দেবাশিস ধর
বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে দেবী দশভুজার আরাধনা হলেও, দক্ষিণ কলকাতার ঢাকুরিয়ায় মা বগলামুখীরই পুজো হচ্ছে। এই মাতৃমন্দিরে চণ্ডীর আর এক রূপ বগলাকেই দুর্গারূপে কল্পনা করে পুজো করা হয়।
মাতৃসাধক বাসুদেব পরমহংসের ইচ্ছাকে বাস্তবায়িত করতে এবং ঘরে ঘরে দেবী বগলামুখীর পুজোর প্রচলন করতে তৈরি হয় বগলামুখী মাতৃমিশন। মিশনের সঙ্ঘাধ্যক্ষ কূলাবধূতাচার্য সোমানন্দ নাথ জানান, প্রথমে মাতৃমিশনে চিত্রপটেই দুর্গাপুজো অনুষ্ঠিত হত। পরবর্তীকালে দেবী বিগ্রহে উমা হৈমবতীর আরাধনা করা হয়। সম্পূর্ণ তন্ত্রমতে পুজো হয় এই মাতৃমন্দিরে। সন্ধিপূজার সময় ১০৮ পদ্ম ও প্রদীপ নিবেদনের পাশাপাশি ধুনো পোড়ানো হয়। মহানবমীর দিন কুমারীপুজো ও হোম সম্পন্ন হয় বগলামুখী মাতৃমিশনে।
ঢাকুরিয়ার এই মাতৃমন্দিরে দেবীর আমিষভোগ নিবেদন করা হয়। ভোগে থাকে সাদাভাত, পোলাও, সাত রকমের ভাজা, তরকারি, মাছ, পাঁঠার মাংস, হাঁসের ডিম, চাটনি, পায়েস ও মিষ্টি। তবে মিশনের দেবী যেহেতু প্রতিষ্ঠিত, তাই দশমীর কোনো পূজাই সম্পন্ন হয় না এখানে। প্রাচীন রীতিনীতি মেনে আজও পুজো হয়ে আসছে ঢাকুরিয়ার বগলামুখী মাতৃমিশনে।
মিশনের পরমারাধ্য মাতৃসাধক বাসুদেব ছিলেন একাধারে চিত্রশিল্পী, সুরকার, গীতিকাল ও কবি। অলৌকিক শক্তির অধিকারী বাসুদেব ছিলেন সাক্ষাৎ শিব স্বরূপ। সাধক বাসুদেবের স্বপ্ন ছিল, ঘরে ঘরে মা বগলার পুজর প্রচলন এবং সেই সাথে মাতৃনামকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার।
বাসুদেব পরমহংসদেবের জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দীর্ঘসময় তিনি কাটিয়েছিলেন হিমালয়ের গিরিগুহার গিরিকন্দরে।
সেখানে থাকাকালীন প্রতিদিন ঊষালগ্নে দূরের কোনও একটি নাম না জানা দিব্যস্থান থেকে এক স্বর্গীয় সুর ভেসে আসত, যা তাঁর দেহ-মনকে এক অন্য অনুভূতিতে ভরিয়ে দিত। অসাধারণ শ্রুতিধর সাধক জীবন সায়াহ্নে ১৯৯১-১৯৯২ সালে সেই সুর তাঁর প্রিয় মাউথ অর্গানে তুলে ধরে রেকর্ড করেন। এই সুর প্রতিদিন যে কোনো দুরারোগ্য ব্যাধিগ্রস্ত ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট মাত্রায় শ্রবণ করালে তার রোগ ভালো হয়ে যায়, যা মিউজিক থেরাপি নামে পরিচিত। বিশ্বের বহু দেশেই মিউজিক থেরাপি সমাদৃত হয়েছে।