শ্যামল সান্যাল : রাজভবনের বাসিন্দা রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়কে ঘিরে সরগরম রাজ্য-রাজনীতি। দিল্লিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের যা বললেন, বাজার গরম তাতেই। এখন তিনি একমাস কাটাবেন দার্জিলিংয়ের রাজভবনেই। পাহাড়ে ঠান্ডা হাওয়া বইবে, না গরম বাতাসের ঝড় উঠতে চলেছে, দু-এক দিনের মধ্যেই তা বোঝা যাবে। আমরা একটু ফিরে দেখি, কলকাতায় ওই বিশাল বাড়িটি কবে, কীভাবে তৈরি হলো ব্রিটিশ আমলে?
সময়টা ১৮ শতক। দেশে ইংরেজদের রাজত্ব। সেই সময়ে ভারতের রাজধানী এই কলকাতায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির গভর্নর জেনারেল লর্ড ওয়েলেসলি। তাঁর মনে হলো, ব্রিটিশ কর্তার থাকার জন্য একটা মানানসই বাড়ি দরকার। এই ওয়েলেসলি নেপোলিয়ানকে যুদ্ধে হারিয়েছিলেন ব্রিটিশ সেনাপ্রধান হিসেবে। রানি এলিজাবেথ পুরস্কার হিসেবে তাঁকে ভারতের শাসক পদটি দিয়েছিলেন, সঙ্গে লর্ড উপাধি। তখন তাঁরা বণিকের ভূমিকায় ছিলেন। ভারত দখল করেননি।
ওয়েলেসলি তখনকার গভর্নর-জেনারেলদের বাসস্থান বাকিংহাম হাউস ও কাউন্সিল হাউস ভেঙে সেখানে নতুন বাড়ি বানানোর হুকুম দিলেন। বাড়ির প্ল্যান বানানোর ভার দেওয়া হলো ক্যাপ্টেন ওয়াটকে। বিখ্যাত ব্রিটিশ স্থপতি জেমস ওয়াটের ভাগ্নে ছিলেন তিনি। ১৭৯৯ এর ৫ ফেব্রুয়ারি ওই বাড়ির ভিতের প্রথম ইট গাঁথা হয়েছিল মহাসমারোহে।
এর প্রায় ৪ বছর পরে ১৮০৩ সালে বাড়িটি মোটামুটি খাড়া হয়ে গেল। ইংল্যান্ডের ডার্বিশায়ারের বিখ্যাত কেডেলস্টন হলের মতই দেখতে এই প্রাসাদ। লর্ড ওয়েলেসলির আর ধৈর্য্য ধরছিল না। বাড়ি পুরোপুরি তৈরি হবার আগেই তিনি ওখানে থাকতে শুরু করে দিলেন। বিশাল হইহুল্লোড় করে রাতভর চললো তাঁর পান ভোজনের পার্টি, বল ডান্স।
এই বিশাল প্রাসাদ বানাতে সেই সময়ে খরচ হয়েছিল ১২ লক্ষ টাকা। ১৮০৪-০৫ সাল নাগাদ আজকের রাজভবন তৈরির কাজ শেষ হয়েছিল। ওয়েলেসলি যে কলকাতায় প্রাসাদ বানিয়ে ফেলেছেন, সেকথা লন্ডনে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ডিরেক্টরদের জানাই ছিল না। কেন এত টাকা খরচ করে প্রাসাদ বানানো হলো, তা নিয়ে ব্যাপক শোরগোল পড়ে যায় লন্ডনে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সদর দপ্তরে।
এই বাড়ি তৈরির জন্য ১২ লাখ টাকা খরচের পেছনে নানা দুর্নীতির অভিযোগও উঠেছিল। কিন্তু ওয়েলেসেলি সে সব ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। রাজভবনের জন্মলগ্নেই ছিল কিন্তু বিতর্ক। আজও বিতর্ক ওই রাজভবনকে ঘিরেই।
(চলবে)