অজিত মুখোপাধ্যায়
১৯৭০-৭১। পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে শুরু হলো বিরোধ। ইয়া ইয়া খানের অত্যাচারে জর্জরিত পূর্ব-পাকিস্তান। অসহায় মানুষের ওপর আরম্ভ হল অকথ্য অত্যাচার। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও যুবক-যুবতীরা নির্যাতিত হতে লাগলো। গোলা- গুলি বারুদের গন্ধে আকাশ-বাতাস বিষাক্ত হয়ে উঠলো। খাদ্যের বদলে গুলি, সংগীতের বদলে কান্নার রোল ভেসে আসতে লাগলো। ঘরে ঘরে হাহাকার। ইয়া ইয়া খানের সঙ্গে যোগ দিল ঘর শত্রু বিভীষণ রাজাকার।
বাঙালি বিপন্ন, বাংলা ভাষা বিপন্ন। চারিদিক অন্ধকার আর বারুদের গন্ধ। হাজারে-হাজারে যুবক শহীদ হলো। চারিদিকে শুধু অন্ধকার আর অন্ধকার। কে দেখাবে আলো? ঢাকার রমনার মাঠে অগ্নিশিখার মতো জ্বলে উঠল মুজিবুর রহমানের দৃপ্ত কন্ঠস্বর। লাখো লাখো মানুষ স্বাধীনতা আন্দোলনে আত্মাহুতি দিতে লাগলো। ভারতবর্ষ, ওইসব শহিদের পাশে দাঁড়াল।
অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠল পূর্ব পাকিস্তান। ইয়া ইয়া খানের অত্যাচার দিন দিন বাড়তে লাগল। এই স্বাধীনতা আন্দোলনের পেছনে আকাশবাণী সংবাদ বিভাগের বেশ বড় একটা ভূমিকা ছিল।
উপেন তরফদার, প্রণবেশ সেন, নির্মল সেনগুপ্ত ও দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিদিন উজ্জীবিত করে তুলতো আন্দোলনকারীদের। প্রণবেশ সেন, নির্মল সেনগুপ্তের লেখা পাঠ করতেন দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়। ভুল বললাম ওদের দুজনের অসাধারণ লেখাকে জীবন্ত করে তুলতেন। দেবদুলালের আবেগপূর্ণ কণ্ঠস্বর মানুষের প্রাণে আবেগ এনে দিত।
উপেন তরফদার প্রযোজিত ‘সংবাদ বিচিত্রা’ এক কথায় ছিল অতুলনীয়, নির্মল সেনগুপ্ত ও প্রণবেশ সেনের স্ক্রিপ্ট ও দেবদুলালের কণ্ঠস্বরে ‘সংবাদ বিচিত্রা’-র শ্রোতাদের মন ভরিয়ে দিত।
(চলবে)