নিভে গেল সন্ধ্যা-প্রদীপ। চলে গেলেন ‘গীতশ্রী’ সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। মঙ্গলবার সন্ধে সাড়ে ৭টা নাগাদ কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। বাংলা গানের স্বর্ণযুগের শিল্পীদের শেষ তারকা সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়।
আগেই একে একে চলে গিয়েছেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে, শ্যামল মিত্র, মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো প্রবাদপ্রতিম শিল্পীরা।
২৬ জানুয়ারি সন্ধে থেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন প্রবীণ এই সঙ্গীতশিল্পী। শৌচাগারে পড়ে গিয়ে তিনি চোট পান। সেইসঙ্গে দেখা দেয় শ্বাসকষ্টের সমস্যা। পর দিন গ্রিন করিডোর করে তাঁকে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তাঁর চিকিৎসার জন্য গঠন করা হয়েছিল বিশেষ মেডিক্যাল বোর্ডও।
এসএসকেএমে তাঁর কোভিড ধরা পড়ে। উডবার্ন ওয়ার্ডে কোভিভের চিকিৎসা হয় না। তাই গ্রিন করিডর করে তাঁকে বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তাঁর চিকিৎসা চলছিল। ক্রমশ সুস্থ হয়ে উঠছিলেন তিনি। কিন্তু মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। ব্যর্থ হয়ে যায় চিকিৎসকদের সমস্ত চেষ্টা।
সন্ধ্যার মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কোভিড থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন। আমরা যকৃতের চিকিৎসকে পাঠাব বলে ঠিক করেছিলাম। তখন জানতে পারলাম উনি আর নেই। এতো তাড়াতাড়ি চলে যাবেন, তা ভাবতে পারিনি। কী যে হয়ে গেল! উনিই শেষ সুরের ঝঙ্কার, সুরের স্পন্দন, গানের ইন্দ্রধনু। ওঁর গাওয়া কত গান মনে পড়ছে এখন।”
মুখ্যমন্ত্রী জানান, “বুধবার ১২টার সময় তাঁর দেহ রবীন্দ্র সদনে রাখা হবে। ৫টা পর্যন্ত সেখানে শেষ শ্রদ্ধার জন্য দেহ শায়িত রাখা হবে। এর পর রাজ্যের সর্বোচ্চ সম্মান গান স্যালুট দিয়ে ওঁর শেষকৃত্য হবে।”
সন্ধ্যার জন্ম ৪ অক্টোবর ১৯৩১ সালে। দক্ষিণ কলকাতার ঢাকুরিয়ায়। নরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় এবং হেমপ্রভা দেবীর কন্যা সন্ধ্যা ছিলেন ছয় সন্তানের মধ্যে কনিষ্ঠ। সন্ধ্যার বাবা নরেন্দ্রনাথ ছিলেন কৃষ্ণভক্ত। বাবার কাছেই তাঁর প্রথম গান শেখা।
১৯৪৩ সালের ৫ ডিসেম্বর। তখন সন্ধ্যার বয়স মমাত্র ১২ বছর। অল বেঙ্গল মিউজিক কনফারেন্সের সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় ভজন বিভাগে প্রথম হয়েছিলেন সন্ধ্যা।
১২ বছর বয়সেই কলকাতা আকাশবাণীর ‘গল্পদাদুর আসর’-এ প্রথম গেয়েছিলেন তিনি। রেডিয়োয় প্রথম পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন পাঁচ টাকা। ১৩ বছর ১০ মাস বয়সে প্রথম বেসিক রেকর্ড। এইচএমভি থেকে প্রকাশিত।