অভিজিৎ, নিউজডেস্কঃ কলকাতা আর লন্ডন। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের দুই প্রাণকেন্দ্রও বটে। জানেন কি, এই দুইয়ের মধ্যেই এককালে বাস চলাচল করত! খুব বেশি বছর আগেও নয়। কলকাতা ও লন্ডনের মধ্যে চলাচল করত একটি বাস। যাকে সবাই একডাকে ‘অ্যালবার্ট’ বলে চিনত। ডাবল ডেকার এই বাস দেখতে ছিল যেমন চমৎকার আর ভাড়াটাও নেহাত কম স্মার্ট ছিল না।পাউন্ডের হিসাবে ৮৫। আর তখন ভারতীয় মুদ্রায় এই ঐতিহাসিক বাসরুটের ভাড়া ছিল ৭,৮৮৯ টাকা। যাত্রীরা সেই সময় এতটা পরিমাণ অর্থ খরচ করেই এই বাসে জায়গা পেতেন।কয়েক জন যাত্রীর সেই বাস ধরার ছবি এখন সোশ্যাল সাইটে ভাইরাল। তার পরেই সামনে এল সেই বাসের ইতিহাস।
১৫ এপ্রিল ১৯৫৭ সালে ব্রিটেন ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে পরিবহন পরিষেবা চালু করার পরিকল্পনা নিয়ে যাত্রা শুরু হয় অ্যালবার্ট এর।’অ্যালবার্ট’ নামের ওই ডাবল ডেকার বাসটি শুধু লন্ডন-কলকাতা পর্যন্ত গিয়েছিল এমনটা নয়। কলকাতা থেকে অ্যালবার্ট পাড়ি জমিয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতেও। কলকাতা ও লন্ডনের মধ্যে অ্যালবার্টের ১৫টি ট্রিপ-এর রেকর্ড রয়েছে। আর লন্ডন থেকে সিডনি পর্যন্ত ৪টি ট্রিপ-এর রেকর্ডও রয়েছে। কোন পথে লন্ডন থেকে কলকাতায় আসত অ্যালবার্ট? সেই রুটটির তথ্যও সামনে এসেছে- লন্ডন থেকে যাত্রা শুরু করে প্রথমে বেলজিয়ামে প্রবেশ করত। সেখান থেকে পশ্চিম জার্মানি হয়ে বাসটি অ্যালবার্টের নেক্সট ডেস্টিনেশন থাকত অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা। এরপর একে একে যুগোস্লোভাকিয়া, বুলগেরিয়া, তুরস্ক হয়ে অ্যালবার্ট প্রবেশ করত ইরানে। সেখান থেকে আফগানিস্তানের ভিতর দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তান হয়ে ভারতীয় ভুখণ্ডে প্রবেশ করত অ্যালবার্ট। ভারতে প্রবেশ করার পর অ্যালবার্টের প্রথম স্টপ ছিল দিল্লি। এরপর আগ্রা। তারপরে ইলাহাবাদ এবং বেনারস। অবশেষে কলকাতায় এসে থামত অ্যালবার্ট। সম্প্রতি অ্যালবার্টের পরিষেবার একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে। যেখানে ভিক্টোরি স্টেশনের সামনে অ্যালবার্টকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে।
দোতলা বাসের একতলায় ছিল খাওয়ার জায়গা, পড়ার জায়গা। শোওয়ার জন্য ছিল বাঙ্ক। বাসের ভিতর গরম রাখার জন্য হিটারও ছিল। সেন্ট্রাল ওয়েস্টার্ল ডেইলি বলছে, ২১ বছর চলাচল করেছিল সেই বাস। শেষে একটি দুর্ঘটনার কারণে বাসটি যাত্রীদের সওয়ারির অযোগ্য হয়ে যায়। তখন সেটি কিনে নেন ব্রিটিশ পর্যটক অ্যান্ডি স্টুয়ার্ট। সময়টা ১৯৬৮ সালের মে।
বাসটিকে ছোটখাটো বাড়িতেই পরিণত করেন স্টুয়ার্ট। ১৯৬৮ সালেরই অক্টোবরে ১৩ জনের সঙ্গে সেই বাসে চেপে তিনি সিডনি থেকে ভারত ঘুরে লন্ডন যান। পথের দূরত্ব ছিল ১৬ হাজার কিলোমিটার। সিডনির মার্টিন প্লেসের জিপিও থেকে ৮ অক্টোবর বাসটি ছাড়ে। লন্ডন পৌঁছয় ১৩২ দিন পর। ১৯৬৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি। তার পরেও স্টুয়ার্ট ওই বাস নিয়ে নাকি ১৪ বাস লন্ডন থেকে সিডনি গেছেন বলে শোনা যায়।
লন্ডন থেকে ‘অ্যালবার্ট’–এর কলকাতা আসতে সময় লাগত ৪৯ দিন। জার্মানি, অস্ট্রিয়া বা প্যারিস, ভেনিস হয়ে বেলগ্রেড, ইস্তানবুল, সামসুন, তাবরিজ, তেহরান, মাশেদ, হেরাট, কাবুল, পেশোয়ার, লাহোর হয়ে অমৃতসর দিয়ে ভারতে ঢুকতে সেই বাস। ভারতে দিল্লি, আগ্রা, বারাণসীতে থেমে কলকাতা পৌঁছত। প্রায় দেড়শোরও বেশি সীমান্ত পেরোতে হত ‘অ্যালবার্ট’–কে। যদিও কখনওই নাকা চেকিং বা নজরদারিতে পড়তে হয়নি। কখনও সন্দেহও পড়েনি। যে সব দেশ পেরিয়ে আসত, সবার কাছে ‘বন্ধু–দূত’ বলেই পরিচিত ছিল সে।