দেবাশিস পাল, মালদহ : মা কালীর এই মূর্তিতে রয়েছে ১০ মাথা, দশ হাত এবং ১০ পা। প্রতিমায় শিবের কোন অস্তিত্ব নেই। দেবীর পায়ের তলায় রয়েছে অসুরের কাটা মুন্ডু। প্রতি হাতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র। এই দেবী মহাকালী নামে পরিচিত।
এই কালীপুজোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ইতিহাস। ১৯৩০ সাল। দেশে তখন ইংরেজ শাসন। ইংরেজদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ মানুষ। ব্যতিক্রম ছিলেন না মালদহ শহরের মানুষও। সেই সময় পুড়াটুলির কিছু মানুষ ব্রিটিশ শাসকের অত্যাচারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার ভাবনা চিন্তা শুরু করেন। কিন্তু নানাবিধ অস্ত্রে সজ্জিত বিদেশিদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গেলে প্রয়োজন শক্তি আর সাহস।
নিজেদের উদ্যোগে তাঁরা গড়ে তোলেন একটি ব্যায়ামাগার। একই সঙ্গে নিজেদের মনকে শক্ত করতে শুরু করেন কালীর আরাধনা। শক্তির আরাধনায় তাঁদের আরাধ্য ছিলেন দশ মাথার মহাকালী। সেই পুজো এখনো হয়ে আসছে। তবে পুড়াটুলি থেকে পুজোর স্থান পরিবর্তন হয়ে এসেছে ইংরেজবাজার শহরের গঙ্গাবাগে। চতুর্দশীর দিন ধুমধাম করে পূজিতা হন এই দেবী।
পুজো উদ্যোক্তারা জানালেন, শ্রী শ্রী চন্ডী গ্রন্থে এই মূর্তির উল্লেখ পাওয়া যায়। বিহারের বিন্দুবাসিনীতে পাহাড়ের গায়ে ও প্রাচীন যুগে খোদাই করা রয়েছে এই মূর্তি। গঙ্গাবাগ এলাকায় মায়ের মন্দিরটি নির্মিত হয়েছে ১৯৮৫ সালে।
পুজোয় বলি প্রথা চালু রয়েছে। মায়ের মন্দির নির্মাণ নিয়ে এলাকায় রয়েছে অনেক কাহিনী। স্থানীয়দের কাছে জানা যায়, বর্তমানে যেখানে মহাকালীর মন্দির রয়েছে, সেখানে তন্ত্র সাধনা করতেন এলাকার বাসিন্দা প্রফুল্লধন মুখোপাধ্যায়। সাধনার জন্য তৈরি করে পঞ্চমুন্ডির আসন। সেই আসনের ওপরে দেবীর বেদি নির্মিত হয়েছে। প্রফুল্ল বাবুর মৃত্যুর পর তাঁর বংশধর ও স্থানীয় মানুষজন এই পুজো চালিয়ে আসছেন। বর্তমানে এই পুজোর দায়িত্বে রয়েছে ইংরেজবাজার ব্যায়াম সমিতি।
প্রথম থেকেই এই পুজো প্রথমে অমাবস্যার পরিবর্তে চতুর্দশী তিথিতে হয়ে আসছে। পাঁঠা বলি দিয়ে রক্ত উৎসর্গের মাধ্যমে পুজো শুরু হয়। বলির শেষে শোল মাছের টক রান্না করে দেওয়া হয় মাকে। চতুর্দশীর সকালে মৃৎশিল্পীর ঘর থেকে শোভাযাত্রা সহকারে মন্দির পর্যন্ত মাকে নিয়ে যাওয়া হয় শোভাযাত্রা সহকারে।
পুজো উপলক্ষে পাঁচ দিন ধরে চলে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। শেষের দিন নরনারায়ণ সেবা।