হোমফিচার২৪ ঘণ্টা জরুরি পরিষেবা দিয়েও কেন এত উপেক্ষা, প্রশ্ন বিদ্যুৎকর্মীদের

২৪ ঘণ্টা জরুরি পরিষেবা দিয়েও কেন এত উপেক্ষা, প্রশ্ন বিদ্যুৎকর্মীদের

২৪ ঘণ্টা জরুরি পরিষেবা দিয়েও কেন এত উপেক্ষা, প্রশ্ন বিদ্যুৎকর্মীদের

অরিজিৎ দত্ত

বিদ্যুৎ কর্মী। সরকার তথা সমাজের জরুরি পরিষেবায় নিয়োজিত এক অবহেলিত কর্মী। পুরো সমাজ ব্যবস্থা যে ভিতের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে ,তার আর এক নাম বিদ্যুৎ দপ্তর। আসলে মাটির নীচে নিজেকে অন্তরালে রেখে সুদৃশ্য অট্টালিকাসম এই সমাজের মূল কাঠামোকে ধরে সমাজের সব জরুরি পরিষেবাকে সচল রাখার আর এক নাম বিদ্যুৎ দপ্তর।

ঢক্কানিনাদে কোন আত্মপ্রচার নেই,নেই সমাজের কোন অংশ থেকে প্রাপ্ত প্রশংসাসূচক কোন বার্তা,নেই কাজের কোন সদর্থক মূল্যায়ন। শুধু আছে নীরবে জীবনের বিভিন্ন ঝুঁকি নিয়ে লাগাতার বিদ্যুৎ সরবরাহের মাধ্যমে এই সমাজের প্রতিটি স্তম্ভকে সোজাভাবে শক্ত করে ধরে রাখা। স্তম্ভগুলি চোখে পড়ে,ঝাঁ চকচকে অট্টালিকার সৌন্দর্য্য মানুষের প্রশংসামূলক দৃষ্টি আকর্ষণ করে , অথচ তাকে দিনের পর দিন বিরামহীনভাবে যে ধরে রেখেছে, সমাজে তার কোনও সমাদর হয় না।

আজ চিকিৎসা, জল সরবরাহ,বৈদ্যুতিন মাধ্যম ইত্যাদি সহ বিভিন্ন জরুরি পরিষেবা তাকিয়ে আছে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের দিকে। এই বিদ্যুৎ পরিষেবায় সামান্যতম যদি ত্রুটি ঘটে , আমাদের অন্যান্য পরিষেবা হুড়মুড়িয়ে ভেঙ্গে পড়বে। চিকিৎসা ব্যাবস্থা স্তব্ধ হয়ে যাবে,যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়বে, খাদ্যদ্রব্য রক্ষণাবেক্ষণ ও সরবরাহে বিঘ্ন ঘটবে, প্রশাসনিক কাজকর্ম লাটে উঠবে,বৈদ্যুতিন সংবাদ মাধ্যমগুলি অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে। জরুরি পরিষেবাসহ পুরো সমাজব্যবস্থা ডুবে যাবে এক গভীর অতলে। এক অভাবনীয় রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক সঙ্কটে নিমগ্ন হবে এই দেশ তথা পৃথিবী। করোনার বিরুদ্ধে সকল লড়াই থেমে যাবে, মুমূর্ষু রুগীদের লড়াই দীর্ঘস্থায়ী হবে না। আধুনিক সমাজব্যবস্থা ফিরে যাবে আবার সেই পুরনো প্রস্তর যুগে।

আমরা এ-সবই জানি। আর এও জানি বিদ্যুৎ দপ্তরকে বা তাদের কর্মীদের প্রশংসা না করে অবজ্ঞা,অসম্মান বা গুরুত্বহীন করে যদি এই সমাজে রাখাও যায়, তবুও তারা তাদের কর্তব্যে অবিচল থেকে এই পৃথিবীকে আধুনিক থেকে আরও আধুনিক করার প্রয়াসে নিরলস ব্রতীই থাকবে। আজ অনেক সমাজবন্ধুর আত্মত্যাগের কথা আমরা গর্বের সাথে উল্লেখ করি এবং যা বাস্তবিকই সত্য, কিন্তু চাঁদ সওদাগরের বাঁ হাতে মনসা পূজা দেবার মত সমাজের কোন অংশ থেকেই সে সরকার হোক বা সাধারণ জনসাধারণ হোক , কেউই এই অধম বিদ্যুৎ কর্মীদের দিকে একটু ভালবাসার দৃষ্টি নিক্ষেপ করে না।

পরিবারকে ছেড়ে অনেক সময়ই দীর্ঘদিন বাইরে একা থেকেও শুধু নিজের কর্তব্যে অবিচল থেকে সমাজকে সচল রাখার দায়িত্ব পালন করে চলে এই বিদ্যুৎ কর্মীরাই। প্রদীপের নীচে অন্ধকারের মতই এই বিদ্যুৎকর্মীরা বিভিন্ন উৎসব,সামাজিক অনুষ্ঠানে আলোর রোশনাই চারিদিকে ছড়িয়ে নিজেরা পরিবার-পরিজন ছেড়ে নিরলস ভাবে তাদের দপ্তরে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং বণ্টনে নিজেদের সমাজসেবায় নিয়োজিত রাখে।

কিন্তু সমাজের একজনও কি সেই আনন্দমুহূর্তে একবার তাদের আনন্দের কারিগর বিদ্যুৎ কর্মীদের কথা স্মরণ করে? তারা ভাবে কি এই বিদ্যুৎ কর্মীদের পরিবারের কথা? অথচ সমাজের অন্য বেশ কিছু জরুরি পরিষেবায় নিয়োজিত সমাজবন্ধুদের কথা, তাদের অবদানের কথা আমরা ন্যায্যতই বিভিন্ন সময়ে শ্রদ্ধায় স্মরণ করি এবং তাদের মধ্যে বিদ্যুৎ কর্মীরাও করেন।

আজ করোনা ভাইরাস সংক্রমণের বিরুদ্ধে ডাক্তার, পুলিশকর্মী,প্রশাসন, বৈদ্যুতিন মাধ্যম এবং আরো অনেকে লড়াই করে চলেছেন, তা আমরা প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গায় দেখতে বা শুনতে পাই কিন্তু কোথাও কি কেউ দেখেছেন যে, কি সরকার,কি প্রশাসন, কি বৈদ্যুতিন মাধ্যম বা কি সাধারণ জনসাধারণের মুখে এই বিদ্যুৎ কর্মীদের নিরলস লড়াইয়ের সামান্যতম স্বীকৃতি। না পাবেন না। তারা নামেই জরুরি পরিষেবায় নিয়োজিত কর্মী, আসলে তারা মাটির নীচে চাপিয়ে রাখা সমাজের উপরসারির অট্টালিকার লুক্কায়িত ভিত, যা কোনওদিনই সমাজের বিভিন্ন অংশের চাপে মাটির নীচ থেকে মাথা উঁচু করে তাদের মুখ দেখাতে পারবে না। তবুও আমাদের শপথ আমরা আমাদের কর্তব্য থেকে কোনদিন বিচ্যুত হব না।

বাইরের সম্মান বা প্রশংসা নয় আমাদের আত্মমর্যাদা, আমাদের আত্মসম্মান, আমাদের সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ আমাদের আগামী দিনে চলার পথে, উন্নত সমাজ গঠনের পথে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবে।

(অরিজিৎ দত্ত রাজ্য বিদ্যুৎ দফতরের‍ আইএনটিটিইউসি ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক)

spot_img
spot_img

সবাই যা পড়ছেন

spot_img