নারদ মামলায় পদ্ধতিগত ত্রুটির কথা তুলে ধরে কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দাল এবং সব বিচারপতির কাছে চিঠি লিখলেন বিচারপতি অরিন্দম সিনহা। ২৪ মে লেখা এই চিঠি প্রকাশ্যে আসতেই বিভিন্ন মহলে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। চিঠিতে বিচারপতি সিনহা লিখেছেন, “এই মামলায় যা হয়েছে, তাতে কলকাতা হাইকোর্টের ঐতিহ্য মানা হয়নি। আমরা উপহাসের পাত্রে পরিণত হয়েছি।”
আইনের ৪০৭ নম্বর ধারা উল্লেখ করে ইমেলের মাধ্যমে নারদ মামলা অন্যত্র সরানোর আবেদন জানিয়েছিল সিবিআই। এ প্রসঙ্গে বিচারপতি সিন্হা লিখেছেন, “ভারতীয় সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২২৮ অনুযায়ী, শুধুমাত্র সিঙ্গল বেঞ্চেই কোনও দেওয়ানি বা ফৌজদারি মামলা সরানোর দাবি যেতে পারে। তা সত্ত্বেও ডিভিশন বেঞ্চ সিবিআইয়ের আবেদন গ্রহণ করেছে।” তিনি আরও লিখেছেন, “ওই আবেদনকে লিখিত হলফনামা বা রিট পিটিশন হিসেবেও গ্রহণ করা যায় না। কারণ, তাতে আইনের ব্যাখ্যা সংক্রান্ত কোনও বিষয়ের উল্লেখ থাকে না।”
বিচারপতি সিন্হা লিখেছেন, “হতে পারে, বাইরের বিশৃঙ্খলার কারণে ওই আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু রিট পিটিশনের ভিত্তিতে কোনও ডিভিশন বেঞ্চ কি মামলা গ্রহণ করতে এবং তার শুনানি করতে পারে? সেটাই প্রথম প্রশ্ন।”
সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতের রায় হাইকোর্ট কীভাবে বাতিল করে দিল, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন এই বিচারপতি সিন্হা। তাঁর প্রশ্ন, “মামলা স্থানান্তর প্রক্রিয়ায় নিজের ক্ষমতা প্রয়োগ করে হাইকোর্ট কীভাবে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে নিম্ন আদালতের রায়ের ওপর স্থগিতাদেশ জারি করল?”
বিচারপতি সিনহার কথায়, “নিয়ম অনুযায়ী, ডিভিশন বেঞ্চে বিচারপতিদের মধ্যে মতাপার্থক্য দেখা দিলে, তৃতীয় কোনও বিচারপতির মতামত নেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা হয়নি। মামলাটি সরাসরি পাঠিয়ে দেওয়া হল, পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চে।”
এ প্রসঙ্গে তিনি ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, “একটি ডিভিশন বেঞ্চের রায়ের সঙ্গে যখন অন্য একটি ডিভিশন বেঞ্চের রায়ের ফারাক হয়, তখন তা বৃহত্তর বেঞ্চে পাঠানোর ব্যাপারে বিবেচনা করা হয়।” হাইকোর্টকে অবশ্যই এক হয়ে কাজ করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
বর্তমানে কলকাতা হাইকোর্টে ৩১ জন বিচারপতি রয়েছেন। এর মধ্যে অভিজ্ঞতার নিরিখে বিচারপতি সিনহা রয়েছেন ৭ নম্বরে।
পরিস্থিতির গুরুত্ব বিচার করে সব বিচারপতিকে নিয়ে বৈঠক ডাকার আবেদন জানিয়েছেন এই বিচারপতি। তিনি লিখেছেন, “কোভিডের কারণে বিচারপতিরা আদালতে না এসে যেখানে তাঁরা রয়েছেন, সেখানে বিচারকার্য চালাতে পারেন কিনা, তা নিয়ে ওই বৈঠকে আলোচনা হোক।”
এখানে নাম না করে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দালের দিকেই ইঙ্গিত করেছেন বিচারপতি সিনহা। নিজের শহর চণ্ডীগড় থেকেই এখন যাবতীয় কাজ চালাচ্ছেন প্রধান বিচারপতি।