Mamata : ভবানীপুরে রেকর্ড, ৫৮ হাজারের বেশি ভোটে জয় মমতার

ভবানীপুরে বিধানসভার উপনির্বাচনে রেকর্ড ভোটে জিতলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপির প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়ালকে ৫৮ হাজার ৮৩২ ভোটে হারিয়ে দিয়েছেন মমতা। আজকের জয়ে নিজের রেকর্ড নিজেই ভাঙলেন মমতা। ২০১১তে ৫৪ হাজারের বেশি ভোটে জয় পেয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী। এবার সেই রেকর্ড ভেঙে গেল।

ভবানীপুরে যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জিতবেন, এ নিয়ে কোনও সংশয় ছিল না। তবে কত ভোটের ব্যবধানে জিতবেন, তা নিয়ে তৃণমূলে হিসেবনিকেশ চলছিল। প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল যে হারবেন, তা বিজেপির অজানা ছিল না গেরুয়া শিবিরের নেতাদের। কিন্তু রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে তিনি কতটা চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারবেন, সেটাই ছিল দেখার। বলা বাহুল্য, লড়াই তো দূরের কথা, ২০ হাজারের গণ্ডিও পেরোতে পারেননি প্রিয়াঙ্কা।

রাজ্য তো বটেই, উপনির্বাচনের দিন ঘোষণার পর থেকে গোটা দেশের নজর ছিল ভবানীপুরের দিকে। কারণ, এখানে প্রার্থী রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার কী করবেন তৃণমূল নেত্রী? এই জয় কি জাতীয় রাজনীতিতে নতুন কোনও মাত্রা যুক্ত করবে?

ভবানীপুরে যুদ্ধে জয়ের পর ২০২৪-র লোকসভা নির্বাচনকেই তিনি যে পাখির চোখ করবেন, ভবানীপুরে ভোট তা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী।

একেবারে শেষ পর্বে নিজের কেন্দ্রে এক নির্বাচনী সভায় মমতা বলেছিলেন, “ভবানীপুর থেকে জিতে ভারতবর্ষের লড়াই লড়তে হবে। ভবানীপুরে জেতার পর আমরা অন্য রাজ্যেও যাব। বিজেপি শাসিত রাজ্যে কেউ থাকতে পারে না। এদের দেশ ছাড়া করতেই হবে। বিজেপিকে দেশছাড়া করবই।”

লড়াই যতই কঠিন হোক না কেন, প্রতিদ্বন্দ্বীকে কী করে হারাতে হয়, নিজের রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকেই বারবার তার প্রমাণ দিয়েছেন মমতা। ১৯৮৪তে প্রথমবার লোকসভার নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন। ২০১১ সালে তৃণমূল যখন রাজ্যে ক্ষমতায় আসে, তখনও তৃণমূল নেত্রী লোকসভার সদস্য ছিলেন।

পরে উপনির্বাচনে ভবানীপুরকেই তাঁর কেন্দ্র হিসেবে বেছে নেন মমতা। সেবারই প্রথম বিধানসভা নির্বাচনে লড়াই। তাঁর মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন সিপিএমের নন্দিনী মুখোপাধ্যায়। সদ্য ক্ষমতা হারানো সিপিএম প্রার্থীকে বিপুল ভোটে হারিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী। মমতা পেয়েছিলেন ৭৩,৬৩৫ ভোট। আর নন্দিনী মুখোপাধ্যায়ের প্রাপ্ত ভোট ১৯,৪২২। ৫৪ হাজার ২১৩ ভোটে জয় তৃণমূল নেত্রীর। সেবার মমতার পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন ভবানীপুরের ৭৭.৪৬ শতাংশ মানুষ। আর নন্দিনী পেয়েছিলেন মাত্র ২০.৪৩ শতাংশ ভোট।

২০১৬তেও ভবানীপুরেই প্রার্থী হন মমতা। সেবার তিনি পেয়েছিলেন ৬৫ হাজার ৫২০ ভোট। শতকরা হিসেবে ৪৮.‌৫৩ শতাংশ। আর কংগ্রেসের দীপা দাশমুন্সি পেয়েছিলেন  ৪০,২১৯টি ভোট। ২৫ হাজার ৩০১ ভোটে জয়ী হন মমতা। বিজেপির টিকিটে ভোটে দাঁড়ানো নেতাজির প্রপৌত্র চন্দ্রকুমার বসু পেয়েছিলেন ২৬ হাজার ২৯৯ ভোট। শতকরা হিসেবে ১৯.‌৪৮ শতাংশ।

২০২১-এর বিধানসভা ভোটে নন্দীগ্রাম থেকে লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নেন মমতা। ভবানীপুরে প্রার্থী হন প্রবীণ তৃণমূল নেতা শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। শোভনদেবের পক্ষে ভোট পড়ে  ৭৩ হাজার ৫০৫। আর বিজেপি প্রার্থী অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ পেয়েছিলেন  ৪৪,৭৮৬টি ভোট। প্রায় ২৯ হাজার ভোটে জয়ী হন শোভনদেব। শতাংশের হিসেবে তৃণমূল ৫৭.৭১ শতাংশ এবং বিজেপি পায় ৩৫.১৬ শতাংশ ভোট।

এবার দেখা যায় লোকসভাভিত্তিক ফলাফল। ২০১৪ সালে দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী ছিলেন সুব্রত বক্সী। সেবার বিধানসভাভিত্তিক ফলাফলে ভবানীপুর কেন্দ্রে বিজেপির থেকে ১৭৬ ভোটে পিছিয়ে ছিলেন সুব্রত। ২০১৪তে ভবানীপুর বিধানসভায় তৃণমূল ৪৭,২৮০ ভোট পেয়েছিল। বিজেপি পেয়েছিল ৪৭,৪৫৬টি ভোট। এছাড়া কংগ্রেস ১৫,৪৮৪ এবং সিপিএম ২১,৯৫৪টি ভোট পেয়েছিল।

গত লোকসভা অর্থাৎ ২০১৯-এর নির্বাচনে দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা আসনে তৃণমূলের প্রার্থী হন মালা রায়। ভবানীপুরে এগিয়ে থাকলেও, ভবানীপুরে বিজেপির সঙ্গে ভোটের ফারাক ছিল মাত্র ৩ হাজার ১৬৮।

এ তো গেল ভবানীপুরে ভোটের হিসেব। তবে এই ভোটের ফল জাতীয় রাজনীতির আঙিনায় মমতার গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে দিল। আগামী লোকসভা ভোটে নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে বাংলার দিদিকেই মুখ করতে চাইছে তৃণমূল। সেই লক্ষ্যে ইতিমধ্যে রাজনৈতিক তৎপরতাও শুরু গিয়েছে ঘাসফুল শিবিরে।

Previous articleMamata : রেকর্ড ভোটে জয়ের পথে মমতা, ৩ কেন্দ্রেই এগিয়ে তৃণমূল
Next articleBreaking : প্রমোদতরীতে ড্রাগ পার্টি, গ্রেফতার শাহরুখ-পুত্র আরিয়ান