(CRIME REPORTER: এই পর্বে শোনানো হবে নানান অপরাধ কাহিনী। বিভিন্ন রহস্যজনক ঘটনার নেপথ্য কাহিনী। বিখ্যাত গোয়েন্দা এজেন্সিগুলোর তদন্তের রোমহর্ষক গল্প। বিভিন্ন দেশের গুপ্তচর সংস্থাগুলোর গোপনে খবর সংগ্রহের গল্প আড্ডার মত করে উঠে আসবে বিশিষ্ট সাংবাদিক হীরক কর -এর কলমে।)
হীরক কর : অবিনাশ সিং রাঠোরকে চেনেন? একটু মনে করুন, ঠিক চিনতে পারবেন। কি মনে পড়ল না? টাইগারকে চেনেন? ভারতের গুপ্তচর সংস্থা যার নাম দিয়েছিল ব্ল্যাক টাইগার। আপনাদের অনেকেই হয়তো “এক থা টাইগার” এবং “টাইগার জিন্দা হ্যায়” এই ছবিগুলো দেখেছেন। সলমান খান টাইগারের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। এই দুটো ছবিতে টাইগারের জীবনের বেশ কিছু অংশ দেখানো হয়েছে। এবার একটু একটু করে ঘটনাক্রম মনে পড়ছে তো?
গুপ্তচর হতে গিয়ে বেড়া টপকে সীমানা পার হয়ে সব্জি বেচেছেন, টিকা দেবার নাম করে ডিএনএ সংগ্রহ করেছেন, মাটির সুড়ঙ্গে অফিস খুলে বসেছেন – এমন অনেক রকম গুপ্তচরদের কথাই আমরা জানি। কিন্তু শত্রুদেশে গিয়ে গুপ্তচর ওদের সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছেন, এমনকি মেজর পদ অবধি গিয়েছেন, এমন উদাহরণ পৃথিবীতে সম্ভবত একটাই। ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর সেই দুঃসাহসিক আন্ডারকভার এজেন্ট রবীন্দ্র কৌশিকের জীবনটি তাই দুর্দান্ত রোমাঞ্চ ও বিবর্ণ ট্র্যাজেডিতে ঠাসা।
ওই অবিনাশ সিং রাঠোর আসলে কে ? টাইগারই বা কে ? এই নাম অনেকেই জানেন। টাইগারের আসল নাম রবীন্দ্র কৌশিক। এক থা টাইগার এবং টাইগার জিন্দা হ্যাঁয়, এই দুটো ছবি তৈরি হয়েছিল রবীন্দ্র কৌশিককে সামনে রেখে।। আর রবীন্দ্র কৌশিক ব্ল্যাক টাইগার খেতাবটি উপহার দিয়েছিলেন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। কেন তাকে ব্ল্যাক টাইগার খেতাব দেওয়া হয়েছিল, পুরো কাহিনী পড়লেই বিষয়টি আপনি বুঝতে পারবেন।
কিন্তু এই গুপ্তচরবৃত্তি কি? গুপ্তচরদের দুনিয়া নিয়ে আমাদের ভাবনা চিন্তাই বা কি? সরকারই বা তাদের নিয়ে কি ভেবে থাকেন? সারা পৃথিবীর নানা দেশে তাদের নিজস্ব গুপ্তচর সংস্থা রয়েছে, যারা শত্রু দেশে গিয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করে থাকে। যে কোনও দেশের গুপ্তচর সংস্থা তা সে সিআইএ হোক, কেজিবি হোক ,এমআই সিক্স হোক, মুসাদ হোক, আইএসআই হোক, এদের কাজ হচ্ছে অন্য দেশে গিয়ে গোপন খবর সংগ্রহ করা। এরা বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের লোক হয়। আবার কিছু লোক সংশ্লিষ্ট দেশের গুপ্তচর সংস্থারই হয়, যাদের আন্ডারকভার এজেন্ট বলা হয়। এরা কাজ করে সংশ্লিষ্ট দেশের এজেন্সির জন্য। কিন্তু এদের জন্য একটা অদ্ভুত শর্ত থাকে। সেটা হল আপনি যদি গিয়ে অন্য দেশে ধরা পড়েন, তাহলে আমরা আপনাকে স্বীকার করবো না। অর্থাৎ আপনাকে চিনতে পারবো না এবং আপনাকে কোনওরকম মদত দিতে পারবো না।
ফলে এক দিক থেকে দেখলে একজন গুপ্তচরের জীবন অদ্ভুত হয়। এরকম অনেক ঘটনাই ঘটেছে, যেখানে ধরা পড়ার পর তাঁর দেশের সরকার তাঁকে রেহাই করার কোন ব্যবস্থাই করেনি। ঠিক এরকমই ঘটনা ঘটেছিল রবীন্দ্র কৌশিকের জীবনে। যদিও তাঁকে ‘ব্ল্যাক টাইগার’ উপাধি দিয়েছিলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী।
এই কাহিনী দেশ ভক্তির একটা জ্বলন্ত উদাহরণ বলতে পারেন। এরকমভাবে দেশ ভক্তি আমজনতার কেউই দেখাতে পারেন না। রবীন্দ্র কৌশিক এক অদ্ভুত মানুষ ছিলেন। তার সঙ্গে পরবর্তী জীবনে কি হতে পারে, তা তার জানা ছিল। তবুও তিনি প্রতিবেশী দেশে গিয়ে গুপ্তচরবৃত্তির কাজ চালিয়ে গেছেন। দেশের জন্য আত্মবলিদান দিয়েছেন।
রবীন্দ্র কৌশিক রাজস্থানের শ্রীগঙ্গানগর জেলার একটি ছোট্ট গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। ১৯৫২ সালের ১১ এপ্রিল রাজস্থানের শ্রীগঙ্গানগরে জন্মেছিলেন রবীন্দ্র কৌশিক। কৈশোরে পা দিয়েই তিনি প্রেমে পড়েছিলেন অভিনয়ের। তখন থেকেই মঞ্চে কখনও চন্দ্রশেখর আজাদ, কখনও ভগত সিংয়ের মতো চরিত্রে অভিনয় করে তাক লাগাতেন সবাইকে। ১৯৬৫-৭১ এই উত্তাল সময়ে যার কৈশোর কেটেছে নিজ দেশের সাথে প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানের দ্বৈরথ দেখে। তার মধ্যে জাতীয়তাবাদী ভাবাবেগ সঞ্চার হওয়াটা বিস্ময়কর কিছু নয়। অভিনয় প্রতিভার সাথে সাথে সুদর্শন হওয়ায় সবাই তাকে তুলনা করতো কিংবদন্তি অভিনেতা প্রয়াত বিনোদ খান্নার সাথে। রবীন্দ্রর জীবনে সবচেয়ে বড় মোড় আসে এরপর, যখন তার বয়স মাত্র ১৯।
উত্তর প্রদেশের লখনউয়ে সেবার চলছিলো জাতীয় নাট্যোৎসব। সেখানে প্রাদেশিক প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নিয়েছিলেন রবীন্দ্র। চীনের গুপ্তচর হবার প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়া এক ভারতীয় সেনার চরিত্রে একক অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি মন জয় করেছিলেন সকলের। কিন্তু কে জানত, দর্শক সারিতে বসা ক’জোড়া মুগ্ধ চোখই তার পরবর্তী জীবন গড়ে দেবে?
রবীন্দ্রের অভিনয় নজর কাড়ে সেখানে উপস্থিত ভারতীয় বহির্বৈশ্বিক গোয়েন্দা সংস্থা ‘রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং (RAW)’-এর তিন কর্মকর্তার। সম্ভাবনার নতুন দ্বার খুলে যায় সেখানেই। নাটক তার কাছে একটা প্যাশন ছিল। নাটকে উনি বেশিরভাগ সময়ে যেসব ভূমিকায় অভিনয় করতেন সেগুলো সবই ছিল দেশ ভক্তির। কখনও আর্মি জওয়ান সাজতেন, কখনও বা সিপাইয়ের ভূমিকায় অভিনয় করতেন। যেহেতু বাবা এয়ারফোর্সে ছিলেন, তাই তারমধ্যে দেশ ভক্তির বাসনা প্রবল ছিল।
১৯৫৯ সালে তিনি বি কম পাস করেন। ওই সময় তিনি লখনউয়ে ওই নাটকে অভিনয় করতে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি একজন ভারতীয় ফৌজির ভূমিকায় অভিনয় করছিলেন। ঠিক ওই সময় আমরা চীনের সঙ্গে যুদ্ধে হেরেছিলাম। ওই নাটকে দেখানো হয়েছিল একজন ভারতীয় ফৌজি কিভাবে চীনের সেনাদের কব্জায় চলে যান। এবং চীনের সেনারা কেমন করে তার ওপরে অত্যাচার চালায়। এই ভূমিকায় খুব সুন্দরভাবে অভিনয় করছিলেন রবীন্দ্র কৌশিক। উনি লখনউয়ের যে থিয়েটার হলে অভিনয় করছিলেন, সেখানে ‘রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইংস’ বা ‘র’-এর কয়েকজন অফিসার বসেছিলেন। শ্রীগঙ্গানগরে উনি যখন অভিনয় করতেন, তখন থেকেই তার ওপরে ‘র’-এর নজর ছিল।
সাধারণ ক্ষেত্রে গুপ্তচর সংস্থা গুলো গুপ্তচর বৃত্তি করার জন্য এমন লোকদের বেছে নেন, যারা বর্ডার এলাকায় থাকেন। আর শ্রীগঙ্গানগর ছিল পাকিস্তান বর্ডারের আশেপাশেই । তাই র-এর নজর শ্রীগঙ্গানগর থেকেই রবীন্দ্র কৌশিকের ওপর ছিল। লখনউয়ে নাটক শেষ হবার পর র’-এর কয়েকজন অফিসার রবীন্দ্র কৌশিকের সঙ্গে দেখা করেন। তাঁরা বলেন, তুমি খুব সুন্দর অভিনয় করেছ। কিন্তু, তুমি যদি দেশের জন্য কিছু করতে চাও, তাহলে দিল্লিতে এসে আমাদের সঙ্গে দেখা করো। আমাদের সঙ্গে তোমার কিছু কাজ আছে। রবীন্দ্র কৌশিক বলেন ঠিক আছে আমি দিল্লি যাব। ১৯৭৫ -এর শেষ দিকে রবীন্দ্র কৌশিক দিল্লিতে পৌঁছন। তখনও তাঁর জানা ছিল না, কি কাজ রয়েছে তার জন্য। আর যাঁরা লখনউয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন, তাঁরা কারা। উনি তখনও পর্যন্ত ‘র’-র নাম শোনেননি।
দিল্লি আসার পর দুই পক্ষের মধ্যে মোলাকাত হয়। তাদের মধ্যে কথাবার্তা হয়। তাকে ‘র’- এর দফতরে নিয়ে যাওয়া হয়। বোঝেন রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং অর্থাৎ আরএডব্লিউ কি। তখনই তিনি বুঝতে পারেন, দেশের একটি গুপ্তচর সংস্থা যার নাম ‘র’। আমাদের দেশের যেসব গুপ্তচর বিভিন্ন দেশে গিয়ে রোমহর্ষক কাজ করে এসেছেন তাদের কাহিনী ওনাকে শোনানো হয়। তাতে প্রচন্ড প্রভাবিত হন রবীন্দ্র কৌশিক। তখন তাকে বলা হয় তুমি যদি গুপ্তচর হতে চাও, তাহলে আমাদের বলতে পারো। এটা দেশের জন্য বড় কাজ। কিন্তু চিন্তা ভাবনা না করেই রবীন্দ্র কৌশিক হ্যাঁ বলে দেন এবং দেশের জন্য কাজ করতে তৈরি হয়ে যান। এরপর তাঁকে প্রশিক্ষণের কাজ শুরু হয়। রবীন্দ্র কৌশিককে প্রথমেই বলে দেওয়া হয়েছিল, তিনি তাঁর পরিবারকে কখনই বলবেন না যে, তিনি কি করতে যাচ্ছেন। অমৃতসর, পাঠানকোট এলাকায় ‘র”-এর কিছু দফতর এবং এজেন্ট ছিল। সেখানে তাঁকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তারপরে দিল্লিতে নিয়ে গিয়ে ট্রেনিং দেওয়া হয়।
রবীন্দ্র কৌশিক পাঞ্জাবি ভালো লিখতে, পড়তে এবং বলতে পারতেন। পাকিস্তানের বিভিন্ন প্রদেশে তখনও পাঞ্জাবি খুবই ভালো চলে। তাই ওখানে গিয়ে মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করতে তাঁর কোন অসুবিধা হবার কথা ছিল না। কিন্তু মুশকিল হল, পাকিস্তানে গিয়ে আন্ডারকভার এজেন্টের মত বসবাস করতে হলে ভালো উর্দু জানতে হবে। উর্দু লিখতে, পড়তে, বলতে শেখা খুব জরুরি। ওখানে থাকতে হলে নাম-পরিচয় সবকিছুই বদলাতে হবে। তাই রবীন্দ্র কৌশিককে উর্দুর তালিম দেওয়া হয়। কোরান শরিফ পড়ানো হয়। নামাজ পড়া শেখানো হয়।
পাকিস্থানে আম মুসলমান কিভাবে কথাবার্তা বলে, কিভাবে খায়, কিভাবে আচরণ আচার আচরণ করে, এইসব ছোট ছোট জিনিস শেখানো হয়। আরবি উর্দু কোরান এইসব ‘র’-এর তরফে এক মৌলানার সাহায্যে শেখানো হয়। দ্বিতীয় পর্বে পাকিস্তান সম্বন্ধে তার পরিচয় করানো হয়। পাকিস্তানের কতগুলো প্রদেশ, কতগুলি জেলা, ওখানে কে কে নেতা, কারা কারা কি করেন। পাকিস্তানের বেসিক ইতিহাস তাঁকে পড়ানো হয়। সঙ্গে কোন অস্ত্র কীভাবে ব্যবহার করা হয়, সেইসব অস্ত্রের ট্রেনিং দিয়ে দেওয়া হয়। ‘র’ এটা ভেবেই রেখেছিল যে, শেষ পর্যন্ত রবীন্দ্র কৌশিককে পাকিস্তানে গিয়ে একটা লম্বা সময় কাটাতে হবে।
ইতিমধ্যে রবীন্দ্র গঙ্গানগরের একটি কলেজে বাণিজ্যে স্নাতক পড়ছিলেন। পড়াশোনার পাঠ কোনোরকম চুকিয়েই বাড়ির কাউকে সেভাবে কিছু না জানিয়েই তিনি চলে যান দিল্লিতে, ‘র’- এর কাছে। সেখানে টানা দুই বছর রবীন্দ্র কৌশিককে যেতে হয় কঠোর প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে। এ সময়টায় কালেভদ্রে পরিবারের সদস্যদের সাথে সাক্ষাৎ করতেন রবীন্দ্র। তখন পরিবারের শত কৌতুহলের একটাই জবাব দিতেন রবীন্দ্র, ” দেশের সেবা করছি।”
পাকিস্তানের মূলধারায় মিশতে উর্দু জানার বিকল্প নেই। আর সামরিক বাহিনীর মতো স্পর্শকাতর জায়গায় কারো সন্দেহদৃষ্টি এড়াতে বিশুদ্ধ পাকিস্তানী (লাহোরি) ঢঙে উর্দু বলতে পারাটা ছিলো আরো জরুরি। তাই রবীন্দ্রর প্রশিক্ষণের প্রথম পর্বই ছিলো ভাষা। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীতে পাঞ্জাবি সৈন্যের সংখ্যাধিক্যের কারণে পাঞ্জাবি ভাষা জানাটাও বাড়তি যোগ্যতা ধরা হয়। ওদিকে জন্মস্থানটা পাঞ্জাব-রাজস্থান সীমান্তবর্তী শহরে হওয়ায় পাঞ্জাবিটাও এমনিই চোস্ত ছিলো রবীন্দ্রর।
ভাষার পর পাকিস্তানের সংস্কৃতি ও ভৌগোলিকতারও বিশদ পাঠ দেওয়া হয় রবীন্দ্রকে। সেই সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, নথিপত্র বিনষ্টসহ গুপ্তচরবৃত্তির আপাদমস্তক শেখানো হয় হাতেকলমে। যেহেতু মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে ‘মুসলিম’ পরিচয়েই পাঠানো হত, ফলে রবীন্দ্রকে কোরান পঠন-পাঠনসহ ইসলামের যাবতীয় রীতিনীতিও শেখানো হয়। এমনকি ‘নবী আহমেদ সাকির’ নামধারণ করে পাকিস্তানে প্রবেশের আগে রবীন্দ্রকে খতনাও (Circumcision) করানো হয়, যাতে তার মুসলিম পরিচয় নিয়ে আর কোনও সন্দেহের অবকাশ না থাকে ।
রবীন্দ্র কৌশিককে অনেকটা স্লিপার সেলের মত গড়ে তোলা হয়। স্লিপার সেল হল, একজন মানুষ ভিন্ন দেশে যাবেন, এই দেশের মানুষের সঙ্গে মিলে মিশে থাকবেন। তাদের মতই আচার আচরণ করবেন। সেখানেই চাকরি বাকরি নিয়ে, বিয়ে-থা করে সংসারী হয়ে বসবেন। কিন্তু যখন দরকার পড়বে তখন দেশের কাজে লাগবেন। একটা হয় শর্ট টাইম, আপনি ভিন্ন দেশে যাবেন, কাজ করবেন এবং ফিরে আসবেন। একটা লং টাইম মানে স্পাই। সেই দেশে গিয়ে সেই দেশের জনতার মত আচার আচরণ করে তাদের সঙ্গে মিলেমিশে বাস করে আপনি খবর সংগ্রহ করবেন এবং দেশে পাঠাবেন। রবীন্দ্র কৌশিকের অভিনয় দক্ষতা দেখে ‘র’ ঠিক করে, তাকে long-term এর জন্য পাকিস্তানে পাঠানো হবে। তাই তাকে মুসলিম রীতি রেওয়াজ, মুসলিম আচার-আচরণের সমস্ত ট্রেনিং দেওয়া হয়। এইভাবে পুরো ট্রেনিং শেষ হওয়ার পরে তাকে বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয়। তাকে ছোটখাটো অ্যাসাইনমেন্ট দিয়ে ট্রায়াল দিতে ভিন্ন দেশে পাঠানো হয়। তিনি সমস্ত অ্যাসাইনমেন্ট দক্ষতার সাথে পূরণ করেন।
ছয় সাতটা দেশ ঘুরে আসার পর তাঁকে পাকিস্তানে পাঠানো হয়। পাকিস্তানে তিনি দক্ষতার সঙ্গে কাজ করেন। কাজ করার জন্য তাঁকে নেটওয়ার্ক বানাতে হয়। তার নিজস্ব সোর্স তৈরি করতে হয়। যে পাঁচটি দেশে তিনি গিয়েছিলেন, সেখানে খবর সংগ্রহের জন্য তিনি নিজস্ব সোর্স তৈরি করেছিলেন। ১৯৭৫ সালে তাঁর ট্রেনিং শুরু হয়েছিল। ১৯৭৭ সালে ‘র’ সিদ্ধান্ত নেয় রবীন্দ্র কৌশিককে পাকিস্তানে পাঠানো হবে। এবং উনি long-term এর জন্য পাকিস্থানে থাকবেন। ওখানে থেকে পাকিস্তান সম্পর্কিত সমস্ত গোপন খবর পাঠাবেন।
কিন্তু পাকিস্তানে কেন? রবীন্দ্র কৌশিককেই বা কেন ? এর কিছু কারণ ছিল। ৬৫ এবং ৭১ সালে ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের যুদ্ধ হয়ে গেছে। পাকিস্তানকে আলাদা করে পূর্ব পাকিস্তানকে বাংলাদেশ বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাতে পাকিস্তানের হালাত খুব খারাপ ছিল। তাঁরা রাগ চেপে রাখতে পারছিলেন না। তাঁরা বদলা নিতে চাইছিলেন। তাই পাকিস্তান যদি আবার যুদ্ধ শুরু করে দেয়। ভারতকে আক্রমণ করে। তাহলে আমাদেরও পাকিস্তানের সমস্ত এস্টাবলিশমেন্ট, সেনা ছাউনি, যুদ্ধ স্ট্রাটেজি সম্বন্ধে অবগত হওয়া দরকার। তাই আমাদের সব জানতে গেলে একজন জবরদস্ত গুপ্তচর প্রয়োজন। এইসব চিন্তা ভাবনা করেই রবীন্দ্র কৌশিককে পাকিস্তানের পাঠানোর পরিকল্পনা করা হয়।
রবীন্দ্র কৌশিক পাকিস্তানে যান একটি নতুন নাম এবং একটি নতুন পরিচয়ের সঙ্গে। পাকিস্তানে।পৌঁছনোর আগে ‘র’ তার জন্য নতুন আইডি কার্ড, রেশন কার্ড সবকিছু তৈরি করে রেখেছিল। রবীন্দ্র কৌশিক যখন পাকিস্থানে পা রাখেন, তখন তার আসল পরিচয় ভারতের মাটিতেই পুড়িয়ে দিয়ে চলে যান। পাকিস্তানের মাটিতে পৌছনোর পর তাঁর নাম হয় নবী আহমেদ সাকির। রবীন্দ্র কৌশিক পাকিস্তানের যাবার আগে তার পরিবারকে এ ব্যাপারে কোনও কথাই বলেননি। কেননা ‘র’-এর শর্ত ছিল, কাউকে কিছুই জানানো যাবে না। শুধুমাত্র র’য়ের গুটিকয়েক অফিসার এবং রবীন্দ্র কৌশিক এর মধ্যেই থাকবে। বাড়িতে রবীন্দ্র কৌশিক বলেছিলেন, দুবাইতে তার চাকরি মিলেছে। তাই তিনি দুবাইতে চাকরি করতে যাচ্ছেন। এই বলে তিনি ঘর থেকে বের হন এবং পাকিস্তানে পৌঁছে যান। নবী আহমেদ সাকির নামে তিনি করাচিতে পৌঁছে যান। ওখানে তিনি পাকিস্তানের আম জনতার একজন বনে যান। এখান থেকেই শুরু হয় তার গুপ্তচরবৃত্তির সফরের সূচনা হয়। কিন্তু “র” যেমন ভেবেছিল, তার থেকেও সাহসী এবং দক্ষ গুপ্তচর হন রবীন্দ্র কৌশিক। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ২৩ বছর।
দুবাই হয়ে ১৯৭৫ সালে ২৩ বছর বয়সে পাকিস্তানে প্রবেশ করেন ‘সাকির’। র-এর বানানো জাল কাগজ দিয়ে নিমেষেই পাকিস্তানি নাগরিকত্বের সনদও বানিয়ে ফেলেন তিনি। সামরিক বাহিনীতে যোগদানের সুবিধার্থে পাকিস্তানের ভালো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তার পুনরায় স্নাতক করতেই হত। সেজন্যই তিনি ভর্তি হন করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে। সেখান থেকে পাস করে ১৯৭৯ সালে তিনি হঠৎ দেখেন খবরের কাগজে পাকিস্তানের আর্মির ইস্তেহার। আর্মিতে লোক নেওয়া হবে। আবেদন করে বসেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। প্রশিক্ষণ শেষে কমিশন্ড অফিসার হবার পর তার প্রেম হয় সেনাবাহিনীরই এক দর্জির মেয়ে আমানতের সাথে। বিয়ে থা করে থিতু হতে সময় নিলেন না রবীন্দ্র! ঘরে এলো ফুটফুটে কন্যাসন্তান। আমানত ও সদ্য ভূমিষ্ঠ কন্যাকে নিয়ে মাঝে একবার ভারত এসেছিলেন বটে, তবে পরিবারকে বলেছিলেন,”দুবাইতে কাজ করছি”। তখন রবীন্দ্র কৌশিক নবী আহমেদ সাকিরের নামে পাকিস্তানি আর্মির অংশ হয়ে উঠেছিলেন। সেই খবর পেয়ে দিল্লিতে র-এর অফিসারদের মধ্যে আনন্দের সীমা ছিল না। এটা একটা অভিনব ব্যাপার ছিল। বাইরে থেকে খবর সংগ্রহ করা এক, কিন্তু পাকিস্তানি আর্মির ভেতরে ঢুকে খবর সংগ্রহ করা আরেক ব্যাপার। এরপর তিনি আর্মিতে চাকরি করতে থাকেন। ধীরে তার পদোন্নতিও হয়। পদোন্নতি পেতে পেতে নবী আহমদ সাকির ওরফে রবীন্দ্র কৌশিক পাকিস্তানি সেনার মেজর পদ পর্যন্ত পৌঁছে যান। এটা একটা বিরাট ব্যাপার ছিল। কেননা মেজর পদে পৌঁছলে আপনি প্রচুর খবর সংগ্রহ করতে পারবেন। মেজর নবী আহমেদ সাকির এরপর প্রচুর ইনফর্মেশন “র” কাছে পৌঁছতে থাকেন। এতে ভারত প্রচুর উপকৃত হয়। প্রধান যে কাজটি তিনি করেছিলেন, যার জন্য তাঁকে ইন্দিরা গান্ধী ব্ল্যাক টাইগার উপাধি দিয়েছিলেন সেটি হল, পাকিস্তানের পরমাণু শক্তি কেন্দ্র নিয়ে তিনি প্রচুর খবর ওঁকে দিয়েছিলেন।
এর মধ্যে চাকরির চার বছরে পাকিস্তানের গোয়েন্দাবিভাগ ও সমরকৌশলের নানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মোর্স কোডের মাধ্যমে ভারতে পাচার করতেন রবীন্দ্র। রবীন্দ্রর কাছ থেকে পাওয়া তথ্যকে কাজে লাগিয়ে সামরিক ফায়দাও ভারত কম লোটেনি।এমনও হয়েছে যে, পাকিস্তান-রাজস্থান সীমান্তে যুদ্ধের ফাঁদ পেতেছে, ওদিকে ভারত সেটা আগেই টের পেয়ে ফাঁদটাকে পাকিস্তানের জন্য বুমেরাং করে দিয়েছে! রাষ্ট্রীয়ভাবে কোনো তথ্য না থাকলেও, রবীন্দ্রর ভাই রাজেশ্বরনাথ কৌশিকের কথায়, অন্তত হাজার দুয়েক ভারতীয় সেনার প্রাণ বেঁচেছে তার ভাইয়ের জন্য।
যখন পাকিস্তানি আর্মিতে জয়েন করেন রবীন্দ্র কৌশিক, ওই সময় পাকিস্তানি সেনার দর্জি অফিসারের এক কন্যা, যার নাম আমানত, তার সাথে রবীন্দ্র কৌশিক এর প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। কেউ যদি long-term গুপ্তচরবৃত্তি করতে কোন দেশে যান, আন্ডার কভার এজেন্ট বা স্লিপার সেল হয়ে। তাহলে তার বিয়ে করার বিষয়টিও জরুরি, যাতে সেই দেশের কেউ সন্দেহ না করে। লোকাল মহিলাকে বিয়ে করলে অন্য কারোর সন্দেহ করার অবকাশ থাকে না। তিনি র’কে খবর পাঠান যে, আমানতকে তিনি বিয়ে করতে চলেছেন। কেননা সে পাকিস্তানের আর্মি অফিসারের মেয়ে। তাতে তার খবর সংগ্রহ করতে আরো সুবিধা হবে। কিন্তু আসল সত্যটা হল, আমানতের প্রেমে পড়েছিলেন রবীন্দ্র কৌশিক। কিন্তু র’য়ের পারমিশন ছাড়া বিয়ে করা সম্ভব ছিল না। তাই তিনি বলেন করাচির মানুষদের মন রাখার জন্য এই বিয়ে করা জরুরি। এর আগে এই রকম বহু কেস হয়েছিল। তাই ‘র’ সবুজ সংকেত দিয়ে দেয়। পরেই নবী আহমেদ সাকির আমানতকে বিয়ে করেন। আমানত জানতেন না এই নবী আহমেদ সাকির তাঁর স্বামী, আসল নাম রবীন্দ্র কৌশিক এবং তিনি ‘র’- এর এজেন্ট। তিনি যখন বিষয়টি গঙ্গানগরে নিজের পরিবারকে জানাননি, তখন কিভাবে আমানতকে জানাবেন ?
এর মধ্যেই প্রায় ৪-৫ বছর চলে যায়। এখানে শ্রীগঙ্গানগরে তার পরিবারের লোকজন উদ্বিগ্ন। রবীন্দ্র চাকরি করতে দুবাই গেছেন কিন্তু তার কোনও খোঁজ খবর পাওয়া যাচ্ছে না। মাঝে মাঝে কিছু চিঠিপত্র আছে মাত্র। ১৯৮১তে রবীন্দ্র কৌশিকের ছোট ভাইয়ের বিয়ে ছিল। রবীন্দ্র কৌশিক তার সেই ভাইকে প্রচন্ড ভালোবাসতেন এবং চাইতেন তার বিয়েতে তিনি উপস্থিত থাকবেন। তাই তিনি র’য়ের সঙ্গে কথা বলেন। ‘র’ তাকে ভারতে আসার ব্যবস্থা করে। কিন্তু কাজটা খুবই মুশকিল ছিল, কেননা একদিকে তিনি ‘র’ এর এজেন্ট, অন্যদিকে পাকিস্তানি সেনার মেজর। তিনি ভারতে এসে ভাইয়ের বিয়েতে অংশ নেবেন সেটা এক প্রকার অসম্ভব ব্যাপার ছিল।
কেননা আমাদের যেমন গুপ্তচররা অন্য দেশে থাকে, তেমনই পাকিস্তানের গুপ্তচর আমাদের দেশে রয়েছে। ফলে এটা খুবই ঝুঁকির ব্যাপার ছিল। তাই ‘র’ এর জন্য বিশেষ পরিকল্পনা করে। তিনি প্রথমে সৌদি আরবে যান। ওখান থেকে দুবাই। দুবাই থেকে লুকিয়ে ‘র’ রবীন্দ্র কৌশিককে ভারতে নিয়ে আসে। পাকিস্তানের আর্মির কাছে তিনি যে ছুটি নিয়েছিলেন তাতে বলেছিলেন বিশেষ কাজে তিনি দুবাইতে যাচ্ছেন। ৮১তে শেষবারের মতো তিনি শ্রীগঙ্গানগরে আসেন। এই সময় বাড়ির লোকেরা তাঁকে চাপ দিতে থাকে। ছোট ভাইয়ের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে,এবার তুমিও বিয়ে করে ফেলো। কিন্তু তিনি যে পাকিস্থানে আমানতকে বিয়ে করে বসে আছেন সেটা তাঁর বাড়িতে জানানোর উপায় ছিল না। কিন্তু পরিবারের লোকেদের চাপের মুখে পড়ে একসময় রবীন্দ্র তাঁর বাবাকে জানিয়ে দেন তিনি বিয়ে করে ফেলেছেন। কিন্তু তিনি আধা সত্যি কথা বলেন। বলেন দুবাইতে একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে আছে। তাকেই তিনি বিয়ে করেছেন। সেইসঙ্গে বলেন, তাদের একটি সন্তানও আছে। এই শুনে পরিবারের লোকেরা শকড হয়ে যান। কেননা বাড়ির ছেলে না জানিয়ে বিয়ে করেছে। পাশাপাশি তার বাচ্চা হয়ে গেছে। কিন্তু তারা কিছুই জানতে পারেননি। ব্যাপারটা তাদের কাছে বিস্ময়কর ।
ভাইয়ের বিয়ের পর্ব শেষ হলে রবীন্দ্র কৌশিক বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। বলেন, তার কর্মক্ষেত্র দুবাইতে যাচ্ছেন। সেখান থেকে ফের তিনি পাকিস্তানের পৌঁছে যান। ওই একই রুটে ভায়া সৌদি এবং দুবাই। কেউই জানতে পারেননি যে উনি ভারতে পদার্পণ করেছিলেন। ১৯৮১-এ ভাইয়ের বিয়েতে অংশ নেবার পর তাঁর পরিবারের সঙ্গে রবীন্দ্র কৌশিকের ওটাই ছিল শেষ দেখা।
পাকিস্তানে ফিরে আসার পর তিনি আবার গুপ্তচরবৃত্তিতে লেগে পড়েন। বিভিন্ন খবর সংগ্রহ করে দিল্লিতে পাঠাতে থাকেন। তার কাজকর্ম নিয়ে প্রচন্ড সন্তুষ্ট ছিল ভারত সরকার। ‘র’-এর পুরনো অফিসাররা বলেন, রবীন্দ্র কৌশিকের ইনফরমেশনের জন্য আমাদের দেশের বহু জনের প্রাণ বেঁচেছে। রবীন্দ্র কৌশিক ইনফরমেশন দেশের প্রচুর কাজে লেগেছে। এটা হয়তো বছরের পর বছর চলতেই থাকতো। কিন্তু এই সময় ঘটল এক আজব ঘটনা। ১৯৮৩ পর্যন্ত রবীন্দ্র কৌশিক সমস্ত ইনফরমেশন দিতে থাকেন। কিন্তু কারও কোনও সন্দেহ পর্যন্ত হয়নি। যদিও তিনি পাকিস্তানি আর্মির মেজর ছিলেন। হয়তো ওই আজব ঘটনা না ঘটলেও তিনি পাকিস্তানি সেনার অনেক উচ্চপদে যেতেন। পাকিস্তানি সেনা কিন্তু তার নিজেদের লোকের ওপরও নজরদারি রাখে। রবীন্দ্র কৌশিকের কাজের ধরন এমন ছিল যে তাকে সন্দেহ করা অমূলক ছিল না। যদিও উনি কোনদিনও ধরা পড়েননি। কিন্তু, ৮৩ সালে কোনও একজনের গাফিলতির জন্য রবীন্দ্র কৌশিকের জীবনে কালো মেঘ নেমে আসে।
সেই সময় ‘র’ পাঞ্জাবের বাসিন্দা আরেকজন এজেন্টকে পাকিস্তানের পাঠাচ্ছিল। তারও নাম পরিচয় সব পাল্টে ফেলা হয়েছিল। তার নাম রাখা হয়েছিল ইনায়েত মসি। তাকে শর্ট টাইমের একটা মিশনে পাঠানো হয়েছিল। ৮৩-র এপ্রিল মাস। ইয়াসিন মসিকে বলা হয়েছিল পাকিস্তানের করাচিতে আমাদের একজন এজেন্ট আছে যার নাম নবী আহমেদ সাকির। তাঁকে একটি ডকুমেন্ট পৌঁছে দিতে হবে। নবী আহমেদ সাকিরের সঙ্গে ইনায়েত মসির দেখা হওয়ার কথা ছিল করাচিতে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ইনায়েত মসি যখন পাকিস্তান বর্ডার পার হচ্ছিলেন, তখন পাকিস্তান আর্মি তাকে গ্রেফতার করে নেয়। মসির ওপর অত্যাচার চলে। অত্যাচারের ধাক্কায় ইনায়েত মসির ভেঙে পড়েন। তাকে দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ চলে। তাকে জিজ্ঞেস করা হয় পাকিস্তানের তিনি কি কারণে এসেছেন ? কার সঙ্গে দেখা করবেন ? উনিই প্রথমবার পাকিস্তানের আর্মিকে বলেন যে, করাচিতে একজন এজেন্টের সঙ্গে দেখা করবেন। এজেন্টের নাম নবী আহমেদ সাকির। তিনি পাকিস্তানি আর্মিতে আছেন।
শুনেই পাকিস্তানি সেনার পায়ের তলা থেকে জমি সরে যায়। পাকিস্তানের সেনাতে এমন একজন আছেন যিনি ভারতের গুপ্তচর! ইনায়েত মসির আসল নাম বলে দেয়। বলে নবী আহমেদ সাকিরের আসল নাম রবীন্দ্র কৌশিক। সব জেনে পাকিস্তানি সেনা একটা পরিকল্পনা করে। ‘র’য়ের ইনায়েত মসিকে সঙ্গে করে করাচিতে যায়। তাকে বলা হয় তোমার যেখানে যে সময় রবীন্দ্র সঙ্গে দেখা করার কথা সেখানে যাবে এবং ‘র’ এর দেওয়া ডকুমেন্ট সঙ্গে নিয়ে যাবে। করাচির জিন্না গার্ডেনে এদের দুজনের দেখা করার কথা ছিল।
১৯৮৩। এপ্রিল মাস। শুক্রবার দিন। মুসলিমদের বিশেষ নামাজের দিন। তাই জিন্না গার্ডেনে ভিড় কম ছিল। সকাল প্রায় সাড়ে সাতটা বাজে। ইনায়েত মসি জিন্না গার্ডেনে পৌঁছন। এর পরেই নবী আহমেদ সাকির গার্ডেনে পৌঁছন। দুজনে একসঙ্গে একটি বেঞ্চে বসে আলোচনা শুরু করেন। দেখে মনে হয় দুজন অচেনা লোক প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়ে নতুন আলাপের পর কথাবার্তা বলছেন। ইনায়েত নবীকে ডকুমেন্ট দেন। যেই ডকুমেন্ট আদান-প্রদান হয়, আগে থেকেই ওই গার্ডেনে পাকিস্তান সেনার লোকজন লুকিয়ে ছিলেন তারা আচমকা আসেন এবং নবী আহমেদকে ঘিরে ধরেন। এরপর তাঁকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তাঁর উপর যে অত্যাচার শুরু হয় তা বলার মত নয়।
গুপ্তচরবৃত্তির দুনিয়ায় গুপ্তচরদের মুখ থেকে কথা বের করার জন্য যা করা হয় তা সবাই সহ্য করতে পারেন না। এর মধ্যে বরফের উপর শুইয়ে রাখা। ইলেকট্রিক শক দেওয়া হয়। হাত পা বেঁধে এমন করে খাড়া করে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়, আপনার ঘুম আসবে কিন্তু শুতে পারবেন না। দশ পনেরো দিন এমন অন্ধকার ঘরের মধ্যে রাখা হয় যে আপনি বুঝতে পারবেন না কোনটা সকাল কোনটা রাত কোনটা দিন ? সময় কোন খাতে বইছে। ক্ষুধার্ত রাখা, তৃষ্ণার্ত রাখা, অদ্ভুত অদ্ভুত অত্যাচার, এইসবই করা হয়েছে নবী আহমেদ সাকির ওরফে রবীন্দ্র কৌশিকের ওপর। এখান থেকেই নবী আহমেদ সাকিরের ভূমিকা শেষ হয়ে যায়। কেননা রবীন্দ্র কৌশিকের আসল চেহারা তখন বেরিয়ে পড়েছে।
এরইমধ্যে আমানত, পাকিস্তানি আর্মি অফিসারের মেয়ে যাকে বিয়ে করেছিলেন রবীন্দ্র কৌশিক তিনি প্রথমবার জানতে পারেন তার স্বামী ‘র’ এর এজেন্ট। এবং সে একজন ভারতীয় ও হিন্দু। স্তম্ভিত হয়ে যান। আমানত শিয়ালকোটের জেলে রবীন্দ্রর সঙ্গে করতে আসেন। সঙ্গে নিয়ে আসেন ওদের সন্তানকে। তারপর যতদিন রবীন্দ্র পাকিস্তানের জেলে বেঁচে ছিলেন ততদিন আমানত তার সঙ্গে দ্বিতীয় বার দেখা করতে আসেননি। রবীন্দ্র কৌশিক তাঁর এক চিঠিতে লিখেছিলেন, আমার জন্য আমানতের জীবন নষ্ট হয়ে গেছে। যখন জানা যায় পাকিস্তানের মেজর আসলে রবীন্দ্র কৌশিক এবং আমানত তার স্ত্রী, তখন আমানত এবং তার পরিবারের ওপরও প্রচুর অত্যাচার করা হয়েছিল। রবীন্দ্র কৌশিককে এরপর ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদ চলে। জিজ্ঞেস করা হয় উনি পাকিস্তান আর্মির কি কি ইনফরমেশন লিক করেছেন। কোন কোন খবর ভারতে পাঠিয়েছেন। কিন্তু তার এতটাই দেশ ভক্তি ছিল যে শত অত্যাচার সহ্য করেও তিনি পাকিস্তান সেনার সামনে মুখ খোলেননি। এরপর শিয়ালকোটে দীর্ঘ দু’বছর জিজ্ঞাসাবাদের নামে তার ওপর চালানো হয় সীমাহীন শারীরিক নির্যাতন। ১৯৮৫ সালে নিম্ন আদালত তাকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড দিলেও সুপ্রিম কোর্টের রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পান রবীন্দ্র।
এই সময় রবীন্দ্র কৌশিকের আশা ছিল, ভারত সরকার তাকে ছাড়িয়ে ভারতে নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করবে। অনেক সময় দেখা গেছে দুই দেশের মধ্যে কথা হয়েছে, আমি আপনাদের একজন গুপ্তচর পাকড়াও করেছি। আপনারা তিনজনকে ধরেছেন। বদলা বদলি করে ফেলা হোক। তাই এই ব্যাপারে সকলেরই খুব আশা ছিল। তাই রবীন্দ্র কৌশিক ভারত সরকারকে চিঠি দেন, সেই সঙ্গে তিনি চিঠি দেন শ্রীগঙ্গানগরে তার বাড়িতেও।
সিক্রেট সার্ভিসের আদি নিয়মানুযায়ী, নিজেদের গুপ্তচর শত্রুপক্ষের কাছে ধরা পড়ে গেলে তার সমস্ত নথি সে দেশ থেকে গায়েব করে দেওয়া হয়। একই কারণে ভারতও তাদের জাতীয় তথ্য বাতায়ন থেকে রবীন্দ্র কৌশিক পরিচয় সম্পর্কিত সকল রেকর্ড মুছে ফেলে। পাকিস্তান যখন গণমাধ্যমে ফলাও করে ভারতীয় গুপ্তচরের ধরা পড়ার এ ঘটনাটি প্রচার করতে লাগলো, ভারতের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সরাসরি পাকিস্তানের দাবিকে নাকচ করে দেন।
এদিকে ভাইয়ের বিয়ের পর থেকে রবীন্দ্র কৌশিকের সঙ্গে কোনরকমে যোগাযোগ করে উঠতে পারেননি বাড়ির লোকেরা। আচমকা তার বাড়িতে একটা নীল রঙের ইনল্যান্ড লেটার আসে। ওই চিঠি রবীন্দ্র কৌশিকের বাবার হাতে পড়ে। ওই চিঠিতে প্রথম তিনি লেখেন তিনি পাকিস্তানের জেলে আছেন। তাকে ফাঁসির সাজা শোনানো হয়েছে। তাতে তিনি আবেদন করেন, ভারত সরকার এবং মিডিয়া পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে আলোচনা করুন। না হলে আমার মুক্তি অসম্ভব।
সরকার যেখানে তার চরম বিশ্বস্ততম নাগরিককেই অস্বীকার করছে, তখন তার মুক্তির জন্য লড়াইটা স্বাভাবিকভাবেই কঠিন হয়ে যায় তার পরিবারের জন্য। তবু রবীন্দ্রর সাবেক বিমানবাহিনী কর্মকর্তা বাবা জে এন কৌশল, মা অমলা দেবী ও ভাই রাজেশ্বরনাথ যথাসম্ভব চেষ্টাই করে যান। কিন্তু ফল মিলছিলো না কিছুতেই। ওদিকে রবীন্দ্রর কারাজীবন কাটছিলো কখনো শিয়ালকোটে, কখনো কোট লখপটে, কখনো বা মিয়ানওয়ালিতে। এর মধ্যেই তিনি বাঁধিয়ে ফেলেছিলেন যক্ষ্মা ও শ্বাসকষ্ট। অসুস্থ থাকাকালে তিনি গোপনে ভারতের জয়পুরে থাকা স্বজনদের চিঠি পাঠাতেন। বাবার কাছে পাঠানো এক চিঠিতে লেখেন-“ক্যায়া ভারত জ্যায়সে বাড়ে দেশকে লিয়ে কুরবানি দেনেওয়ালোঁ কো ইয়েহি মিলতা হ্যায় ?”
চিঠিগুলোতে ছেলের দুর্বিষহ জীবনের কথা সইতে না পেরেই কিনা হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে হুট করেই মারা যান রবীন্দ্রর বাবা। এই ব্যাপারে বাড়ির কোন লোকেরই কিছু জানা ছিল না। চিঠি বাড়ির এক কোণে দুমড়ে-মুচড়ে পড়েছিল। চিঠি লেখা হয়েছিল উর্দুতে। রবীন্দ্রের বাবা ছাড়া আর কেউ উর্দু পড়তে পারতেন না। উনার মৃত্যুর কিছুদিন পরে বাড়ির কোন সদস্য হাতে ওই চিঠিতে আসে। তিনি পাড়ার একটি লোককে দিয়ে উর্দু ওই চিঠিটি পড়ান। তখনই জানা যায় রবীন্দ্র কৌশিক পাকিস্তানের শিয়ালকোট জেলে আছেন এবং তাকে ফাঁসির সাজা শোনানো হয়েছে। এরপর বাড়ির লোকেরা দিল্লিতে ছোটাছুটি করেন। স্বরাষ্ট্র সচিবসহ বিভিন্ন জায়গায় দেখা করেন। কিন্তু ভারত সরকার রবীন্দ্র কৌশিককে কোনরকম সাহায্য করতে অস্বীকার করে।
এরপরেও শিয়ালকোট জেল থেকে আরও চিঠি আসতে থাকে। রবীন্দ্র কৌশিক লেখেন “ভারত সরকার আমার জন্য কিছুই করলো না। আমেরিকার সরকার হলে তিন দিনের মধ্যে আমাকে মুক্ত করে নিয়ে চলে যেত। হয়তো ভারত সরকারের কোনও কাজে এখন আর আমি আসবো না, তাই আমার দেশের সরকার আমার সঙ্গে এই রকম ব্যবহার করছেন। কিন্তু আমি দেশভক্তি ছাড়বো না। যেটা প্রতিজ্ঞা করেছিলাম সেটাই রাখবো। আমার জান চলে গেলেও ভারতের কোন তথ্য ফাঁস হবে না। “
থেমে থাকেননি মা অমলা দেবী। ছেলেকে ফিরিয়ে আনতে একের পর এক চিঠি লিখে গেছেন, কখনো পররাষ্ট্র মন্ত্রকে , কখনও প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপায়ী, বিজেপি নেতা এল কে আডবাণী বা যশোবন্ত সিংকে। প্রধানমন্ত্রীকে লেখা এক চিঠিতে অমলা দেবী বলেছিলেন,“সরকারের কেউ না রবীন্দ্রকে ছাড়িয়ে আনবার ব্যাপারে বিচলিত, না আমাদের সান্ত্বনা দিয়ে দু’চার কথা বলছে। এমনকি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সাহায্যও আমরা পাচ্ছি না।”
অমলা দেবীর বারংবার পাঠানো চিঠির জবাবে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জবাব ছিলো নির্মমভাবে সংক্ষিপ্ত- “বিষয়টি পাকিস্তানের হাতে চলে গেছে ‘।
এই সময় যখন রবীন্দ্র কৌশিক শিয়ালকোট জেলে ছিলেন তখন গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে দুজন গ্রেফতার হন। এরা হলেন কায়ামত রাহি আর গোপাল দাস। তারা শিয়ালকোট জেলে পৌঁছলে রবীন্দ্র কৌশিকের ব্যাপারে জানতে পারেন। তখন রবীন্দ্র কৌশিকের শারীরিক অবস্থার ক্রমশ অবনতি হচ্ছে। ওনার শরীরের যক্ষা দেখা দিয়েছে। পরে কায়ামত রাহি ছাড়া পেয়ে গেছিলেন এবং রবীন্দ্র কৌশিকের জেল জীবনের কাহিনী শুনিয়েছিলেন।। কায়ামত রাহিকে তিনি কিছু চিঠি দিয়েছিলেন এবং তাঁর স্ত্রী এবং সন্তানের ছবিও দিয়েছিলেন। সেগুলো তার পরিবারের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য। যাতে তাঁরা তাঁকে চিনতে পারেন এবং কোনও ব্যবস্থা করেন।
১৬ বছর কারাভোগের পর ২০০১ সালের ২১ নভেম্বর মুলতানের নিউ সেন্ট্রাল জেলে ফুসফুস ও হৃদযন্ত্রের জটিলতায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন রবীন্দ্র কৌশিক। কারাগারের পেছনেই কবর দেওয়া হয়। কেননা পাকিস্তানিদের হিসেবে উনি নবী আহমেদ সাকির ছিলেন, রবীন্দ্র কৌশিক নন। সেজন্যেই তাকে মুসলিম প্রথা মেনে কবর দেওয়া হয়। মৃত্যুর তিন দিন আগে রবীন্দ্র কৌশিক শেষ চিঠি লেখেন পরিবারের উদ্দেশ্যে। সেই চিঠিতে তার অভিযোগ ছিল, “যে দেশের জন্য আমি এত কিছু করেছি। সেই দেশের এখন আর আমি কোন কাজে আসব না বলেই আমাকে তারা ছেড়ে দিল মৃত্যুর মুখে।” কৌশলগত কারণে তাঁর লাশ ফিরিয়ে আনার জন্যও তৎপরতা দেখায়নি ভারত সরকার।
ব্ল্যাক টাইগারের মৃত্যুর পর সান্ত্বনার ছলে তাঁর পরিবারকে ভারত সরকার ৫০০ টাকা করে ভাতা দেওয়া শুরু করে, যেটি পরে বেড়ে ২০০০ টাকা হয়েছিলো। সেটিও বন্ধ হয়ে যায় ২০০৬ সালে । হৃদযন্ত্র বন্ধ হয়ে যায় রবীন্দ্রর মা অমলাদেবীরও! রবীন্দ্রর মৃত্যুর কিছুকাল পর তার স্ত্রী ও কন্যাসন্তানও বেমালুম নিখোঁজ হয়ে যায় ।
দেশের জন্য প্রাণ উৎসর্গ করে কিছুই মিললো না, এমনকি সব হারাবার পর সামান্য অর্থ সাহায্যও নয়-আফসোস হয় না? এমন প্রশ্নের জবাবে রবীন্দ্রর ভাই রাজেশ্বর বলেছিলেন,”টাকা নয়, তখন চেয়েছিলাম দাদাকে ফিরিয়ে আনতে, আর এখন চাই আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি। গোয়েন্দা চররাই যে নিরাপত্তা ব্যবস্থার আসল ভিত, এই স্বীকৃতিটুকু দিক রাষ্ট্র । … উর্দিপরা লোকেদের যদি সরকার সম্মানিত করতে পারে, তবে ছদ্মবেশী চরদের কেন নয় ?”
২০১২ সালে মুক্তি পাওয়া সলমান খান অভিনীত ছবি ‘এক থা টাইগার’ নাকি ব্ল্যাক টাইগারের জীবনী থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই নির্মিত, এমন গুঞ্জন থাকলেও ছবির নির্মাতারা কখনো এটি স্বীকার করেননি। এমনকি ছবির মূল চরিত্রের নাম ‘টাইগার’ হওয়াটা নিছক কাকতালীয় কিনা, এ প্রশ্নেরও সুরাহা হয়নি। তবে রবীন্দ্র কৌশিকের পরিবার শুরু থেকেই দাবি করেছিলো, ‘ব্ল্যাক টাইগার’ থেকেই ‘টাইগার’-এর সৃষ্টি! তাই অনুমতি প্রসঙ্গে নির্মাতাদের কাছে উপেক্ষিত রবীন্দ্র-পরিবারের আপত্তিও কম ছিলো না। এক সময়ের ভারতীয় গোয়েন্দাপ্রধান মলয় কৃষ্ণ ধরের লেখা ‘মিশন টু পাকিস্তান’ উপন্যাসের মুখ্য চরিত্রটি রবীন্দ্রের ছায়ায় রচিত। সেখানে অবশ্য লেখক রবীন্দ্রর স্বীকৃতি দিতে কার্পণ্য করেননি।
ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক এখন আরেকজনকে নিয়ে উত্তপ্ত, যার নাম কুলভূষণ যাদব। পাকিস্তানে ভারতীয় ‘গুপ্তচর’ হিসেবে আটক এই ব্যক্তির নাগরিকত্ব ভারত অস্বীকার না করলেও পাকিস্তানের আরোপিত অভিযোগকে শুরু থেকেই মিথ্যা বলছেন তারা। গত বছরের ডিসেম্বরে পরিবারের সদস্যরা পাকিস্তানে দেখা করতে গেলে, তাদের কাছে গুপ্তচরবৃত্তির কথা ‘স্বীকার’ করেন কুলভূষণ! এ ‘স্বীকারোক্তি’কে আবার অবিশ্বাস করছেন ভারতীয়রা। এমন অবিশ্বাস পাকিস্তানিদের ভেতরও দেখা গিয়েছিলো যখন গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে পাকিস্তানে আটক সর্বজিত সিংয়ের বোন দলবীর একা হাতে ‘নিরপরাধ’ ভাইকে মুক্ত করবার মিশনে নেমেছিলেন! সীমান্তের দু’পারেই কয়েদখানায় এসব ‘গুপ্তচর’ বাস করছেন এবং কোনো পক্ষই কখনো নিজেদের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগকে স্বীকার করেনি।