সুতপা সরকার, বারাসত : কৌলিন্য হারানো বারাসাত বিদ্যাসাগর ক্রীড়াঙ্গনকে ঘিরে এখন হাজারো প্রশ্ন। স্টেডিয়ামের চারদিকে ইট, বালি , পাথরের স্তুপ । ফুটবলের জন্য খ্যাতি ছিল বারাসাত বিদ্যাসাগর ক্রীড়াঙ্গনের । এখন মাঠের চারপাশে ছোটো বড় পাথর ও বালির ছড়াছড়ি ।যে মাঠে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়দের ভিড় দৈনন্দিন লেগে থাকত, সেখানে সারিবদ্ধ ঢালাই যন্ত্রের পাশে রাজমিস্ত্রীদের ভিড় । দীর্ঘদিন ধরে ফুটবল সহ সব খেলাই বন্ধ । জেলার ক্রীড়াপ্রেমীরা বড় মাপের খেলা দেখার জন্য যে বারাসাত স্টেডিয়ামের দিকে তাকিয়ে থাকতেন, সেই যমাঠে কবে আবার খেলা হবে, তা আপাতত কারোরই জানা নেই । দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকরা নিশ্চিত ভাবে বলতে পারছেন না, কবে আবার কোনো খেলার দায়িত্ব পাবে বারাসাতের বিদ্যাসাগর ক্রীড়াঙ্গন।
বিদ্যাসাগর ক্রীড়াঙ্গনে দেড় দু বছর আগেও বিভিন্ন ফুটবল প্রতিযোগিতা যেমন আই লিগ , কলকাতা লিগ , আইএফএ শিল্ড লেগেই থাকত । প্র্যাকটিস করতে দেখা গেছে এটিকের মত দলকেও । আই এফ এ শিল্ডে দুবছর আগেও বিদেশ থেকে আসা বিভিন্ন নামী দলের খেলোয়াড়রা দর্শকদের মাতিয়েছেন । অথচ আচমকাই যেন বিদ্যাসাগর ক্রীড়াঙ্গনে অন্ধকার নেমে এসেছে।
বারাসাতের স্টেডিয়াম ও মাঠ ঘিরে এরকম অব্যবস্থা আগে দেখেননি এখানকার মানুষ । বারাসতের বিদ্যাসাগর ক্রীড়াঙ্গনকে নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল কয়েক বছর আগেই । প্রচুর টাকা খরচ করে এই মাঠে বসানো হয়েছিল কৃত্রিম ঘাস । কিন্তু পৃথিবীর সর্বত্র বড়মাপের ফুটবল প্রতিযোগিতা কার্যত ঘাসের মাঠে হওয়ায় অ্যাস্ট্রোটার্ফ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে থাকে।
অনূর্ধ্ব -১৭ ফুটবল বিশ্বকাপের আগে যুবভারতী অ্যাস্ট্রোটার্ফ থেকে ঘাসের মাঠে পাল্টাতেই কুড়ি কিলোমিটার দূরের বারাসাত মাঠ ব্রাত্য হয়ে পড়ে । তাও জাতীয় স্তরে দু একটি ম্যাচ করার দায়িত্ব পাচ্ছিল । কিন্তু খেলোয়াড়দের চোট আঘাত বাড়তে থাকায় কৃত্রিম ঘাসের এই মাঠে বড় খেলা আর হয় না। আইএফএ এবং বড় দলগুলির কল্যাণী স্টেডিয়ামই বেশি পছন্দের মাঠ।
এখন মাঠের দায়িত্ব বর্তেছে বারাসাত পৌরসভার ওপর । পুরসভার চেয়ারম্যান সুনীল মুখার্জি জানাচ্ছেন, আরও সময় লাগবে। কিন্তু সেই সময়টা কতদিনের, তা স্পষ্ট করে জানাতে পারেননি পুরপ্রধান।
বারাসাত স্টেডিয়াম নিয়ে এই অচলাবস্থা কবে কাটবে , তা বলতে পারছেন না এলাকার বিধায়ক চিরঞ্জিত চক্রবর্তীও । তবে চিরঞ্জিত এবং পৌরসভার চেয়ারম্যান সুনীল মুখার্জি দুজনেই জানিয়েছেন, অ্যাস্ট্রোটার্ফ সরানো হবে না। তবে গ্যালারি ও স্টেডিয়ামের সংস্কার করা হবে। খেলোয়াড়দের ড্রেসিং রুমেরও সংস্কার হবে । কিন্তু ঘাসের মাঠ হচ্ছে না। অতএব নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, অদূর ভবিষ্যতে বড় খেলার দায়িত্ব পাবে না বারাসাত। তাই সেজে উঠলেও আগামী দিনে এই মাঠে দেখা যাবে না এটিকে , মোহনবাগান বা ইস্টবেঙ্গলের মত বড় দলকে।