ক্যান্সারের গবেষণায় যুগান্তকারী সাফল্য মিলেছে বলে দাবি করল মুম্বইয়ের টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতাল। সংস্থার গবেষক-চিকিসকদের দাবি, মাত্র ১০০ টাকার ট্যাবলেটেই ক্যান্সারের প্রতিরোধ করা যাবে। সংস্থার গবেষক এবং চিকিৎসকেরা গত ১০ বছর ধরে এই ওষুধ আবিষ্কারের জন্য কাজ করেছেন বলে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন এই গবেষক দলের সদস্য, টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালের সিনিয়র ক্যান্সার সার্জেন রাজেন্দ্র অচ্যুত বড়ভে।
তিনি জানান, দ্বিতীয় বার ক্যান্সারের আক্রমণ প্রতিরোধ করতে তাঁরা একটি ওষুধ আবিষ্কার করেছেন। এই ওষুধ রেডিয়েশন এবং কেমোথেরাপির মতো চিকিৎসার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও ৫০ শতাংশ কমিয়ে দেবে।
বাড়ভে জানিয়েছেন, দেশের ফুড সেফটি ও সিকিউরিটি অথরিটির কাছে এই ওষুধের জন্য আবেদন জানানো হয়েছে। তাদের সবুজ সঙ্কেত মিললে, জুন-জুলাই মাসে এই ওষুধ বাজারে ছাড়া হবে। এর নাম ‘আর+সিইউ’ (R+CU), রেসভেরাট্রোল ও কপারের মিশ্রণ। বর্তমানে ক্যান্সারের চিকিৎসায় লক্ষ লক্ষ খরচ হয়। এই ওষুধ বাজারে এলে, সেই খরচ বহুগুণ কমে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
দীর্ঘ গবেষণায় বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, দুটি কারণে ক্যান্সারের কোষ সহজে ধ্বংস হয় না। প্রথমত, ক্যান্সার বা টিউমার কোষ খুব দ্রুত বিভাজিত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। দ্বিতীয় কারণ হল, কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপি দিয়ে ক্যান্সার কোষ পুড়িয়ে দিলেও, তার অবশিষ্টাংশ থেকে নতুন করে কিছু ফ্রি রেডিক্যালস বের হতে থাকে। এই ধরনের উপাদানের নাম ক্রোমাটিন। মৃতপ্রায় ক্যানসার কোষের ক্রোমোজোমের অংশ থেকে এই ক্রোমাটিন বের হয় যা আশপাশের সুস্থ কোষগুলিকে বিষাক্ত করে তোলে। তাই দেখা যায়, ক্যানসার কোষ কেমো দিয়ে রেডিও তরঙ্গ দিয়ে নষ্ট করে ফেলা হলেও সেখানে ফের ক্যানসার কোষ গজিয়ে ওঠে। তাই বার বার রোগীকে কেমোথেরাপি দিতে হয়।
গবেষকদের মতে, এই ফ্রি রেডিক্যালস ক্রোমাটিন কোষের ক্রোমোজোমের অংশ। তাই তাদের মধ্যে ডিএনএ (জিন) এবং প্রোটিন একসঙ্গে থাকে। একদিকে ক্যানসার কোষের প্রোটিন সুস্থ কোষগুলিকে সংক্রমিত করতে থাকে, অন্যদিকে জিনগত উপাদান ক্রমেই বিভাজিত হয়ে এক কোষ থেকে অন্য কোষে ক্যান্সারকে বয়ে নিয়ে যেতে শুরু করে। শুধু ক্যানসার নয়, এই ক্রোমাটিন অটোইমিউন ডিজিজ, ইনফ্ল্যামেশন বা প্রদাহ জনিত রোগের কারণও হয়ে ওঠে। তাই কেমোথেরাপি দেওয়ার পরেও নানারকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে দেখা যায়।
ডক্টর রাজেন্দ্র বলছেন, R+CU এক ধরনের প্রি-অক্সিডেন্ট ট্যাবলেট। ওষুধটি খেলে তা শরীরের রক্তরসের সঙ্গে মিশে গিয়ে অক্সিজেন তৈরি করতে শুরু করে দেবে। এই অক্সিজেন ক্যান্সার প্রোটিনকে পুরোপুরি বিনাশ করতে থাকবে। ফলে নতুন করে আর ক্যানসার কোষ তৈরি হবে না। এমনকী কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপি দেওয়ার পরে যে টক্সিন তৈরি হয় শরীরে, তাও নষ্ট করতে পারবে ওই অক্সিজেন র্যাডিকেল। এতে ক্যান্সারের বার বার ফিরে আসার সম্ভাবনাটাই নষ্ট হয়ে যাবে।
টাটার গবেষকের কথায়, “গবেষণার জন্য ইঁদুরের মধ্যে মানুষের ক্যান্সার কোষ ঢোকানো হয়েছিল। এই কোষ তাদের মধ্যে একটি টিউমার তৈরি করে। তখন ইঁদুরগুলিকে রেডিয়েশন থেরাপি, কেমোথেরাপি ও অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়। দেখা গিয়েছে, এই ক্যান্সার কোষগুলি মারা গেলে, সেগুলি ক্রোমাটিন নামক ক্ষুদ্র কণায় টুকরো হয়। এই কণাগুলি রক্তের মাধ্যমে শরীরের অন্য অংশে যেতে পারে এবং সুস্থ কোষকে ক্যান্সারে পরিণত করতে পারে।”