর মধ্যে রয়েছে হরিবংশ, গুরুভক্তি গীতা, শূন্য পুরাণ-এর মতো অসংখ্য গ্রন্থ। তাঁর ‘শূন্য পুরাণ’-এ মহাপ্রভু জগন্নাথকে তিনি ‘শূন্য’ রূপেই দেখেছেন। কটকের কাছে নেমালিতে বটবৃক্ষের নীচে তাঁর সমাধিতে ভক্তের স্রোত বইছে জোশিমঠ কান্ডের পর।