পুলক মিত্র
কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে বাতিলের খাতায় চলে গিয়েছিল যে সংস্থাটি, বাইপাস লাগোয়া সেই বেঙ্গল কেমিক্যালই এখন রাতারাতি খবরের শিরোনামে। সৌজন্যে করোনা ভাইরাস। ভারত তো বটেই, করোনা প্রতিরোধে চিকিৎসকরা হাইড্রক্সি-ক্লোরোকুইন ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন। করোনায় মৃত্যুমিছিল ঠেকাতে ভারতের কাছে হাইড্রক্সি-ক্লোরোকুইন চেয়ে পাঠিয়েছেন নিরুপায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই ওষুধ না দিলে ভারতকে দেখে নেওয়ারও হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প। হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের রফতানির ওপর আগেই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল কেন্দ্র। মার্কিন প্রেসিডেন্টের হুমকির পর এখন সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে।
দেশবিদেশে এখন হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের চাহিদা তুঙ্গে। দেশের মধ্যে বেঙ্গল কেমিক্যালই একমাত্র প্রতিষ্ঠান, যারা এই বিপুল চাহিদা মেটাতে পারে। বেঙ্গল কেমিক্যালের ম্যানেজিং ডিরেক্টর পি এম চন্দ্রাইয়া জানিয়েছেন, হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন তৈরির জন্য যে সব উপাদান ( যাকে ইংরেজিতে বলে Active Pharmaceutical Ingredient বা API) প্রয়োজন,দেশে তার ঘাটতি রয়েছে। তবুও এই মুহুর্তে ১০ লক্ষ হাইড্রক্সি-ক্লোরোকুইন ট্যাবলেট উৎপাদনের ক্ষমতা রয়েছে বেঙ্গল কেমিক্যালের। এখানে বলে রাখা প্রয়োজন, হাইড্রক্সি-ক্লোরোকুইনের উপাদান বা API-এর ৮০ শতাংশ আসে চিন থেকে। আর এই চিনকেই করোনা ভাইরাসের আঁতুরঘর হিসেবে দুষছে গোটা দুনিয়া।
করোনায় ইতিমধ্যে মৃত্যুর সংখ্যা ৭৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। আক্রান্ত প্রায় ১৩ লক্ষ। ইতালি, স্পেন,ফ্রান্স, জার্মানি থেকে আমেরিকা, সর্বত্র মৃত্যু মিছিল, মানুষের হাহাকার। তুলনামূলকভাবে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশ ভারতে এখনও পর্যন্ত করোনা নিয়ন্ত্রণে। আক্রান্ত অনেকেই সুস্থ হয়ে উঠছেন। তাই একরকম বাধ্য হয়েই ভারতের শরণাপন্ন হয়েছেন দিশাহারা মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
এখনও পর্যন্ত করোনার কোনও প্রতিষেধক বেরোয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন , এই প্রতিষেধক আবিষ্কার করতে সময় লাগতে পারে এক থেকে দেড় বছর। তাহলে উপায়? চিকিৎসকরা ম্যালেরিয়ার ওষুধ হিসেবে পরিচিত হাইড্রক্সি-ক্লোরোকুইন প্রয়োগ করে ভালো ফল পাচ্ছেন, যদিও এটি করোনার ওষুধ নয়। রাজ্যে যে সব করোনা রোগী ইতিমধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন,তাদের ওপর এই ওষুধ ব্যবহার করে সুফল মিলেছে। বিশ্বের লাখো লাখো মানুষের প্রাণ বাঁচাতে পারে এই হাইড্রক্সি-ক্লোরোকুইন, এমন একটা ধারণা তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি এই ওষুধ ব্যবহারের পক্ষে মত দিয়েছে Indian Council of Medical Research বা ICMR ।
গত বছরের জুলাইয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় প্রতিষ্ঠিত শতাব্দী প্রাচীন বেঙ্গল কেমিক্যালের বিলগ্নিকরণের কথা ঘোষণা করেছিল।
অথচ ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে এই সংস্থার মুনাফার পরিমাণ ছিল ২৫ কোটি টাকা, যা এক সর্বকালীন রেকর্ড। শিল্পবিমুখ বাঙালিকে পথ দেখাতে ১৯০১ সালে মাত্র ২৩,৩৭১ টাকা মূলধন নিয়ে দেশের প্রথম ওষুধ সংস্থার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়। লোকসানে চলতে থাকায় ১৯৭৭ সালে এটির জাতীয়করণের সিদ্ধান্ত কেন্দ্র। ১৯৯২-এ সংস্থাটি বিআইএফআরে চলে যায়। ২০০৭-এর পর থেকে মেলেনি কোনও কেন্দ্রীয় সাহায্য। বিশ্বজুড়ে করোনা ত্রাসের মুখে এখন কি বেঙ্গল কেমিক্যালকে তার পুরনো মর্যাদায় ফিরিয়ে আনবে কেন্দ্র?