চরম অরাজকতা আর স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগকে ঘিরে বিতর্কের কেন্দ্রে রাজ্যের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ। এই প্রতিষ্ঠানের বর্তমান পরিচালন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ অভিযোগ এনেছেন বিশিষ্টজনেরা এবং পরিষদের যুক্ত পাঠক-পাঠিকারা। নানারকম প্রলোভন এবং ভয়ের পরিবেশ তৈরি করে পরিষদের পরিচালন ক্ষমতাকে কুক্ষিগত রাখার অভিযোগ উঠেছে।
বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ-এর পাঠক সমাজের পক্ষে স্বাগতা দাশ মুখোপাধ্যায় শুক্রবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে এক সাংবাদিক বৈঠকে অভিযোগ করেন, গত ৭-৮ বছর ধরে নতুন করে পরিষদের সদস্য পদ দেওয়া হচ্ছে না। এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, নতুন সদস্য পদ দেওয়া হলে, ভোটারের সংখ্যা বাড়বে, যা বর্তমান কর্তৃপক্ষের একাধিপত্য বজায় রাখার পক্ষে বাধা হয়ে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। পরিষদের নির্বাচনেও কারচুপির অভিযোগ করেন স্বাগতাদেবী। এবারের বার্ষিক সাধারণ সভায় উপস্থিত সদস্যদের কোনওরকম মতামত না নিয়েই একতরফাবে কর্মাধ্যক্ষকে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয় বলে অভিযোগ।
পরিষদের ন্যাস রক্ষক সমিতির প্রবীণ সদস্য বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার বলেন, সমিতির অনুমোদন ছাড়া পরিষদের কোনও সম্পত্তি কেনা বা বিক্রি করা যায় না। কিন্তু অনাবাসী ভারতীয় নিমাই চট্টোপাধ্যায়ের দান করা প্রায় পৌনে ৬ কোটি থেকে ২ কোটি খরচ করে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের বসতবাড়িটি কিনে, সেটির নামকরণ করা হয়েছে ‘জয়শ্রী ভবন’, যা অত্যন্ত দৃষ্টিকটু বলে মন্তব্য করেন পবিত্রবাবু। পরিষদের প্রকাশিত বইয়ের গুণগত মান নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
এই গ্রন্থশালায় বহু দুষ্প্রাপ্য বইয়ের পাশাপাশি রয়েছে বিদ্যাসাগরের লাইব্রেরি সূত্রে পাওয়া ২২টি বই ভর্তি আলমারি। এছাড়া রয়েছে হাজার বছরের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের মধ্যে অন্তত ৮০০ বছরের পুরনো পুঁথি। রয়েছে বিদ্যাসাগর, বঙ্কিমচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ, রামমোহন, মধুসূদন, তারাশঙ্কর সহ বাংলার বহু বরেণ্য ব্যক্তিত্বের স্মৃতিবিজড়িত নানান সামগ্রী।
এই প্রতিষ্ঠানে আসেন বহু পড়ুয়া ও গবেষক। কিন্তু তাঁদের সামনে নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মীরাতুন নাহারও পরিষদের বর্তমান পদাধিকারীদের ভূমিকায় ক্ষোভপ্রকাশ করেন। বহু মনীষী ও সাধারণ মানুষের দানে গড়ে ওঠা এই প্রতিষ্ঠানকে বাঁচানোর জন্য সবাইকে এগিয়ে আসার আবেদন জানান তিনি।