হোমPlot1ভোটার তালিকায় নাম রাখতে হলে, কোন ১১টি নথির প্রয়োজন, জেনে রাখুন

ভোটার তালিকায় নাম রাখতে হলে, কোন ১১টি নথির প্রয়োজন, জেনে রাখুন

ভোটার তালিকায় নাম রাখতে হলে, কোন ১১টি নথির প্রয়োজন, জেনে রাখুন

বিহারের ভোটার তালিকায় নির্বাচন কমিশনের ‘বিশেষ নিবিড় সমীক্ষা’ (এসআইআর) নিয়ে দেশজুড়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। প্রকৃত ভোটার কারা, কাদের নাম তালিকায় থাকবে, ১১টি নথির ভিত্তিতে তা চূড়ান্ত করার কথা জানিয়েছে কমিশন।

এসআইআর (স্পেশ্যাল ইনটেনসিভ রিভিশন) বা বিশেষ নিবিড় সমীক্ষা: নির্দিষ্ট সময় অন্তর নির্বাচন কমিশন এই নিবিড় সমীক্ষা চালিয়ে থাকে। দেশে শেষ বার এই সমীক্ষা হয়েছিল ২০০২ সাল থেকে ২০০৪ সালের মধ্যে। বিহারে হয়েছিল ২০০৩ সালে। ভোটার তালিকায় থাকা নামের মধ্যে কারা মৃত, কারা অন্যত্র চলে গিয়েছেন, কারা ভুয়ো, তা সমীক্ষার মাধ্যমে স্থির করা হয়। বিহারে ইতিমধ্যে ৬৫ লক্ষের বেশি ভোটারের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। আগামী ১ অগাস্ট বিহারের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন।

বিহারের ক্ষেত্রে ১১টি নথি নির্দিষ্ট করে দিয়েছে কমিশন। অন্যান্য রাজ্যেও এসআইআর হলে নথির সংখ্যা একই থাকবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
এই নথিগুলি হল,

১. আপনি যদি কেন্দ্রীয় বা রাজ্য সরকারি কর্মচারী বা অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী হন, তবে আপনার সেই পরিচয়পত্র।

২. ১৯৮৭ সালের ১ জুলাইয়ের আগের আপনার নামে থাকা কোনও সরকারি (কেন্দ্র অথবা রাজ্য) নথি। ব্যাঙ্ক, পোস্ট অফিস, এলআইসি-র নথিও গ্রাহ্য।

৩. জন্মের শংসাপত্র।

৪. বৈধ পাসপোর্ট।

৫. যে কোনও বোর্ড বা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাওয়া শিক্ষা সংক্রান্ত শংসাপত্র (যেখানে জন্মের সাল এবং তারিখের উল্লেখ রয়েছে)।

৬. সংশ্লিষ্ট এলাকায় স্থায়ী বসবাসকারীর শংসাপত্র।

৭. তফসিলি জাতি, উপজাতি এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণিভুক্ত হলে তার শংসাপত্র।

৮. জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) তালিকায় নাম।

৯. বনাঞ্চলের অধিকারের শংসাপত্র।

১০. রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের তৈরি করা পারিবারিক ‘রেজিস্টার’।

১১. সরকার প্রদত্ত জমি বা বাড়ির নথি (দলিল, পর্চা ইত্যাদি)।

সবাইকেই কি নথি জমা দিতে হবে? না। সমস্ত প্রাপ্তবয়স্ককেই ভোটার তালিকায় নাম তোলার জন্য উদ্বিগ্ন হতে হচ্ছে না। বিহারে ২০০৩ সালে এসআইআর হয়েছিল। তার ভিত্তিতে তৈরি হয়েছিল ভোটার তালিকা। কমিশন জানিয়েছে, বিহারের ক্ষেত্রে ২০০৩ সালে জানুয়ারি মাসে প্রকাশিত ভোটার তালিকায় যাঁদের নাম ছিল, তাঁদের নাম থাকবে। অর্থাৎ, নিবিড় সমীক্ষা করা হচ্ছে তার পর থেকে শেষ দফা পর্যন্ত যাঁদের নাম উঠেছে, সেই ২২ বছরের সময়কাল ধরে। পশ্চিমবঙ্গে শেষ বার এসআইআর হয়েছিল ২০০২ সালে। অতএব ধরে নেওয়া যেতে পারে, পশ্চিমবঙ্গে এই প্রক্রিয়া শুরু হলে ২০০২ সালের ওই তালিকাকেই ‘নির্ভুল’ হিসাবে ধরবে কমিশন।

আধার, এপিক, রেশন কার্ড কেন চলবে না? এসআইআর নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে একগুচ্ছ মামলা হয়েছে। সেই মামলায় গত ১৭ জুলাই শীর্ষ আদালতের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনকে এসআইআর প্রক্রিয়ায় আধার, ভোটার আইডি (এপিক) এবং রেশন কার্ডকে নথি হিসাবে বিবেচনা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।

কিন্তু মঙ্গলবার কমিশন  শীর্ষ আদালতে জানিয়েছে, ভোটার তালিকায় নাম তোলার ক্ষেত্রে সেগুলি বিবেচনা করা যাবে না। কমিশনের যুক্তি, আধার একটি পরিচয়পত্র মাত্র, নাগরিকত্বের প্রমাণ নয়। এমনকি, এসআইআর-পর্বে নতুন করে ভোটার তালিকায় নাম তোলার ক্ষেত্রে ভোটার আইডি-ও চূড়ান্ত পরিচয়পত্র হতে পারে না বলে জানিয়েছে কমিশন। একই ভাবে রেশন কার্ডকেও ভোটার তালিকায় নাম তোলার বৈধ নথি হিসাবে গণ্য করছে না কমিশন।

প্রক্রিয়ায় এসআইআর বা এই সমীক্ষা? প্রতি বুথে এক জন করে সরকারি আধিকারিক থাকেন (বিএলও)। তাঁর কাছে গিয়ে নথি জমা করতে হয় ভোটারদের। বুথগুলিতে কী নথি জমা পড়ল, তা যাচাই হয় বিধানসভাভিত্তিক। প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্রে এক জন করে সরকারি আধিকারিক ওই কাজ করছেন। তার পর তা জেলা স্তরে যাচাই হচ্ছে। তার পরে তা যাচ্ছে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতরে।

কী কী প্রশ্ন উঠছে? বিহারের এসআইআর নিয়ে একাধিক প্রশ্ন তোলা হয়েছে বিরোধী শিবির থেকে। কেন এক মাসের সময়সীমায় এত বড় কর্মযজ্ঞ করতে হল কমিশনকে? যাঁরা পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করেন, তাঁরা বাড়ি ফিরে কী ভাবে নথি জমা দেবেন? কেন ভোটের তিন মাস আগেই এসআইআর করতে হল? ভুয়ো ভোটার যদি থেকেই থাকে, তা হলে কি ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে সেই ভোটের জোরেই বিজেপি-জোট বিহারে জিতেছিল? কমিশনের তরফে সব প্রশ্নের ধরে ধরে জবাব না-দেওয়া হলেও সার্বিক ভাবে বলা হয়েছে, সাংবিধানিক নিয়ম মেনেই এসআইআর হচ্ছে। কমিশন জানিয়েছে, কোনও না কোনও রাজ্যের ক্ষেত্রে তা ভোটের সময়েই এটি করা হবে। অতীতেও তা-ই হয়েছিল।

কমিশন যে ১১টি নথি নির্দিষ্ট করে দিয়েছে, তা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। তফসিলি জাতি, উপজাতি এবং অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির শংসাপত্র, জমির দলিল বা বনাঞ্চলের অধিকারের শংসাপত্রে জন্মতারিখের উল্লেখ থাকে না। তা হলে সেই নথি দিয়ে কী ভাবে নির্ধারিত হবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ভোট দেওয়ার বয়স হয়েছে কি না? বিহারে এনআরসি বা পারিবারিক রেজিস্টার কার্যকর নেই। তা হলে তা কী ভাবে নথি হিসাবে নির্ধারিত হল?

spot_img
spot_img

সবাই যা পড়ছেন

spot_img