হোমঅন্যান্যকলকাতার শিকলে বাঁধা শিব

কলকাতার শিকলে বাঁধা শিব

কলকাতার শিকলে বাঁধা শিব

বৃষ্টি দে: শিব নাকি মন্দির ছেড়ে গঙ্গার ধারে ঘুরতে যেতেন! মন্দিরে এসে পুরোহিত দেখেন তিনি নেই। খোঁজ খোঁজ রব উঠল, কোথায় গেলেন দেবাদিদেব মহাদেব? অবশেষে খোঁজ মিলল। পুরোহিতের তো মাথায় হাত! তিনি দেখলেন, বাবা মহাদেব গঙ্গার ধারে হাওয়া খাচ্ছেন। কি আর করা যাবে, তাঁকে ধরে এনে বেঁধে রাখা হল শিকলে। আর সবচেয়ে বড় কথা, আজও তিনি বাঁধা আছেন শিকলে।

কলকাতা জুড়ে কত যে গল্প, কত যে ইতিহাস এখানে ওখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে, তার খবর আমরা রাখি বা কয়জন! এমন নয় যে সেই খবর আমি খুব রাখি। এক বিকেলে গঙ্গার পাড়ে বেড়াতে গিয়ে উত্তর কলকাতার গলি দেখার সাধ জাগল। হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে যাই গলি তস্য গলির ভিতর। আর সেখানেই মোটা মহাদেবের সঙ্গে দেখা। ঢুকে পড়লাম মন্দিরের ভিতরে। আর চমকে চমকে উঠলাম, এক টুকরো ইতিহাসের সামনে দাঁড়িয়ে।

অনেক ঐতিহাসিক গুরুত্ব আর কাহিনী লুকিয়ে আছে এই মন্দির এবং তাঁর দেবতার সঙ্গে। আমার জানাও হয়ত সব নয়। হয়ত আরও আছে। তবুও যেটুকু জানলাম সেটুকুই লিখলাম।

আহিরিটোলা এবং নিমতলার মাঝে ১৬ মহম্মদ রমজান লেনের দুর্গেশ্বর শিব মন্দির। সকলের কাছে মোটা মহাদেব মন্দির। এই নামেই এলাকায় মন্দিরটি সঙ্গে এই মন্দিরে পুজিত এই দেবতা। অদ্ভুত এক সৃষ্টি। মন্দিরের প্রাচীনত্ব প্রমানণ করে মন্দিরের চূড়োয় জন্মানো বটগাছ। যার শিকড় , শিবের জটার মতো মন্দিরটিকে জড়িয়ে রেখেছে চারপাশ থেকে। যেন বাবা মহাদেব তাঁর আলিঙ্গনে জড়িয়ে রেখেছে মন্দিরটিকে।

পুরো এলাকাটি একসময় ছিল হাটখোলার দত্ত পরিবারের। সেই দত্ত পরিবারের রসিকলাল দত্ত এবং জহরলাল দত্ত এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা। ব্রিটিশ আমলে এই পরিবার ছিল কলকাতার এক গণ্যমান্য অভিজাত পরিবার।

১৭৯৪ সালে নির্মিত এই মন্দির। ৫০ ফুট উচ্চতার এই মন্দির বাংলার আটচালা আদলে তৈরি। টেরাকোটার তৈরি এই মন্দিরের তিনটি দরজা। এ তো গেল মন্দিরের বর্ণনা। এবার একটু বিগ্রহের কথা বলা যাক।
মন্দিরের বিগ্রহ শিবলিঙ্গ লম্বায়১০ ফুট। যেটা ব্ল্যাক স্টোন দিয়ে তৈরি। এত লম্বা মূর্তিতে দুধ এবং জল ঢালতে হলে লোহার সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হয় পূজারী এবং ভক্তদের।

তবে এই মন্দির এবং বিগ্রহ আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণে বিখ্যাত। কথিত আছে, এই মন্দিরের শিব নাকি নিজের জায়গা ছেড়ে মাঝে মাঝে সরে যান। আর শিব যাতে পালিয়ে যেতে না-পারেন তার জন্য তাঁকে মোটা চেন দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। এমন অদ্ভুত বিশ্বাস এবং ভক্তি নিয়ে মানুষ ছুটে যান এই মন্দিরে।

তবে জানা গেছে, কোনও রাগ বা ক্ষোভে মহাদেব জায়গা থেকে সরে যেতেন না। মূর্তির সরে যাওয়ার আসল কারণ হল গঙ্গা। আগে মন্দিরের ধার ঘেঁষে গঙ্গা বয়ে চলত। আর জোয়ার এলে জল মন্দিরের ভিতর ঢুকে ধাক্কা দিত শিবলিঙ্গের গায়ে। ফলে, স্থান পরিবর্তন হত বিগ্রহের। কিন্তু ভক্তের মন, আর বিশ্বাস বলে এ নাকি ভগবানের লীলা!

spot_img
spot_img

সবাই যা পড়ছেন

spot_img