হোমঅন্যান্য"কাজ আমার কাছে কাজ নয়, নৈবেদ্য"

“কাজ আমার কাছে কাজ নয়, নৈবেদ্য”

“কাজ আমার কাছে কাজ নয়, নৈবেদ্য”

রামকৃষ্ণ মিশনের সাধুরা কি করেন ?

তাঁরা ঈশ্বরলাভের জন্য ঘর-সংসার ছেড়েছেন. কিন্তু তাঁরা কেউ টাইপ করছেন, কেউ স্কুলে পড়াচ্ছেন, কেউ বাগানে কাজ করছেন, কেউ হাসপাতালে ওষুধ দিচ্ছেন, আরও কত সব করছেন. তাহলে সাধারণ গৃহস্থের সঙ্গে তাঁদের তফাৎটা কি হল ? তফাৎটা হল এইখানে যে, তাঁরা এইসব কাজ করছেন ঈশ্বরের উদ্দেশে। কাজ করছেন না তাঁরা—-ঈশ্বরের আরাধনা করছেন। এই প্রসঙ্গে আমাদের মঠের একটা মজার গল্প বলি।
আমাদেরই একজন সাধু. গত হয়েছেন. খুব ভাল ছাত্র ছিলেন. এম.এসসি-তে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়েছিলেন. বাবা ডেপুটী ম্যাজিস্ট্রেট —-বাবার ইচ্ছা ছিল ছেলে আই. সি. এস. হবে—-কিন্তু ছেলে রামকৃষ্ণ মিশনের সাধু হয়ে গেলেন. বাবা মিশনের বিরুদ্ধে কোর্টে নালিশ করলেন. কিন্তু ছেলে কোর্টে গিয়ে বললেন—-আমি সাবালক, আমি স্বেচ্ছায় সাধু হয়েছি. বাবা হেরে গেলেন. খুব অপমানিত বোধ করলেন তিনি. সঙ্গে রিভলভার নিয়ে একদিন মঠে গেছেন. প্রথমে ছেলেকে আসতে বলবেন, যদি না আসে তাহলে গুলি করে মারবেন. ছেলের কাছে গিয়ে দেখেন যে, ছেলে বসে বসে কুমড়ো কাটছে. তিনি বলছেন, আমি হাসব না কাঁদব. আমি ডেপুটী ম্যাজিস্ট্রেট—–আর আমার ছেলে, যাকে ভেবেছিলাম আই.সি.এস হবে সে কিনা এখানে এসে কুমড়ো কাটছে. ছেলেকে বললেন, যদি কুমড়ো কাটার জন্যই সাধু হয়ে থাকিস তাহলে বাড়ি ফিরে চল, গাড়ি গাড়ি কুমড়ো কিনে দেব. ছেলে বাবাকে প্রণাম করে বললেন, বাবা, আমি কুমড়ো কাটছি না. ঠাকুরের পুজো করছি. এই ভাব—-সব তাঁর পুজো।

আমি যখন প্রথম রামকৃষ্ণ সঙ্ঘে যোগ দিয়েছি সেইসময়কার একটা ঘটনা বলি. দেওঘরে আমাদের যে স্কুল ছিল সেখানে তখন পড়াতাম. একবার কয়েকদিনের জন্য মঠে এসেছি।

একদিন আমাদের এক বৃদ্ধ স্বামীজী আমাকে ডেকে বললেন ঃ এই চিঠিগুলো ডাকে যাবে, এগুলোতে স্ট্যাম্প লাগিয়ে দাও. এক গাদা চিঠি—- আমি তাড়াহুড়ো করে টেরা-বাঁকা করে স্ট্যাম্প লাগিয়ে কাজ শেষ করেছি. তারপর সেই স্বামীজীর টেবিলে গিয়ে রেখে দিয়ে এসেছি।

কিছুক্ষণ পরেই তাঁর কাছ থেকে আবার ডাক. আমি তো ভাবছি ঃ সেরেছে. আবার স্ট্যাম্প লাগাতে হবে নাকি ? গিয়ে দেখি, সেই স্বামীজী প্রতিটা স্ট্যাম্প জল দিয়ে খুলছেন আর সোজা করে লাগাচ্ছেন. আমি যেতেই বললেন ঃ এই তোমার কাজের ছিরি ! স্কুলে ছাত্রদের এরকম শিক্ষাই দাও বুঝি ! —-মারাত্মক কথা ! আমি খুব লজ্জা পেয়ে গেলাম, বললাম, দিন, আমি আবার লাগাচ্ছি. তিনি বললেন ঃ না, তোমার দৌড় খুব বুঝেছি ! তোমাকে এ আর করতে হবে না. আসলে তিনি তো কাজটাকে শুধু ‘স্ট্যাম্প লাগানো’ মনে করছেন না. স্ট্যাম্প তো যেমন করেই লাগাই না কেন, চিঠি ঠিক চলে যাবে।

তিনি মনে করছেন ঃ এ হচ্ছে পূজা, শ্রীরামকৃষ্ণের পূজা. তাই এত যত্ন, এত সতর্কতা।

স্বামী লোকেশ্বরানন্দ

spot_img
spot_img

সবাই যা পড়ছেন

spot_img