সঞ্জয় বসাক, জগন্নাথ ভক্ত: জগন্নাথ মন্দিরের রান্নাঘরের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বহু বিস্ময়কর ঘটনাক্রম। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের দক্ষিণ-পূর্বে জগন্নাথের রসুইঘরের অবস্থান, যা রোসাঘর নামে পরিচিত। এটি পৃথিবীর সর্ববৃহৎ রন্ধনশালা।
![](https://kolkatanewstoday.com/wp-content/uploads/2020/06/a4ebd812-38be-4ba4-9aff-a28e3553abb6.jpg)
১) রহস্যময় পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের রান্নাঘরে বিবিধ দ্রব্য রান্না করার জন্য কোন বিদ্যুৎ বা যন্ত্র ব্যবহার করা হয় না। উন্মুক্ত কাঠের আগুনের উপর অনেকগুলো তেলের ল্যাম্প বা বাতি ঝুলিয়ে রাখা হয়। আর তার নিচেই সেবকরা রান্নার কাজ সম্পন্ন করেন।
![](https://kolkatanewstoday.com/wp-content/uploads/2020/06/04-chappan-bhog-1.jpg)
২) এ রান্নাঘরে এত দ্রুত রান্না করা হয় যে, শুধুমাত্র একদিনের প্রস্তুতিতে একসাথে প্রায় ১০ দশ হাজার লোক বসে প্রসাদ খেতে পারেন। আর এমনিতেই পাঁচ হাজারের উপর দর্শনার্থী প্রতিদিন প্রসাদ পেয়ে থাকেন।
৩) রান্নাঘরটিতে ৯টি ভাগ রয়েছে। যার ২টি ভাগ ২,৫০০ বর্গফুট করে এবং বাকি ৭টি ভাগ এই দুটির চেয়ে একটু ছোট হবে। এ রান্নাঘরে রয়েছে ৭৫২টি মাটির তৈরি উনুন, যার প্রত্যেকটি দৈর্ঘ্যে তিন বর্গফুট করে এবং উচ্চতায় প্রায় ৪ ফুটেরও বেশি।
![](https://kolkatanewstoday.com/wp-content/uploads/2020/06/Temple_Kitchen_of_Ananta_Basudeba_Temple_Bhubaneswar-1024x768.jpg)
৪) তবে অদ্ভূত ব্যাপার হল, রান্না করার সময় উনুনগুলিতে একটির উপর একটি মাটির পাত্র বসানো হয়। এভাবে ৭টি পাত্র থাকে। শুধুমাত্র এ পাত্রগুলির নিচে থাকা আগুনের মাধ্যমে উপরের পাত্র থেকে শুরু করে নিচের পাত্র পর্যন্ত রান্না অদ্ভূতভাবে সম্পন্ন হয়। অর্থাৎ সবচেয়ে উপরে থাকা পাত্রের রান্না আগে হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে বাকি পাত্রগুলির রান্না হয়। সবশেষে হয় একেবারে নীচের পাত্রটির রান্না।
![](https://kolkatanewstoday.com/wp-content/uploads/2020/06/432543.jpg)
৫) এই রান্নাঘরের সার্বিক তত্ত্বাবধানে নিয়োজিত রয়েছে এক হাজার সেবক। তার মধ্যে ৫০০ সেবক রয়েছে কেবলমাত্র উনুনে রান্না করার জন্য সহায়ককারী হিসেবে।
৬) এখানে কোন পুরোনো পাত্রে রান্না করা হয় না, প্রতিদিন নতুন নতুন মাটির পাত্রে রান্না করা হয়। তাই একদল খালি মাটি দিয়ে পাত্র বানায়, আরেক দল তা রান্নাঘরে নিয়ে যায়। আরেক দল পাত্রগুলো ধোয়ার কাজ করে। আরেকদল পাত্রে জল ভর্তি করে উনুনে নিয়ে যায়।
![](https://kolkatanewstoday.com/wp-content/uploads/2020/06/564464.jpg)
৭) তবে আরেকটি অদ্ভূত বিষয় হল, রান্না করার জন্য এখানে গঙ্গা আর সরস্বতী নদী রান্নাঘরের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে, যা বাইরে থেকে দেখা যায় না ।
৮) কেউ কেউ সবজি ধোয়ার কাজ করছে ,আবার কেউ কেউ সবজি কাটছে আর কেউ মশলা তৈরি করছে। রান্নাঘরে যে সেবকরা থাকেন, তাঁদের বয়স যখন ১২ বছর হয়, তখন থেকে তারা প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করে। এ ভাবে তারা নেমে পড়ে বংশানুক্রমে প্রাপ্ত নির্দিষ্ট সেবায়। সারাজীবন ধরে অর্থাৎ মৃত্যুর আগে পর্যন্ত এ কাজ করে থাকে ।
![](https://kolkatanewstoday.com/wp-content/uploads/2020/06/87686.jpg)
৯) এই রান্নাঘরে ১০০টির উপর ভোগের পদ রান্না করা হয়, যা দুটি ভাগে বিভক্ত। এ দুটি ভাগকে পাক্কা এবং সুক্কা নামে ডাকা হয়। পাক্কা বলা হয় সে খাবারগুলোকে, যেগুলো সেদ্ধ করা যেমন ডাল, চাল, খিচুরী এবং সমস্ত রকমের সবজি। অন্যদিকে সুক্কা বলা হয় বিস্কুট, মিষ্টি, আর বিভিন্ন ধরনের পিঠেকে।
১০) সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল, জগন্নাথের জন্য যে সমস্ত ফল ও সবজি ব্যবহার করা হয়, সেগুলো ২ হাজারের অধিক বছর ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। শুধুমাত্র স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত সবজি ও ফলই জগন্নাথের জন্য ব্যবহৃত হয়। অন্য কোন অঞ্চল থেকে উৎপাদিত দ্রব্য জগন্নাথের জন্য ব্যবহার করা হয় না।
জগন্নাথদেব আর লক্ষ্মী দেবীর কৃপায় ধন্য এই রান্না ঘর। তাই তো পুরীর এ রান্নাঘরকে অদ্ভূত রান্নাঘর বলেই অভিহিত করা হয়।