অমিত মিত্র : করোনার গ্রাসে চলে যাওয়া এই পৃথিবী আজ গৃহবন্দি। দিনের পর দিন ঘরবন্দি মানুষ। এই পরিস্থিতিতে দেখা হচ্ছে না আপনার মনের মানুষের সঙ্গে। কিংবা কর্মসূত্রে অথবা অন্য কোনও কারণে দীর্ঘদিনের অদেখা থেকে যাচ্ছে একে অপরের। কিন্তু প্রিয়জন দূরে থাকলেও সেই লং ডিসট্যান্স সম্পর্ক প্রগাঢ় হতে পারে শুধুমাত্র কয়েকটা কৌশলেই।
নব্বই দশকের শেষ ভাগে বাংলা ব্যান্ডের দাপটে যখন আচ্ছন্ন তরুণ প্রজন্ম, তখন মুখে মুখে ফিরত বিখ্যাত এক ব্যান্ডের গানের কলি- ‘‘ভালোবাসা মানে দূরভাষ নিশ্চুপে শুনে ফেলে অনুভূতির হাসি।’’ দেড় দশকের বেশি সময় পেরিয়ে আজ প্রেমিক-প্রেমিকাদের জীবনে এর চেয়ে অমোঘ সত্য বোধ হয় আর কিছু নেই। প্রেম বলে কয়ে আসে না। ফলে দূরে থাকা মানুষটাকে আপন করে নিতে প্রথম প্রথম সমস্যা হয় না। প্রিয়জন কর্মসূত্রে দূরে চলে গেলেও নাছোড় জুড়ে থাকাটা থাকেই। তবে সমস্যা শুরু হয় ক্রমে। সমস্যার মূল কারণ অদর্শন। সোশ্যাল মিডিয়ায় কথা বলা যায়, স্পর্শ তো করা যায় না। এই অসুবিধের সঙ্গেই যুক্ত হয় সন্দেহ। কফিনে পেরেক ঠুকে দেয় কারণে-অকারণে অবিশ্বাস। কিন্তু লক্ষ যোজন দূরে থেকেও কি ভাল থাকা যায় না? মুঠোফোনে শ্বাসের শব্দটুকু শুনেও কি মনে হতে পারে না পাশাপাশি আছি? সবটাই সম্ভব। দূরে থেকেও অনেক বেশি করে কাছে থাকা যায়। শুধু মেনে চলতে হবে কয়েকটি বিষয়।
যোগাযোগ- এই সম্পর্কগুলো যেহেতু দু’জনের দেখা হওয়ার সুযোগ কম থাকে তাই ইমোশনাল কানেকশন বজায় রাখতে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা প্রয়োজন। রোজ অনেকক্ষণ বা গভীর ভাবে কথা বলা সম্ভব না হলেও নিয়মিত কথা অবশ্যই বলুন। এতে আপনার সঙ্গী অনুভব করবেন হাজার ব্যস্ততার মধ্যেও উনি আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। চেষ্টা করবেন দিনের শেষে কথা বলতে। তাহলে সারাদিনের স্ট্রেস দূর হবে।
ছোটখাট বিষয়- কথা বলার সময় জীবনের ছোটখাট বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করুন। শরীর কেমন আছে, কী খেলেন, বাজার করেছেন কিনা এ সব ছোটখাট বিষয়ে শেয়ার করলে সম্পর্ক গভীরতা পায়।
ভাললাগাকে গুরুত্ব দিন- কথা বলার সময় একে অপরের ভাললাগা নিয়ে আলোচনা করুন। কী ভাবে একে অপরকে স্পেশাল অনুভব করাতে পারেন, তার চেষ্টা করুন।
কমিটমেন্ট- একে অপরের প্রতি কমিটেড থাকুন। যে কোনও সম্পর্কের মূল কমিটমেন্ট। দূরে থাকছেন বলে নিজের দায়বদ্ধতা ভুলে যাবেন না। মনে রাখবেন দূরে থাকলে দায়বদ্ধতা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
সহযোগিতা- জীবনের কঠিন সময় সম্পর্কের গভীরতা বাড়ায়। দূরে থাকলেও যতটা সমস্যার সময় একে অপরের পাশে দাঁড়ান, মানসিক জোর বাড়ানোর চেষ্টা করুন। এতে সম্পর্ক সুন্দর ও গভীর হবে।
বিশ্বাস- একে অপরের প্রতি বিশ্বাস রাখুন। কোনওভাবেই বিশ্বাস ভাঙবেন না। অন্যজনকে সন্দেহও করবেন না। মনে রাখবেন, সম্পর্কে যখন দূরত্ব বাধা তখন বিশ্বাসই মূলমন্ত্র।
তবে এসবের পরেও, সময়ের ব্যবধানকে অস্বীকার করার উপায় তো আমাদের নেই। এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত সেতু বানানোর মূল উপকরণ তাই অনেকখানি অ্যাডজাস্টমেন্ট। এখানে যখন গোধূলির আলো, ওখানে হয়ত শেষ রাত্তির। তাই এক শহরে থাকলে, যতই কাজের চাপ থাকুক, রাত এগারোটায় ফিরেও হয়ত ওকে দেখে শান্তি পেতেন, সেটি এ অবস্থায় ঘটবার জো নেই। তাই ভার্চুয়াল দেখা করার সময় বের করতে দু’জনের পক্ষে সম্ভব এমন একটা সময় চুরি করে নিতেই হবে। তবুও তো অনেক ভাল। একই বিছানায় পাশাপাশি উলটোমুখী হয়ে শুয়ে, মনের অনেক অনেক ভিতরের ঘুপচিতে ‘তারারাও যত আলোকবর্ষ দূরে, তারও দূরে তুমি আর আমি যাই ক্রমে সরে সরে’ পারফর্ম করার থেকে, দুই প্রান্তের বাধা টপকানো অনেক সোজা। কারণ আন্তর্জালের এই মুঠোফোনে বন্দি দুনিয়ায় আপনি চাইলে, বিরহ বলে আসলে কিচ্ছুটি নেই। শুধু পালা করে ভাগ করে নিন যন্ত্রণা। তারই মধ্যে তো লুকিয়ে জীবন ভাগ করার আনন্দ।