ড. বিকাশ পাল, লন্ডন প্রবাসী অধ্যাপক-গবেষক
(লতা মঙ্গেশকরের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে লন্ডন প্রবাসী বিশিষ্ট অধ্যাপক ড. বিকাশ পাল এই অসাধারণ লেখাটি পাঠিয়েছেন আমাদের পোর্টালের জন্য।)
১৯৫০ দশকের শেষের দিক। ঋত্বিক ঘটক লিখলেন মধুমতী। বিমল রায় তখন বোম্বেতে পরিচালক হিসেবে বেশ নাম করেছেন। একের পর এক ছবি হিট। দো বিঘা জমিন দিয়ে ১৯৫২-৫৩ তে সলিল চৌধুরীর কেরিয়ার শুরুতে সাহায্য করেছেন। ঋত্বিকের বাংলায় মধুমতীর স্ক্রিপ্ট বেশ ভালো লাগল। ঠিক করলেন, হিন্দিতে অনুবাদ করে ছবি হবে। সেইমতই হল। ১৯৫৯-এ বক্স অফিস হিট। Best Direction, Best Story, Best Music Direction, First National Filmfare Award for Play Back Singing to Lataji, আরও কত স্বীকৃতি। গানের lyrics লিখছিলেন শৈলেন্দ্র, সলিলবাবু তাতে দিয়েছিলেন সুর।
দো বিঘা জমিনের মত আবার লতা-মান্না জুটি হিট। বৈজয়ন্তি মালা, দিলীপ কুমার তখন খ্যাতির শীর্ষে। একটা গান ছিল “দাইয়া রে, দাইয়া রে, ছোড় গ্যাও পাপি বিছুয়া”। সলিলবাবু ঐ গানটার মুখড়ার আগে একটা expression দিয়ে লতাজিকে শুরু করতে বলেছিলেন। লতাজি গাইলেন: ওয়ে, ওয়ে, ওয়ে, ওয়ে … দাইয়া রে, দাইয়া রে … একেবারে সলিলবাবুর মনের মত করে। effortlessly গেয়ে মুখড়া শেষ করে ফেললেন। এবার মান্নাবাবুর পালা। শুরু করতে পারলেন না। তাল ছুট হয়ে গেল। আবার লতাজি শুরুর থেকে শুরু করলেন। আবার তালের ঠেকা চলে গেল, মান্নাবাবু গাইতে পারলেন না।
সলিলবাবু, লতাজি চিন্তায় পড়লেন। মিউজিক থামিয়ে জানতে চাইলেন, মান্নাদা আপনার তো এরকম হয় না, কী হল? মান্নাবাবুর চোখে জল। সামলে নিয়ে বললেন। লতার expressionটা এত spontaneous, অথচ এত সুরে গাইছে যে, ওকেই শুনছি, খেয়াল থাকছে না যে, আমার পালা আসছে। ঠিক করতে পারছি না, শুনব না গাইব। কী করি বলুন তো বিমল দা? ৫ মিনিট সময় দাও সলিল, একটু emotionটা control করতে হবে।
তার পর গানের রেকর্ড হল ফ্লোরে। এই ছবির বাকিটা তো ইতিহাস। গানই আজও বাঁচিয়ে রেখেছে এই ছবিকে। মান্নাবাবুর পরের অনেক আলাপচারিতায় মধুমতীর ঐ গানের কথা বার বার এসেছে। মান্নাবাবুর লতাজির জন্য এতটাই শ্রদ্ধা ছিল।
রবিঠাকুর লিখেছিলেন, “তোমার শেষ নাই তাই শূন্য সেজে, শেষ করে দাও আপনাকে যে”। মা সরস্বতীর এই বরপুত্রী আজ তাঁর মায়ের সাথেই চলে গেলেন সেই সুরলোকে, যেখান থেকে একদিন এসেছিলেন।আর আমাদের জন্য রেখে গেলেন তাঁর সুরের সব সম্ভার। আজ এই দেওয়াতেই যেন তাঁর জীবনের সকল পরিপূর্ণতা।