হোমশাশ্বত_বাণীস্বামী রামকৃষ্ণানন্দকে লিখিত

স্বামী রামকৃষ্ণানন্দকে লিখিত

স্বামী রামকৃষ্ণানন্দকে লিখিত

Lake Lucerne, সুইজরলন্ড

২৩ আগস্ট, ১৮৯৬.

কল্যাণবরেষু

অদ্য রামদুলালবাবুর এক পত্র পাইলাম । তাহাতে তিনি লিখিতেছেন যে, দক্ষিণেশ্বরের মহোৎসবে অনেক বেশ্যা যাইয়া থাকে এবং সেজন্য অনেক ভদ্রলোকের তথায় যাইবার ইচ্ছা কম হইতেছে। পুনশ্চ-তাঁহার মতে পুরুষদিগের একদিন এবং মেয়েদের আর একদিন হওয়া উচিত। তদ্বিষয়ে আমার বিচার এইঃ

১। বেশ্যারা যদি দক্ষিণেশ্বরের মহাতীর্থে যাইতে না পায় তো কোথায় যাইবে? পাপীদের জন্য প্রভুর বিশেষ প্রকাশ, পুণ্যবানের জন্য তত নহে ।

২। মেয়েপুরুষ-ভেদাভেদ, জাতিভেদ, ধনভেদ, বিদ্যাভেদ ইত্যাদি নরক-দ্বাররূপ বহুভেদ সংসারের মধ্যেই থাকুক । পবিত্র তীর্থস্থলে ঐরূপ ভেদ যদি হয়, তাহা হইলে তীর্থ আর নরকে ভেদ কি?

৩। আমাদের মহা জগন্নাথপুরী-যথায় পাপী-অপাপী, সাধু-অসাধু, আবাল বৃদ্ধবনিতা নরনারী সকলের সমান অধিকার। বৎসরের মধ্যে একদিন অন্ততঃ সহস্র সহস্র নরনারী পাপবুদ্ধি ও ভেদবুদ্ধির হস্ত হইতে নিস্তার পাইয়া হরিনাম করে ও শোনে, ইহাই পরম মঙ্গল ।

৪। যদি তীর্থস্থলেও লোকের পাপবৃত্তি একদিনের জন্য সঙ্কুচিত না হয়, তাহা তোমাদের দোষ, তাহাদের নহে । এমন মহা ধর্মস্রোত তোল যে, যে জীব তাহার নিকট আসবে, সে-ই ভেসে যাক।

৫। যাহারা ঠাকুরঘরে গিয়াও ঐ বেশ্যা, ঐ নীচ জাতি, ঐ গরিব, ঐ ছোটলোক ভাবে, তাহাদের (অর্থাৎ যাহাদের তোমরা ভদ্রলোক বল) সংখ্যা যতই কম হয়, ততই মঙ্গল। যাহারা ভক্তের জাতি বা যোনি বা ব্যবসায় দেখে, তাহারা আমাদের ঠাকুরকে কি বুঝিবে? প্রভুর কাছে প্রার্থনা করি যে, শত শত বেশ্যা আসুক তাঁর পায়ে মাথা নোয়াতে, বরং একজনও ভদ্রলোক না আসে নাই আসুক। বেশ্যা আসুক, মাতাল আসুক, চোর ডাকাত সকলে আসুক তাঁর অবারিত দ্বার । ‘It is easier for a camel to pass through the eye of a needle than for a rich man to enter the kingdom of God.’ এ সকল নিষ্ঠুর রাক্ষসীভাব মনেও স্থান দিবে না ।

৬। তবে কতকটা সামাজিক সাবধানতা চাই-সেটা কি প্রকারে করিতে হইবে? জনকতক লোক (বৃদ্ধ হইলেই ভাল হয়) ছড়িদারের কার্য ঐ দিনের জন্য লইবেন। তাঁহারা মহোৎসবস্থলে ঘুরিয়া ঘুরিয়া বেড়াইবেন, কোন পুরুষ বা স্ত্রীকে কদাচার বা কুকথা ইত্যাদিতে নিযুক্ত দেখিলে তাহাদিগকে উদ্যান হইতে তৎক্ষণাৎ বাহির করিয়া দিবেন । কিন্তু যতক্ষণ তাহারা ভালমানুষের মতো ব্যবহার করে ততক্ষণ তারা ভক্ত ও পূজ্য – মেয়েই হউক আর পুরুষই হউক, গৃহস্থ হউক বা অসতী হউক ।

আমি এক্ষণে সুইজরলন্ডে ভ্রমণ করিতেছি-শীঘ্র জার্মানিতে যাইব অধ্যাপক ডয়সনের সহিত দেখা করিতে । তথা হইতে ইংলন্ডে প্রত্যাগমন ২৩/২৪ সেপ্টেম্বর নাগাত এবং আগামী শীতে দেশে প্রত্যাবর্তন ।

আমার ভালবাসা জানিবে ও সকলকে জানাইবে ।

ইতি বিবেকানন্দ ।।

পত্রাবলী-স্বামীজীর বাণী ও রচনা ।।

সংগৃহীত

spot_img
spot_img

সবাই যা পড়ছেন

spot_img