হোমPlot1মোহময়ী মানালি যেন মর্ত্যের বুকে এক টুকরো স্বর্গ

মোহময়ী মানালি যেন মর্ত্যের বুকে এক টুকরো স্বর্গ

মোহময়ী মানালি যেন মর্ত্যের বুকে এক টুকরো স্বর্গ

রিমা কয়াল: হিন্দিতে মানালিকে বলা হয় “ধারতি কা সওয়ার্গ” বা “পৃথিবীর স্বর্গ”। ভারতের হিমাচল প্রদেশের কুলু জেলায় বিয়াস বা বিপাশা নদের উপত্যকায় অবস্থিত একটি অপরূপ সৌন্দর্যে ভরা পাহাড়ি শহর হল মানালি (Manali)। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা ২০৫০ মিটার। প্রকৃতির মায়াবী রূপ পর্যটকদের কাছে মানালিকে মোহময়ী করে তুলেছে। তাই সারা বছর এখানে ভ্রমণপিপাসু মানুষের ভিড় লেগেই থাকে।

এক নজরে মানালির কিছু দর্শনীয় জায়গা:
রোহতাং গিরিপথ:  সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা ৩,৯৭৮ মিটার বা ১৩,০৫০ ফুট। মানালি শহর থেকে দূরত্ব ৫১ কি.মি. বা ৩২ মাইল। স্পিতি এবং লাহৌল উপত্যকার প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত এবং হিমালয়ের পীর পাঞ্জাল রেঞ্জের একটি অংশ। এই গিরিপথে যাওয়ার সময় পাহাড়ি রাস্তার আঁকাবাঁকা পথ আর প্রাকৃতিক নয়নাভিরাম দৃশ্য চোখে পড়বে। এখানে রয়েছে বরফে ঢাকা সারি সারি পাহাড়। আর আইস স্কেটিং, স্লেজগাড়ি ইত্যাদির ব্যবস্থাও রয়েছে।

সোলাং উপত্যকা: এটি রোহতাং গিরিপথ যাওয়ার পথে পড়ে এবং  মানালি শহর থেকে এর দূরত্ব ১৪ কিলোমিটার। সোলাং নালা এবং স্নো ভ্যালি নামে পরিচিত সোলাং উপত্যকা বিপাশা নদ এবং সোলাং গ্রামের মধ্যে অবস্থিত। এর অতুলনীয় সৌন্দর্যের কারণে, প্রতি বছর অসংখ্য পর্যটক সোলাং উপত্যকা পরিদর্শনে যান শুধুমাত্র এর অত্যাশ্চর্য, তুষার-সাদা রঙ উপভোগ করতে। এছাড়া, আপনি এখানে ক্যাম্পিং, কোয়াড বাইকিং, জোরবিং, স্কিইং, প্যারাগ্লাইডিং, ট্রেকিং, পর্বতারোহণ এবং প্যারাশুটিংয়ের মতো ক্রীড়া উপভোগ করতে পারবেন।

রাহালা জলপ্রপাত: এটি রোহতাং গিরিপথ থেকে ফেরার পথে পড়বে। এটি মানালির চমৎকার একটি জলপ্রপাত। এখানে গেলে দেখা যায় কীভাবে পাহাড়ের গা বেয়ে কূলকুল শব্দ করে জলরাশি নেমে বিপাশা/ বিয়াস নদীতে গিয়ে মিশছে।

ডেট গুলাবা: রেহালা জলপ্রপাত থেকে খানিকটা দূরে এর অবস্থান। শহরের একদম গাঁ ঘেষে এঁকেবেঁকে বয়ে চলা বিপাশা নদ প্রকৃতির এক অপরূপ বিস্ময়। নদীটির দৈর্ঘ্য ৪৭০ কি:মি: বা ২৯০ মাইল, যা পাঞ্জাবের শতদ্রু নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। এই নদীর জল ভীষণ ঠাণ্ডা আর এর স্রোত বেশ বিপজ্জনক।

পুরাতন মানালি: পুরাতন মানালি এবং নতুন মানালিকে আলাদা করে দিয়েছে মানালসু নদী।  একটি নদী সেতু পুরাতন মানালিকে শহরের বাকি অংশের সাথে যুক্ত করেছে। ওল্ড মানালি হল আপেল বাগানে ঘেরা একটি শান্তিপূর্ণ শহর, যা একটি উপত্যকার নীচে অবস্থিত।  হস্তশিল্পের জন্য এর খ্যাতি রয়েছে। মনোমুগ্ধকর সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের জন্য আপনাকে এই জায়গাটির প্রেমে পড়তেই হবে।

হাদিম্বা মন্দির

হাদিম্বা মন্দির: পুরাতন মানালির সবচেয়ে পরিচিত এবং মনোরম স্থানগুলির মধ্যে একটি হল হাদিম্বা মন্দির। স্থানীয়ভাবে ধুঙ্গারি মন্দির নামে পরিচিত।  ঘটোৎকচের মা এবং ভীমের স্ত্রী হাদিম্বা দেবীর নামেই এই মন্দির। এটি একটি পাথরের উপর অবস্থিত, যা দেবী হাদিম্বার প্রতিরূপ বলে মনে করা হয়।

মনু মন্দির

মনু মন্দির: মনু মন্দিরটি রাজা মনুর প্রতি উৎসর্গীকৃত একমাত্র মন্দির হিসেবে পরিচিত, যা  সেজ মনু নামেও পরিচিত।  এতে স্থাপত্যশৈলী বিস্ময়কর। মনু মন্দিরটি যেখানে গড়ে উঠেছে, সেখানে তিনি ধ্যান করেছিলেন বলে কথিত আছে।

বশিষ্ঠ মন্দির: মানালি থেকে দূরত্ব ৬ কিলোমিটার। এখানে রয়েছে বশিষ্ঠ স্নান বা বশিষ্ঠ স্প্রিংস নামে পরিচিত উষ্ণ প্রস্রবণ। শারীরিক অসুস্থতা এবং সংক্রমণ থেকে মুক্তি পেতে এই প্রস্রবণে অনেক দর্শনার্থী স্নান করেন। বশিষ্ঠ মন্দিরের আশেপাশে বেলেপাথরের মন্দির রয়েছে।

যোগিনী জলপ্রপাত: বশিষ্ঠ মন্দির থেকে 2 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই জলপ্রপাতের উচ্চতা ১৬০ ফুট। যোগিনী জলপ্রপাতের দিকে যাওয়ার পথটি সুন্দর বাগান এবং পাইন গাছ দিয়ে ঘেরা।

পার্বতী উপত্যকা: পার্বতী এবং বিয়াস নদীর সংযোগস্থলে অবস্থিত একটি সরু ও খাড়া উপত্যকা। আশেপাশে রয়েছে বেশ কয়েকটি গ্রাম। উপত্যকাটি ট্রেকিং, ক্যাম্পিং, রিভার র‍্যাফটিং, আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা এবং বিভিন্ন উৎসবের জন্যও বিখ্যাত।

অর্জুন গুম্ফা: বিপাশা নদের  বাম দিকে একটি বসতি এলাকা। কিংবদন্তি অনুসারে, মহাভারতের অর্জুন এখানে তপস্যা চালিয়েছিলেন। খাড়া পাহাড়ি পথ ধরে অর্জুন গুহায় পৌঁছতে হয়। গুহার ভিতর বেশ অন্ধকার। ভিতরে যাওয়ার সময় আলো আবশ্যক। মার্চ থেকে জুন মাস অর্জুন গুফা পরিদর্শনের জন্য উপযুক্ত।  কারণ তখন এলাকাটি কম তুষার আচ্ছাদিত থাকে।

মল রোড:  মানালির অন্যতম বিশেষ আকর্ষণ মল রোডে রয়েছে বহু দোকান, গেস্ট হাউস, ক্যাফে, স্থানীয় খাবারের আউটলেট।  হস্তনির্মিত পশমের জন্য এর বিশেষ পরিচিতি রয়েছে। কেনাকাটার জন্য মল রোডে পাবেন ড্রাগন শপিং কমপ্লেক্স, স্নো লাইন আন্ডারগ্রাউন্ড মার্কেট এবং হংকং মার্কেট।

সিদ্দু: মানালিতে বেড়াতে গেলে, হিমাচলে জনপ্রিয় খাবার সিদ্দু আপনাকে খেতেই হবে।  এটি আসলে এক ধরনের পুর ভরা পাউরুটি। কোনও কোনও জায়গায় মিষ্টি, আবার কোনও কোনও জায়গায় নোনতাও পাওয়া যায়। মিষ্টি পাউরুটির পুরে থাকে গুড়, পোস্ত এবং ড্রাই ফ্রুট। নোনতা পাউরুটির পুরে দেওয়া হয় সিদ্ধ মটরশুঁটি। মেথি, লঙ্কা এবং অন্য মশলা দিয়ে সিদ্ধ মটরশুঁটি চটকে মেখে তার মধ্যে ড্রাই ফ্রুট দেওয়া হয়। দু’রকম স্বাদই দারুণ।

এখানকার দর্শনীয় স্থানগুলিতে যেতে হলে, গাড়ি ছাড়া কোনও বিকল্প ব্যবস্থা নেই। আর গাড়ি ভাড়া করতে হলে, আপনাকে শুধুমাত্র মানালি শহর থেকে ভাড়া করতে হবে।

থাকা: বড় বড় পাহাড়ের মাঝখানে গড়ে উঠেছে ছোট শহর মানালি। হোটেলের পাশাপাশি এখানে থাকার জন্য রয়েছে হোম স্টে-ও, যেখানে ৭ দিনের জন্য বুকিং করলে, একদিন নিখরচায় থাকা যায়। রয়েছে গেস্ট হাউস। এক রাতের ভাড়া পড়ে ১০০০ থেকে ১২০০ টাকার মতো।

খাওয়া: মানালিতে অনেক ভালো মানের খাবারের হোটেল আছে। যেমন: গুজরাতি, মাদ্রাজি, পাঞ্জাবি, বাঙালি ইত্যাদি। বাঙালি খাবার হোটেলের মধ্য আছে হোটের আদার্শা, নিউ আশাপুরি ভোজনালয়, আশাপুরি বাংলা রেস্তোরাঁ ইত্যাদি যেগুলো মল রোডে অবস্থিত। বাঙালি হোটেলের মধ্যে শান্তিনিকেতন হোটেল বেশ প্রসিদ্ধ।

ছবিগুলি

(ছবিগুলি তুলেছেন রিমা কয়াল নিজেই)

spot_img
spot_img

সবাই যা পড়ছেন

spot_img