দেবদাস কুণ্ডু
ভগবান ওপর থেকে নেমে এলেন নিচে
বললেন—কেমন আছেন জামাইবাবু?
আমি বলি, ভালো আছি।
ভালো তো থাকবেন।
এই কথা বলছেন কেন?
দিদির মতো স্ত্রী পেয়েছেন।
তাতে কি হয়েছে?
দিদির মতো মানুষ হয় নাকি?
আচ্ছা । কি রকম?
পেশেন্টদের কত ভালোবাসে জানেন?
বয়স্ক পেশেন্ট সব। নিজের অসুখ ঠিক মতো
বলতে পারে না। ডাক্তার রাউন্ডে আসলে
ডাক্তারের সঙ্গে ঘুরে ঘুরে সব পেশেন্টের
অসুখের কথা বলবে। বাড়ির লোক আসে না
দেখতে। কট্রাক্টর শিবু যা খাবার দেয়
ঐ খাবার কি মানুষে খেতে পারে? শিবুকে খুব বকে দিদি। বলে কি রে তুই?
শিবু বলে, আমি কি করবো দিদি? সরকার
যা টাকা দেয় তাতে এর চেয়ে ভালো খাবার
আমি দেই কি করে? দিদি তখন রতনকে
পাঠায় ডিম আনতে। রত্না আয়া ডিম সিদ্ধ করে
হিটারে। মাঝে মাঝে এইসব করে। আমি বড়
বড় হাসপাতাল ঘুরে এখানে ওয়ার্ড মাস্টার
হয়ে এসেছি, কত সিস্টার তো দেখলাম, দিদির
মতো কেউ না।
মেডিসিনের মেশিন চলছে, আমি সেদিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকি, সত্যি এমন স্ত্রী হয় না। প্রতিদিন সামান্য ব্যাপার নিয়ে রেখা যা করবে ভাবা যায় না। চিৎকার করবে। অশ্লীল কথা বলবে। কখনো শরীর ছুঁতে গেলে বলবে—
তুমি আমাকে একদম ছোঁবে না। অন্য মেয়ে
নিয়ে ফুর্তি করবে আবার সেই হাত দিয়ে আমাকে সোহাগ করবে? চলবে না এ সব। আমার ফ্ল্যাট থেকে চলে যাও। করো তো সামান্য ক্লার্কের চাকরি, তার আবার বড় বড় কথা। আমি তোমার পয়সায় খাই না। আমি চাকরি না করলে ঐ আট বাই আট ঘরে সারা
জীবন কাটাতে হতো। ফ্ল্যাটে যে আরামে
থাকছো আমি চাকরি করি বলে। আবার
আমাকে কড়া কড়া কথা? অসভ্য, ইতর—
ও জামাইবাবু ওষুধটা নিন।
শ্যামলদার কথায় হুঁশ এল। ওষুধ নিয়ে
বেরিয়ে এলাম রাস্তায়।
ছোট্ট অফিস। তার এক কোণায় বসে আছে
রবির বন্ধু সজল। সহকর্মী। রবি অসুস্থ। তার সিক লিভের দরখাস্ত দিতে এসেছে রেখা। সজল
বলল—কি করে জ্বর বাঁধালো? সাবধানে থাকে। কোনও নেশাভাঙ করে না। অফিস বাড়ি করে। কোনও ঝামেলায় যায় না। কখনো কাউকে মন্দ
কথা বলে না। ধার চাইলে টাকা দেয়। বিপদে
পড়লে এগিয়ে যায়।
আমাদের পিয়ন রঘুনাথের বাবা মারা গেছে। তাকে কাজ করতে এক হাজার টাকা দিয়েছে। বলেছে, লাগলে বলবি।
মাঝে মাঝে বলে—গরীব মানুষের বেঁচে থাকা
উচিত নয়। কি পায় ওরা? বলো তো? রাষ্ট্র ভোট
নেয়, দেয় না কিছুই। এমন স্বামী আপনি ভাগ্য
করে পেয়েছেন। ক’জন পায়?
সত্যি কথা। খাঁটি কথা। বাড়িতে একটা বউ
থাকতে অফিসে আবার একটা প্রেম করছে।
মেয়েটাকে একদিন দেখতে যায় না। নাতিটাকে
আদর করে না। সংসার খরচ দেবে হিসেব কষে।
কখনো কিছু দিতে বললে, বলবে, কি দরকার
অলংকারের?
আজ বিবাহ বার্ষিকী। কিছু দেবে
না? বিয়ের ২৫ বছর হয়ে গেছে, আর আদিখ্যেতার কি দরকার? অথচ রাতে শুয়ে
বুলু ছবি দেখে। মাঝে মাঝে একটা দুটো বন্ধু
জুটিয়ে মদ খাবে।
ঘরে মদ খেলে বাঁধা সে দেবে। তখন গলা দিয়ে নর্দমার গন্ধ উঠে আসে। লুংগি খুলে যায়। মদের নেশায় গালাগাল করতে শুরু করবে। ন্যাংটো হয়ে এঘর ওঘর করবে। অসহ্য।
রেখা বলল, এই রবিকে তো সে চেনে না। এ কোন রবি?
রবি ভাবছিল, এই রেখার কথা সে ভাবতে
পারে না। অফিসে এক রূপ, ঘরে অন্য রূপ। কেন?