অজিত মুখোপাধ্যায়
দেবদুলাল একজন ভালো আবৃত্তিকার ছিলেন। তার প্রতিফলন আমরা অনুভব করতাম তাঁর নিউজ রিডিং-এর মাধ্যমে। তাঁর এই অসাধারণ দক্ষতার জন্য তিনি পদ্মশ্রীও পেয়েছিলেন। প্রণবেশ সেনের লেখার হাত খুবই ভাল ছিল। তিনি কত সংখ্যক সমীক্ষা লিখেছিলেন, তা গুনে বলা যাবে না।
“বাংলাদেশ বেতার” প্রচারিত হত পার্ক স্ট্রিটের কোনও একটি গোপন স্থান থেকে। লাখো লাখো শহিদের বিনিময়ে একদিন সফলতা এলো। মুজিবর রহমানের নেতৃত্বে পূর্ব পাকিস্তান হয়ে গেল “বাংলাদেশ”।
আমার মনে আছে ইন্দিরা গান্ধী যেদিন পার্লামেন্টে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিলেন, তার ঠিক সাতদিনের মধ্যে আমি একটি নাটক প্রযোজনা করছিলাম, নাম-“আলোয় ফেরা”, রচনা-বসন্ত ভট্টাচার্য। অভিনয়ে সত্য বন্দ্যোপাধ্যায়, শুক্লা বন্দ্যোপাধ্যায় ও জগন্নাথ বসু। নাটকটি ডকুমেন্টারে ছিল ভরপুর।যথা-ঢাকার রমনার মাঠে মুজিবুর রহমানের বক্তৃতার অংশ, পার্লামেন্টে ইন্দিরা গান্ধীর বাংলাদেশের স্বীকৃতি দান, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে-“ও আমার দেশের মাটি”। ইয়া ইয়া খাঁ- কে ব্যঙ্গ করে গুণীজনের সমবেত সঙ্গীত। আর ছিল উপেন তরফদারের “সংবাদ বিচিত্রা”র অংশ, যেটা লেখা ছিল প্রণবেশদার আর কণ্ঠ ছিল দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের। প্রবাদ প্রতিম উপেন তরফদার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ৮৪ বছর বয়সে। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের ওপর লেখা ‘একাত্তরের উত্তাল দিনগুলি’ প্রকাশিত হয় বাংলাদেশ থেকেই।
যাই হোক, আজ আমার বিষয় – উপেন তরফদার। ১৯৫৬ সালে All India Radio তে তাঁকে পেয়েছিলাম stenographer হিসাবে। এর কয়েক মাসের জন্য প্রোগ্রাম সেক্রেটারি, অবশ্য কাজ করতো নিউজ রুমেই। তারপর প্রোডিউসার- সংবাদ বিচিত্রা। এই পদে ওঁর সাফল্য বলা নিষ্প্রয়োজন। এরপর Asstt. Station Director হয়ে পূর্ব ভারতের কোনও একটা Radio Station-এ চলে যায়, তারপর দূরদর্শনে chief Producer সবস্তরেই ছিল ওঁর সাফল্য। ১৯৯১ সালে আমি, প্রণবেশদা, উপেন একসঙ্গে তিন মাসের জন্য পুনে ট্রেনিংয়ে যাই। সেটা ছিল দূরদর্শনে আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়।
(চলবে…)