বিশ্বরূপ মুখোপাধ্যায়
ছোট্ট কৌশিকীর মন ভালো নেই । আজ দুমাস হয়ে গেল স্কুলে যেতে পারছে না, কি এক দুষ্টু করোনা ভাইরাস, তার জন্য । বন্ধুদের সঙ্গে কত্তদিন দেখা হয় নি । মায়ের সেলফোন থেকে মাঝে মাঝে কথা হয় ৠতমা, তিস্তাদের সঙ্গে । কৌশিকীদের নেহাৎই ছোট ক্লাস, তাই অনলাইন ক্লাস হচ্ছে না । পাশের ফ্ল্যাটের নীলদা’দের হচ্ছে । ওই বারান্দা থেকে যেটুকু নীলদা’র সঙ্গে কথা হয়। তবে আজ সারা সকাল কৌশিকী ব্যস্ত দুই টুনটুনিকে নিয়ে । মায়ের কাছ থেকে পাখিদুটোর নাম জেনেছে । এই আবাসনে ওদের ফ্ল্যাটের সামনের গাছে দুটো টুনটুনি বেজায় ব্যস্ত বাসা তৈরি করতে । কতদিন লাগবে ওদের বাসা তৈরি হতে? মা তো বললেন, ‘ কাল সকালেই দেখবি ওদের বাসা রেডি ।’ কৌশিকীর তর সইছে না ।
আজ সকাল থেকে কৌশিকীর ফের মনখারাপ । ওদিকের ব্লকের ভোম্বলদাদুকে পুলিশের গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স হাসপাতালে নিয়ে গেল । দারুণ মানুষ ভোম্বলদাদু। এই আবাসনের সব বাচ্চার সঙ্গেই ছিল তাঁর বন্ধুত্ব । বাবা কাকে যেন চাপাস্বরে বলছিলেন ভোম্বলদাদুর কন্ডিশন সিরিয়াস । তার মানে ওরা আর কখনও ভোম্বলদাদুকে দেখতে পাবে না? কৌশিকীর কান্না পায় ।
বাবার কাছে শুনল ,ওদের এখানকার চার-পাঁচটা আবাসন ঠিক করেছে চাঁদা তুলে আপাতত কয়েক দিন এলাকার গরিব মানুষদের খাওয়ানো হবে । এই দুমাস এ কৌশিকীর আজ একটু আনন্দ হল । বাবা ও মায়ের কাছ থেকে পাঁচ-দশ টাকার যে কয়েন উপহার পায় তা একটা ভাঁড়ে জমায় আর হিসেবও রাখে । এ পর্যন্ত ৬৩০ টাকা হয়েছে । আবাসনের নিচে আট- দশ জন মানুষের জটলা । চাঁদা তুলছে । কৌশিকী ভাঁড়টা বাবা’র হাতে তুলে দিয়ে বলল, ৬৩০ টাকা জমেছে । এটা ওঁদের দিয়ে দাও। বাবা ওকে কি বলবেন ভেবে পাচ্ছেন না । আনন্দে জড়িয়ে ধরলেন ।
বারান্দায় ছোট্ট কৌশিকী ভাবতে বসল .. এরকম কটা ভাঁড় হলে ওই গরিব মানুষগুলো দুবেলা খেতে পাবে । আর ওই দুষ্টু অসুখটাও চলে যাবে..