শুভদীপ রায় চৌধুরী
উত্তর কলকাতার বনেদি বাড়িগুলির অন্যতম এই পুজো। তবে এই বাড়িতে দেবী দশভুজা নন, তিনি দ্বিভুজা রূপে বিরাজমান। এই বাড়ির দুর্গা মহিষাসুরমর্দিনী নন, তিনি ভক্তের অভয়দায়িনী। দর্জিপাড়া শোভাবাজার অঞ্চলের গন্ধবণিক সম্প্রদায়ের ব্যবসায়ী রামনারায়ণ দাঁ এই দুর্গাপুজোর সূচনা করেন।
এ বাড়ির পুজো শুরু করার পিছনে রয়েছে এক করুণ কাহিনি। বাড়ির কর্তা রামনারায়ণ অল্প বয়সে তাঁর কন্যা দুর্গারানির বিয়ে দিয়েছিলেন। বিয়ের পরে ধুলোপায়ের দিন পিতৃগৃহে এসে কলেরায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায় দুর্গারানি। তাঁর স্মৃতিতে ১৭৬০ থেকে বাড়িতে অভয়াদুর্গার পুজো শুরু করেন রামনারায়ণ দাঁ।
জয় মিত্র স্ট্রিটে রামনারায়ণের তৈরি প্রাচীন দালানটি এখন আর নেই। ১৯২৬-২৭ নাগাদ কলকাতার রাস্তাঘাট উন্নয়নকল্পে ‘ক্যালকাটা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট’ ঠাকুরদালান সহ দাঁ-বাড়ির মূল ভদ্রাসনটি অধিগ্রহণ করে। বর্তমানে তার উপরই চলে গিয়েছে যতীন্দ্রমোহন অ্যাভিনিউ। পুজোটি তাই পরিবারের সদস্যদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে হয়। তবে বর্তমান প্রজন্মের সদস্যরা চেষ্টা করছেন নতুন একটি ঠাকুরদালান নির্মাণ করার।
রামনারায়ণ মূলত পুজো আরম্ভ করেন মৃতা কন্যার স্মৃতিতে। তাই সিংহবাহিনী মহিষাসুরমর্দিনী নয়, এখানকার প্রতিমা দ্বিভুজা কন্যামূর্তি। চুলে বিনুনি ও লাল ফিতে দিয়ে বাঁধা, দু-পায়ে নূপুর আর পায়ের নীচে পদ্ম। ঠিক দুর্গার মতোই লক্ষ্মী, সরস্বতী, গণেশ ও কার্তিকের প্রতিমার সাজগোজ পরিবারের ছেলেমেয়েদের মতন হয়।
তবে, দাঁ-বাড়ির বোধন বসে প্রতিপদ তিথি থেকেই। অব্রাহ্মণ পরিবার বলে পুজোয় অন্নভোগের কোন রীতি নেই। তার পরিবর্তে গোটা ফল, গোটা আনাজ, শুকনো চাল এবং নানান ধরনের মিষ্টি ইত্যাদি ভোগ দেওয়া হয়। প্রাচীন এই বনেদি পুজোয় কোনও বলিদান হয় না।