হোমPlot1'শিব-ভূমি' চাম্বা যেন এক স্বপ্নের দেশ

‘শিব-ভূমি’ চাম্বা যেন এক স্বপ্নের দেশ

‘শিব-ভূমি’ চাম্বা যেন এক স্বপ্নের দেশ

রিমা কয়াল
চাম্বা হল দেবতাদের দেশ, যা ‘শিব-ভূমি’ নামেও পরিচিত। কারণ ভরমৌরে মণিমাহেশ কৈলাসে ভগবান শিবের আবাস। হিমাচল প্রদেশের চাম্বা জেলা রাজকীয় পশ্চিম হিমালয়ের কোলে অবস্থিত একটি স্বপ্নভূমি। ভরমৌরের চারপাশের গোটা এলাকাকে বলা হয় “শিবভূমি”। মণিমাহেশ কৈলাসে ভগবান শিব বাস করেন, এমন বিশ্বাসও প্রচলিত রয়েছে।

চাম্বা গভীর সৌন্দর্য ভরা।  প্রচুর আলপাইন, আর রয়েছে যাযাবর মেষপালক। এখানকার আদিবাসীদের বলা হয় গাদ্দিস।

চাম্বার সংস্কৃতি
গাদ্দিদের এক অনন্য জীবনধারা রয়েছে।  পশুপালন এদের পেশা। ভেড়া, ছাগল পালনের পাশাপাশি দুধ, মাংস এবং পশম সরবরাহের সঙ্গেও এরা যুক্ত। পাহাড়ের বিভিন্ন ঔষধি গাছ, ভেষজ এবং উদ্ভিদ সম্পর্কে এদের গভীর জ্ঞান রয়েছে। হিমাচল প্রদেশের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সঙ্গে এরা ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

চাম্বার বিখ্যাত উৎসব:
মেলার প্রধান উৎসবগুলি হিমাচল চাম্বা শহরের ‘চৌগান’ নামক স্থানে পালিত হয়। মিঞ্জর মেলাকে হিমাচল প্রদেশের অন্যতম রাজ্য মেলা হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। এই মেলা প্রতি বছর জুলাই/অগাস্ট মাসে অনুষ্ঠিত হয়। এটি  শ্রাবণ মাসের দ্বিতীয় রবিবার অনুষ্ঠিত হয়।

হিমাচল প্রদেশ রাজ্যের চাম্বা জেলার এই শহরের জনসংখ্যা প্রায় ২০ হাজারের মতো। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা 1,006 মিটার (3,301 ফুট)।  শহরটি রাভি নদী (ট্রান্স-হিমালয়ান সিন্ধু নদীর একটি প্রধান উপনদী) ও সাল নদীর সঙ্গমস্থলে অবস্থিত।

তুর, আদ্রাউন্ড, কুন্দি, ফাট, টুপার, ব্রেহী, বাসু উপত্যকা প্রভৃতি পাহাড়ে ঘেরা চাম্বায় বেশ কয়েকটি গ্রাম রয়েছে।স্বাধীন রাজ্য চাম্বা ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং 1846 সালে ব্রিটিশ ভারতের অংশ হওয়ার আগে কাশ্মীর, মুঘল এবং শিখ শাসনের অধীনে ছিল। 1948 সালে এটি হিমাচল প্রদেশের সাথে মিশে যায়।

৯২০ খ্রিস্টাব্দেরাজা সাহিল বর্মন তাঁর কন্যা চম্পাবতীর অনুরোধ মেনে রাজ্যের রাজধানী চাম্বাতে স্থানান্তরিত করেন (তাঁর নামানুসারে চম্বা নামকরণ করা হয়েছিল)।

চাম্বার মন্দির:
লক্ষ্মী নারায়ণ মন্দির (বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের প্রতি নিবেদিত) রাজা সাহিল বর্মন তৈরি করেছিলেন  ১০ম শতকে। এটি স্থানীয় পরিবেশের উপযোগী  করে কাঠের চাতারি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে এবং এতে একটি শিকারা এবং একটি অন্তরাল এবং একটি মণ্ডপ সহ একটি গর্ভগৃহ রয়েছে। গরুড়ের একটি ধাতব মূর্তি, বিষ্ণুর বাহন মন্দিরের প্রধান ফটকের দ্বাজস্তম্ভ স্তম্ভে স্থাপিত। আওরঙ্গজেব মন্দিরটি ভাঙার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তার বদলা হিসেবে 1678 সালে রাজা ছত্র সিং মন্দিরের ছাদকে সোনার প্রলেপযুক্ত চূড়া দিয়ে সজ্জিত করেছিলেন।

চাম্বার সেরা খাবার
চাম্বায় খুব বেশি রেস্তোরাঁ নেই।  আপনি নুডুলস, স্যুপ এবং ডাম্পলিং বিক্রির অনেক দোকান রাস্তার ধারে পেতে পারেন। দইয়ের মধ্যে রাজমা (লাল কিডনি বিন) দিয়ে তৈরি একটি স্থানীয় উপাদেয় অত্যন্ত জনপ্রিয় খাবার হল মাদ্রা।

ধাম হল কাংড়া জেলার একটি ঐতিহ্যবাহী খাদ্য উৎসব। অঞ্চলভেদে হিমাচলি খাবারের ভিন্নতা রয়েছে। হিমাচল প্রদেশের রন্ধনপ্রণালী মূলত রাজ্যের জলবায়ু এবং ভৌগোলিক অবস্থানের উপর নির্ভরশীল। যদিও প্রতিদিনের খাবারের মধ্যে রয়েছে সাধারণ ডাল-চাওয়াল-সবজি-রুটি। উৎসব উপলক্ষে বিশেষ খাবার রান্না করা হয়। উৎসবের খাবারের মধ্যে, ঐতিহ্যবাহী খাবার, ধাম (ঐতিহ্যপূর্ণ অনুষ্ঠানে পরিবেশিত মধ্যাহ্নভোজ) সব সময় পাওয়া যায়।

হোটেলের ইন-হাউস রেস্তোরাঁগুলিতে ভারতীয়, চাইনিজ এবং মহাদেশীয় খাবারও মেলে।

সড়কপথে কলকাতা থেকে চাম্বার দূরত্ব 2092KM।  চাম্বার নিকটতম রেলওয়ে স্টেশন হল পাঠানকোট। নিকটতম বিমানবন্দর হল গাগ্গাল।

spot_img
spot_img

সবাই যা পড়ছেন

spot_img