জনসেবার উদ্দেশ্য যদি শুধু অসহায় মানুষের দুঃখে সহায়তা ও সহানুভূতি বোঝায় তাহলে এর মূল উদ্দেশ্যই ব্যাহত হবে। ভারতে পদদলিত, নিপীড়িত জনসাধারণ তখন প্রায় পশুবৎ জীবনযাপন করছিল। সুতরাং তাদের মধ্যে সেদিন সেবামূলক কাজের খুবই প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সবচেয়ে বড় প্রয়োজন ছিল, জনসাধারণের লুপ্ত মনুষ্যত্বের পুনরুদ্ধার। এরই জন্য শিক্ষা একটি বড় হাতিয়ার। অবশ্য এ-শিক্ষা পরীক্ষা-পাসের জন্য যান্ত্রিক শিক্ষা নয়, নিজের পায়ে দাঁড়াবার শিক্ষা, নিজের হৃত ব্যক্তিত্ব ফিরে পাবার শিক্ষা।
সমস্ত ভারতবাসী যদি পরস্পরকে জাতি-বর্ণ- ধর্ম-নির্বিশেষে ভাই বলে গ্রহণ করতে পারে, তবে জনজীবনের উন্নয়নে আর কোন দুঃসাধ্য সমস্যা থাকে না। তাই একদিকে প্রয়োজন সাধারণ শিক্ষার প্রসার, অন্যদিকে আবশ্যক ধর্মশিক্ষার বিস্তার। ভারতীয় জীবনের মূলভিত্তি যেহেতু ধর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত, সেজন্য ধর্মকে সমস্ত জাগরণের কেন্দ্রে রেখে কাজে অগ্রসর হতে হবে, সেইসঙ্গে নিতে হবে জনকল্যাণের নানা প্রকল্প। দুঃখপীড়িত মানুষের দুঃখ দূর করা, অন্নহীনকে অন্নদান, বস্ত্রহীনকে বস্ত্রদান, নিরক্ষরকে সাক্ষর করে তোলা, মহামারীগ্রস্তকে চিকিৎসা ও পরিচর্যা করা—সবই এই জনসেবার লক্ষ্য হতে পারে। আর জনকল্যাণ মানে জনগণকে দয়া নয়, ঈশ্বরবুদ্ধিতে পূজা, নররূপী নারায়ণের পূজা। এই পূজায় পূজক এবং পূজিত উভয়েরই কল্যাণ হয়।
ভারতীয় অধ্যাত্মবোধে গণচেতনাকে
পরিপুষ্ট করা একান্ত প্রয়োজন।
জনকল্যাণার্থে নিবেদিত,
স্বামী নিয়তাত্মানন্দ।